ঘরোয়া চিকিৎসা

মাথা ব্যাথা দূর করার ঘরোয়া উপায় । মাথা ব্যথার দোয়া । মাওলানা শরিফ আহমাদ

মাথা ব্যাথা দূর করার ঘরোয়া উপায় । মাথা ব্যথার দোয়া ।

 

সুপ্রিয় পাঠক । শরীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যথা অনেক যন্ত্রণাদায়ক । বিশেষ করে মাথাব্যথা আরো বেশি কষ্টদায়ক । মাথা ব্যথার কারণে মানুষ স্বাভাবিক কাজকর্ম সম্পাদন করতে পারে না । সুস্থ সুন্দর ও আরামদায়ক জীবন যাপনে মাথাব্যথাসহ সব রকমের রোগ থেকে সুস্থ থাকা একান্ত প্রয়োজন।

 

আর এ জন্য ডাক্তারি চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক আমল বা দোয়াগুলোও পাঠ করা উচিত। আজ এখানে দুটি অধ্যায়ে অর্থাৎ প্রথমে কোরআনিক আমল এবং পরে ঘরোয়া পদ্ধতিতে মাথা ব্যাথা দূর করার উপায়গুলো উল্লেখ করবো । স্মরণ রাখবেন ডাক্তারি ওষুধে কাজ না হলেও নববী চিকিৎসা পদ্ধতিতে অবশ্যই কাজ হবে ইনশাআল্লাহ ।

 

মাথা ব্যাথা দুর করার কোরআনি আমল

 

মাথা ব্যাথার দূর করার দোয়া:

 

মাথায় ব্যথা অনুভূত হলে নিম্ন বর্ণিত আমল গুলো করুন । উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ ।

১. সূরা তাকাসুর আসরের নামাজের পর পাঠ করে মাথায় ফুঁক দিন । এটি ব্যথা উপশমের জন্য খুবই উপকারী একটি আমল ।

সূরা তাকাসুর এই–

اَلۡہٰکُمُ التَّکَاثُرُ ۙ حَتّٰی زُرۡتُمُ الۡمَقَابِرَ ؕ کَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ۙ ثُمَّ کَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ؕ کَلَّا لَوۡ تَعۡلَمُوۡنَ عِلۡمَ الۡیَقِیۡنِ ؕ لَتَرَوُنَّ الۡجَحِیۡمَ ثُمَّ لَتَرَوُنَّہَا عَیۡنَ الۡیَقِیۡنِ ۙ ثُمَّ لَتُسۡـَٔلُنَّ یَوۡمَئِذٍ عَنِ النَّعِیۡمِ .

(সূত্রঃ আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরী রহ:এর আমালিয়্যাতে কাশ্মীরি )

২. সূরা কাওসার সাতবার তেলাওয়াত করে ফুঁক দিলে মাথা ব্যথা ভালো হয়ে যায় ।

সূরা কাওসার এই–

اِنَّاۤ اَعۡطَیۡنٰکَ الۡکَوۡثَرَ ؕ فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَانۡحَرۡ ؕ اِنَّ شَانِئَکَ ہُوَ الۡاَبۡتَرُ .

( সূত্রঃ আমালিয়্যাতে কাশ্মীরি )

৩. মাথা ব্যথার জন্য এই আয়াতটি তেলাওয়াত করে ফুঁক দিলেও উপকার পাওয়া যাবে । ব্যাথার স্থানে হাত রেখে তিনবার পড়লেও নগদ ফলাফল পাওয়া যাবে ।

وَبِالۡحَقِّ اَنۡزَلۡنٰہُ وَبِالۡحَقِّ نَزَلَ ؕ  وَمَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا مُبَشِّرًا وَّنَذِیۡرًا ۘ

(বনী-ইসরাঈল – ১০৫,আমালিয়্যাতে কাশ্মীরি )

 

মাথা ব্যথায় যে দোয়া পড়বেন:

 

১. যে ব্যক্তির মাথাব্যথা হয়েছে অথবা অর্ধ মাথাব্যথা হয়েছে । নিম্নের আয়াতটি তিনবার পাঠ করে তার মাথায় তিনবার দম করলে আল্লাহর রহমতে ভালো হয়ে যাবে । আয়াতটি এই –

