ইসলাম

ইসলামে স্বামীকে ভাই বলার বিধান । স্বামীর নাম ধরে ডাকা যাবে কি ? মাওলানা শরিফ আহমাদ

ইসলামে স্বামীকে ভাই বলার বিধান কি? স্বামীর নাম ধরে ডাকা যাবে কি ?

 

 

প্রিয় বন্ধুরা । আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ । কেমন আছেন সবাই ? আশা করছি সকলে ভালো আছেন । আরো সুস্থ ও ভালো থাকুন এই কামনা রইল ।

আজ আপনাদের সাথে শেয়ার জীবন ঘনিষ্ঠ দুটি বিষয় । ইসলামে স্বামীকে ভাই বলার বিধান এবং স্বামীর নাম ধরে ডাকার প্রসঙ্গে । তো চলুন শুরু করা যাক।

 

ইসলামে স্বামীকে ভাই বলার বিধান কি?

ইসলামে স্বামীকে ভাই বলার বিধান । স্বামীর নাম ধরে ডাকা যাবে কি ?
ইসলামে স্বামীকে ভাই বলার বিধান । স্বামীর নাম ধরে ডাকা যাবে কি ?

মহিলাদের জন্য স্বামীকে ভাই বলে সম্বোধন করা ঠিক নয় । পক্ষান্তরে পুরুষদের জন্য মহব্বত করে স্ত্রীকে বোন বলাও অনুচিত । কেননা হাদীসে এমনটি করতে নিষেধ করা হয়েছে । হাদীসের দলীল দেখুন ।

عَنْ أَبِي تَمِيمَةَ الْهُجَيْمِيِّ، أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِامْرَأَتِهِ: يَا أُخَيَّةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أُخْتُكَ هِيَ؟ فَكَرِهَ ذَلِكَ وَنَهَى عَنْهُ

অনুবাদ: হযরত আবু তামিম‌ হুজাইমি রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । এক লোক তার স্ত্রীকে বোন বলে ডাকলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা শুনতে পেয়ে তা অপছন্দ করেন এবং তাকে এভাবে ডাকতে নিষেধ করেছেন । (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং ২২০৪)

 

সুতরাং এরকম স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ভাই বোন বলে ডাকা থেকে বিরত থাকতে হবে । তবে কেউ যদি পূর্বে এমনটি করে থাকে তাহলে কোন গোনাহ হবে না । বিবাহের ক্ষেত্রেও কোনো ক্ষতি হবে না । (আদ্দুররুল মুখতার ৬/৪১৮; ফাতহুল কাদীর ৪/৯১; আলবাহরুর রায়েক ৪/৯৮)

আরও পড়ুনঃ কোরবানী কার ওপর ওয়াজিব? 

যিহার থেকে সদা সতর্ক থাকতে হবে

 

আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যিহার কি ? নো চিন্তা । এটার কথাই এখন বলছি । যিহার একটা আরবী শব্দ । তা ইসলামী আইন শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয় । যার আক্ষরিক অর্থ আপনি আমার মায়ের মত । এই কথাটি তালাকের একটি পর্যায়ে পড়ে যায় ।

 

বিষয়টি আর একটু সহজ করে বুঝুন । কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে বোন সম্বোধন করে এই নিয়তে যে আমার বোন যেমন আমার জন্য হারাম তুমিও আমার জন্য হারাম , অথবা কোন অঙ্গের তুলনা দিতে গিয়ে যদি বলে এটি আমার মায়ের মত অর্থাৎ আমার মায়ের অঙ্গটি যেমন আমার জন্য হারাম তেমন তোমার এই অঙ্গটিও আমার জন্য হারাম । তাহলে এটাকে যিহার বলে । পবিত্র কোরআন কি বলছে দেখুন ।

