ইসলাম

শবে কদরের নামাজের নিয়ত ও নিয়ম। শবে কদরের আমল শবে কদরের দোয়া মাওলানা শরিফ আহমাদ

শবে কদরের নামাজ পড়ার  নিয়ত ও‌ নিয়ম

 

 

প্রিয় দীনি ভাই-বোনেরা । শবে কদর- ২০২২ এখন নাকের ডগায়। কদিন পরে আমরা পেতে যাছি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক শ্রেষ্ঠ একটি রাত । আমরা ঐ রাতে কিভাবে কতটুকু সময় কি ইবাদাত করবো তার একটা প্ল্যান থাকা প্রয়োজন । কেননা প্ল্যানিং করে এগিয়ে গেলে প্রত্যেকটি কাজে সফলতা আসে ।

 

প্ল্যানটি অর্থাৎ রুটিন আপনারা নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিবেন। সবার আগে রাখবেন নামাজ । আর সেই নামাজ কিভাবে পড়বেন ? কত রাকাত পড়বেন ? আপনাদের সেটা জানতে হবে। আপনাদের জানানোর লক্ষেই এ প্রয়াস ।‌ সুতরাং আর কথা না বাড়িয়ে চলুন এবার শুরু করা যাক।

 

 

শবে কদরের নামাজ কত রাকাত ?

 

সত্যি কথা বলতে কি শবে কদরের নির্দিষ্ট কোন নামাজ নেই । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম কেউ কোন নামাজ নির্ধারিত করে করে যাননি । তবে শবে কদরের ইবাদাত যেহেতু নফল তাই নফল নামাজের প্রতি আপনারা ‌মনোযোগী হতে পারেন । কেননা নামাজের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলার সাথে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যা অন্য কোন ইবাদতে হতে পারে না ।

 

আরো একটি সত্য বড়ো কথা হচ্ছে নফল নামাজের নির্ধারিত কোন বিশেষ নিয়ম বা নিয়ত নেই । অন্য সকল নামাজের মতই নিয়ত করে পড়তে হয় ‌। এ ব্যাপারে ইসলামী স্কলারগণ একমত ।‌ অন্য নামাজের কথা রেখে এবার নফল নামাজের নিয়ত কিভাবে করতে হয় তার সহীহ তরীকা দেখাবো এখন ।

 

 

শবে কদরের নামাজের নিয়ত

 

 

নিয়ত শব্দটির আভিধানিক অর্থ ইচ্ছা, সংকল্প, স্পৃহা ইত্যাদি ৷ আর শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি বিধানের ইচ্ছায় কোনও কাজের দিকে মনোনিবেশ করাকে নিয়ত বলে। নিয়তের গুরুত্ব সম্পর্কে কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য নির্দেশনা রয়েছে ৷

 

অন্তরে যে কোন ইবাদাত করার খেয়াল থাকলেই নিয়ত হয়ে যায় ৷ তবে মুখে উচ্চারণ করা ভালো ৷ খটকা দূর হয়ে যায় ৷ নিয়ত মুখে উচ্চারণ করলে আরবীতে করা যায় ৷ আরবীতে করা ফরজ কিংবা ওয়াজিব নয় । আপনারা এবার দুই রাকাত নফল নামাজের আরবী নিয়ত দেখুন-

 

নফল নামাজের আরবী নিয়ত

 

نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلَّهِ تَعَا لَى رَكْعَتِ صَلَوةِالْنَفْلِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِ يْفَةِ اَللَّهُ اَكْبَرُ

 

বাংলা উচ্চারণঃ

নাওয়াইতু আন উসল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতি সলাতিল নফলি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা ইলা জিহাতিল

কাবাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার ।

 

 

শবে কদরের নামাজের বাংলা নিয়ত

 

আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করছি আল্লাহু আকবার ।

 

বি:দ্র: আবারো বলছি এভাবে নিয়ত করাটা জরুরী নয় । নমুনা দেখিয়ে আপনাদের শুধু ধারণা দিতে চেষ্টা করলাম মাত্র । আপনারা এভাবে কিংবা নিজের মতো করে নিয়ত করে নফল নামাজ আদায় করতে পারবেন । আর শবে কদর যেহেতু নির্দিষ্ট নয় তাই নিয়তের সময় সেটা উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই ।

 

 

শবে কদরের নামাজ আদায় করার নিয়ম

 

নফল নামাজ আদায় করার জন্য প্রথমে আপনাদের

নাপাকি থেকে শরীরের পবিত্র করে নিবেন । তারপর পবিত্র কাপড় পরিধান করে নামাজের সময়ে পবিত্র স্থানে সোজা কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন ।‌ এবার নামাজের নিয়ত করবেন ।‌

 

অতঃপর আল্লাহু আকবার বলতে বলতে পুরুষ হলে নাভির নিচে হাত বাঁধবেন আর নারী হলে বুকের উপর হাত রাখবেন । পুরো নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায় দৃষ্টির সিজদার স্থান বরাবর রাখবেন । এরপর ছানা পড়বেন । ছানা হচ্ছে এই-

 

سبحانك اللهم وبحمدك، وتبارك اسمك وتعالى جدك، ولا إله غيرك.