لَّا یُصَدَّعُوۡنَ عَنۡہَا وَلَا یُنۡزِفُوۡنَ

(সূরা ওয়াকিয়া আয়াত নং ১৯, আমালে কোরআনী পৃষ্ঠা নং ১৪৭ )

 

২. যদি কারো অর্ধমাথায় ব্যথা অনুভব হয় তাহলে দরুদ শরীফ শুরুতে এবং শেষে তিনবার পাঠ করে ১১ বা নিচের আয়াত তেলাওয়াত করে ফুঁক দিলে মাথা ব্যথা ভাল হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। আয়াতটি এই–

اَلَمۡ تَرَ اِلٰی رَبِّکَ کَیۡفَ مَدَّ الظِّلَّ ۚ  وَلَوۡ شَآءَ لَجَعَلَہٗ سَاکِنًا ۚ  ثُمَّ جَعَلۡنَا الشَّمۡسَ عَلَیۡہِ دَلِیۡلًا ۙ

(সূরা আল ফুরকান – ৪৫, আমালিয়্যাতে কাশ্মীরি)

৩. কারো অর্ধেক মাথা ব্যথা হলে নিচের আয়াতটি লিখে মাথায় বাঁধলে উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ ‌ ।

আয়াতটি এই –

کٓہٰیٰعٓصٓ. ۟ۚذِکۡرُ رَحۡمَتِ رَبِّکَ عَبۡدَہٗ زَکَرِیَّا ۖۚ.اِذۡ نَادٰی رَبَّہٗ نِدَآءً خَفِیًّا.

قَالَ رَبِّ اِنِّیۡ وَہَنَ الۡعَظۡمُ مِنِّیۡ وَاشۡتَعَلَ الرَّاۡسُ شَیۡبًا وَّلَمۡ اَکُنۡۢ بِدُعَآئِکَ رَبِّ شَقِیًّا .

( সুরা মারইয়াম, আয়াত ১–৪ )

 

মাথা ব্যাথা দুর করার ঘরোয়া চিকিৎসা

শরীরে ব্যাথা দূর করার দোয়া:

اَعُوْذُ بِعِزَّ ةِ اللهِ وَقُدْرَ تِهِ مِنْ شَرِّ مَااَجِدُ

বাংলা উচ্চারণ:-আউযুবি ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শার’রি মা আজিদু ,

হযরত উসমান (রাঃ) একবার ব্যাথার যন্ত্রনায় কাতড়াচ্ছিলেন। রাসূল বললেন, আপনি ডান হাত দিয়ে ব্যাথার স্থান বুলানোর সময় এই দোয়া সাতবার পড়ুন। ব্যাথা ধীরে ধীরে কমে যাবে। (সুনান আবু দাউদ,খন্ড-২ পৃষ্ঠা-৫৪৩)

 

ব্যথা দূর করার দোয়া:

 

শরীরের কোথাও ব্যথা হলে ব্যথার স্থানে হাত রেখে তিনবার সূরা লাহাব পড়ে ফুঁক দিতে হবে। নিয়মিত এই আমল করলে আরোগ্য লাভ হবে ইনশাআল্লাহ।

সূরা লাহাব এই–

تَبَّتۡ یَدَاۤ اَبِیۡ لَہَبٍ وَّتَبَّ ؕ.مَاۤ اَغۡنٰی عَنۡہُ مَالُہٗ وَمَا کَسَبَ ؕ.سَیَصۡلٰی نَارًا ذَاتَ لَہَبٍ ۚۖ .وَّامۡرَاَتُہٗ ؕ  حَمَّالَۃَ الۡحَطَبِ ۚ .فِیۡ جِیۡدِہَا حَبۡلٌ مِّنۡ مَّسَدٍ .

( সূত্রঃ আমালে কোরআনী)

 

মাথা ব্যাথা দুর করার  ঘরোয়া চিকিৎসা

 

 

মাথা ব্যথা কেন হয় ?