اَلَّذِیۡنَ یُظٰہِرُوۡنَ مِنۡکُمۡ مِّنۡ نِّسَآئِہِمۡ مَّا ہُنَّ اُمَّہٰتِہِمۡ ؕ اِنۡ اُمَّہٰتُہُمۡ اِلَّا الّٰٓیِٴۡ وَلَدۡنَہُمۡ ؕ وَاِنَّہُمۡ لَیَقُوۡلُوۡنَ مُنۡکَرًا مِّنَ الۡقَوۡلِ وَزُوۡرًا ؕ وَاِنَّ اللّٰہَ لَعَفُوٌّ غَفُوۡرٌ

 

অনুবাদ: তোমাদের মধ্যে যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, তাদের স্ত্রীগণ তাদের মাতা নয়। তাদের মাতা কেবল তারাই, যারা তাদেরকে জন্মদান করেছে। তারা তো অসমীচীন ও ভিত্তিহীন কথাই বলে। নিশ্চয় আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল। (আল মুজাদালাহ্‌ – ২)

 

 

যিহারের কাফফারা কি ?

 

যদি কেউ তার স্ত্রীর সঙ্গে যিহার করে ফেলে এমতাবস্থায় স্ত্রী হারাম হয়ে যায় যতক্ষণ না স্বামী কাফফারা আদায় করে । আর যিহারের কাফফারা হলো ধারাবাহিক ভাবে দু মাস সিয়াম পালন করা বা ৬০ জন মিসকিনকে খাওয়ানো । আল্লাহ তাআলা বলেন-

 

وَالَّذِیۡنَ یُظٰہِرُوۡنَ مِنۡ نِّسَآئِہِمۡ ثُمَّ یَعُوۡدُوۡنَ لِمَا قَالُوۡا فَتَحۡرِیۡرُ رَقَبَۃٍ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّتَمَآسَّا ؕ ذٰلِکُمۡ تُوۡعَظُوۡنَ بِہٖ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

 

অনুবাদ: যারা তাদের স্ত্রীগণকে মাতা বলে ফেলে, অতঃপর নিজেদের উক্তি প্রত্যাহার করে, তাদের কাফফারা এই একে অপরকে স্পর্শ করার পূর্বে একটি দাসকে মুক্তি দিবে। এটা তোমাদের জন্যে উপদেশ হবে। আল্লাহ খবর রাখেন তোমরা যা কর। (আল মুজাদালাহ্‌ – ৩)

 

স্বামীর নাম ধরে ডাকা যাবে কি ?

 

স্ত্রী যদি স্বামীকে তুমি কিংবা নাম ধরে ডাকে এটা জায়েজ থাকলেও স্বামী মনে যদি কষ্ট পায় তাহলে এমনটি করা মাকরুহ ‌। স্বামীকে এমন নামে ডাকতে হবে যা দ্বারা তার সম্মান প্রকাশ পায় । যেমন: হে আমার সর্দার ,অমুকের আব্বু ইত্যাদি ।

কেননা হাদীস শরীফে এসেছে একবার এক নারী সাহাবী নবীজির কাছে এলেন নিজের কোন প্রয়োজনে । যাওয়ার সময় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন তোমার কি স্বামী আছে ? তিনি বললেন জী আছে । নবীজী বললেন তার সাথে তোমার আচরন কেমন ? সে বলল আমি যথাসাধ্য তার সাথে ভালো আচরণ করার চেষ্টা করি । তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন , হ্যাঁ তার সাথে তোমার আচরণের বিষয়ে সজাগ থাকো । কারন সে তোমার জান্নাত বা তোমার জাহান্নাম ।

(মুআত্তা মালেক, হাদীস নং ৯৫২; মুসনাদে আহমাদ, ৪/৩৪১ হাদীস নং ১৯০০৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস নং ২৭৬৯; সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস নং ১৪৭০৬)

 

লিখনে: মাওলানা শরিফ আহমাদ

ঢাকা ,বাংলাদেশ ।

 

ফেসবুকে আমাদের সাথে যুক্ত হতে ক্লিক করুন ৷ দৈনিক শিক্ষা নিউজ

Related Articles