 

মাথা ব্যথা অনেক কারণ হতে পারে । যেমন কাজের চাপে বিশ্রাম না নেওয়া , ঘুম নিয়মিত না হওয়া , অতিরিক্ত টেনশন করা, শারীরিক অসুস্থতা ইত্যাদি ।

এই কারণগুলোর জন্য অনেক ক্ষেত্রে মাথা ভার হয়েও থাকে ।

মাথা ব্যাথা দুর করার ঘরোয়া চিকিৎসা

মাথা ব্যথা হলে করণীয় কি:

 

অনেক সময় বুঝতে পারবেন কি কারনে মাথা ব্যথা হচ্ছে ! বুঝতে পারলে এই সমস্ত উপায় ফলো করতে পারেন ।

১. ক্লান্তির কারণে যদি মাথাব্যথা হয় তাহলে মাথায় তেল মালিশ করার সঙ্গে সঙ্গে হালকা মেসেজ করুন ।‌ পুরো মাথা ও ঘাড়ের কাছে যদি খানিক আঙ্গুলের ডগা দিয়ে মেসেজ করেন বেশ উপকৃত হবেন ।‌

 

২. কম্পিউটারের স্ক্রিন ,ল্যাপটপ বা মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকুন । বাইরে থাকলে ভালো মানের চশমা ব্যবহার করুন ‌।

৩. অতিরিক্ত আলোর কারণে অনেক সময় মাথা ব্যাথা করে থাকে । তাই মাথা যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে ঘরের আলো কমিয়ে দিন কিংবা ঘুমানোর সময় বাতি নিভিয়ে দিন । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বাস্থ্য রক্ষার চারটি মূলনীতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তোমরা বরতন ঢেকে রাখবে, পানির কলসের মুখ বন্ধ করে রাখবে ,দরজার অর্গল বন্ধ করে রাখবে এবং (রাতে ঘুমানোর পূর্বে) চেরাগ নিভিয়ে দেবে ( সহীহ মুসলিম)

৪. ভালো মানের কোন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন । হাতের আশেপাশে থাকা বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে ওষুধ না খেয়ে একটু কষ্ট করে হলেও বিজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত ।

 

 

মাথা ব্যথার ঘরোয়া সমাধান :

 

১.মাথা ব্যথা দূর করার জন্য চা কফি খেতে পারেন ।

চা কিংবা মা কফিতে উপস্থিত ক্যাফিন মাথা যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে । আর রং চায়ের সঙ্গে আদা, লবঙ্গ ও মধু মিশিয়ে খেলে মাথা যন্ত্রণা আরাম পাওয়া যায় ।

২.আদা মাথার রক্তনালির প্রদাহ কমাতে সাহায্য করবে । এতে মাথা ব্যথা কমবে । একই পরিমান আদার রস ও লেবুর রস মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে ‌

৩. পুদিনা পাতায় আছে ম্যানথল ও ম্যানথন । এই উপাদান গুলো মাথাব্যথা দূর করার জন্য ভালো কাজ করে । পুদিনা পাতার রস এবং চা বানিয়ে খেলেও উপকৃত হওয়া যায় ।

৪. বরফের প্যাক প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে । পাশাপাশি এটি ব্যথা ও উপশম করে ।‌ বরফের প্যাক ঘাড়ে দেওয়া হলে মাইগ্রেনের ব্যথা অনেকটা উপশম হবে । বরফের টুকরা গামছা কিংবা তোয়ালে পেচিয়ে পানিতে ভিজিয়ে কিছু সময় মাথায় রাখলে ব্যথা কমে যেতে পারে । তবে যাদের সর্দি লেগেই থাকে তাদের এই কাজ থেকে বিরত হওয়া উচিত ।

 

মাথা ব্যথা ঔষধের নাম :

 

শেষ পর্যায়ে এসে মাথা ব্যথার কয়েকটি ওষুধের নাম দেওয়া হচ্ছে । সামান্য মাথা ব্যথা হলে এসব ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। অতিরিক্ত ব্যথা নাশক ওষুধ সেবনেও শরীর অসুস্থ কিংবা মাথাব্যথা হতে পারে । তাছাড়া ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয় ।

১. প্যারাসিটামল

মাথা ব্যাথার ঔষধ

২. এনিলিক

৩. আরিন

৪. লজরিন

৫. মিগ্রাটল

৬. মিগরেক্স

৭. মিনোপা

৮. মাইগান

৯. নামিটোল

১০. টলিফ

১১. টলমিক

১২. টাফনিল ইত্যাদি ।

 

 

 

গ্রন্থনা: মাওলানা শরিফ আহমাদ

ঢাকা, বাংলাদেশ ।