হযরত আয়িশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামায শুরু করতেন তখন বলতেন,সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়াতাবারকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুক। ( আবু দাঊদ ৮৬০, মুসতাদরাকে হাকেম, ৮৬০)‌

তারপর আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়বেন । তারপর সূরা ফাতিহা পুরোটা পড়বেন এবং সূরা ফাতিহা পড়ার সময়ে প্রত্যেকটা আয়াত ওয়াকফ করে পড়বেন। সূরা ফাতিহার শেষে আমীন বলবেন ।

 

 

অতঃপর কুরআনে কারীমের যেকোন জায়গা থেকে‌ কিংবা উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সুরা থেকে একটি পাঠ করবেন । তারপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাবেন । রুকুতে গিয়ে সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম তিনবার, পাঁচ বার, সাতবার যত ইচ্ছা বেজোড় সংখ্যায় পড়বেন । তারপর সামিআল্লাহু লিমান হামিদা, রব্বানা লাকাল হামদ বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবেনা যেন প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আপন আপন স্থানে স্থির থাকে ।

 

তারপরে আবার আল্লাহু আকবার বলতে বলতে সিজদায় চলে যাবেন । এবং সিজদার তাসবিহ সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পাঠ করবেন । আবার আল্লাহু আকবার বলে উঠৈ বসবেন । দুই সিজদার মাঝখানে এই দোয়া পাঠ করবেন । হযরত হুযাইফা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রাতের নামাযে ) দুই সিজদার মাঝে (এই দুআ) পড়তেন- রাব্বিগফিরলী, রাব্বিগফিরলী।

( সুনানে ইবনে মাজাহ, ৮৯৭, নাসায়ী কুবরা,৬৬০ সহীহ ইবনে খুযাইমা ৬৮৪, মুসতাদরাকে হাকেম,১০০৩) তারপর আবার আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবিহ পাঠ করে আল্লাহু আকবার বলে সোজা দাঁড়িয়ে যাবেন ‌।

এভাবে প্রথম রাকাতের নিয়মে দ্বিতীয় রাকাত পূর্ণ করে বসবেন । তারপরে আত্তাহিয়াতু পাঠ করবেন।

 

আত্তাহিয়াতু বাংলায়

 

আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াসসলাওয়াতু ওয়াত্বত্বয়্যিবাতু, আসসালামু ‘আলাইকা আইয়ুহাননাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আসসালামু ‘আলাইনা ওয়া ‘আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহীন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু। ( সহীহ বুখারী, ১২০২,৬২৩০, সহীহ মুসলিম ৪০, ৪০২)

তারপরে দরুদ শরীফ এবং দোয়া মাসুরা পাঠ করে ডানে-বামে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন ।

এভাবে শবে কদরে যত রাকাত নামাজ পড়তে ইচ্ছে হয় দুই রাকাত করে পড়বেন । যদি ক্লান্তি লাগে তাহলে মাঝখানে বিরতি দিয়ে অন্য আমল করবেন । এনার্জি ফিরে এলে আবার নামাজ পড়া শুরু করবেন । এভাবে আপনাদের পূর্বে করা প্লানকে বাস্তবায়িত করবেন ।

 

বি: দ্র: বাজারে প্রচলিত অনেক ছোটখাটো বইয়ে কিংবা অনেক সাইটে ভুল তথ্যের ছড়াছাড়ি । তারা বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন কিছু নিয়ম-নীতি লিখে দিয়েছে । ওগুলো থেকে সাবধান ।

 

শবে কদরের দোয়া

 

হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা বর্ণিত । তিনি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করেছেন আমরা যদি লাইলাতুল কদর পাই তাহলে কি করবো ? উত্তরে তিনি বলেছেন,

اللهم انك عفو تحب العفو فاعفو عني

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী ।

অনুবাদঃ হে আল্লাহ তুমি পরম ক্ষমাশীল । ক্ষমা করাকে তুমি পছন্দ করো । কাজে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও ।

( ইবনে মাজাহ, হাদীস নং ৩৮৫০ জামে তিরমিজী, হাদীস নং ৩৫১৩)

 

 

 

শবে কদরের আমল‌

 

অনেকেই জানতে চান শবে কদরের নামাজ কয় রাকাত।  আপনারা যদি উপরের লেখা গুলো মনযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তবে আপনাদের মনে এখন আর এই প্রশ্নটি নেই। যেহেতু শবে কদরের জন্য স্পেশাল কোন নামাজ নাই । তাই শবে কদরের রাতে আমরা নফল নামাজ পড়তে পারি। আর নফল নামাজের রাকাত সংখ্যা নির্দিষ্ট নাই।

শবে কদরের আমল

আপনারা যত‌ রাকাত ইচ্ছে পড়তে পারেন।‌ আর সে নামাজ হতে পারে কাজা নামাজ, নফল নামাজ,শোকরের নামাজ, সালাতুল হাজত, সালাতুত তাসবীহ ,তাহাজ্জুদ , সালাতুত তাওবা ইত্যাদি ।

আপনারা আরো এই‌ আমলগুলো করতে পারেন ‌।

 

১. কোরআনুল কারীম তেলাওয়াত । পবিত্র কুরআন নিয়ম করে পড়ে খতমের চেষ্টা করা ‌। বিশেষ করে সূরা ইয়াসিন, সূরা আর রহমান, সুরা ওয়াকিয়া , সুরা মূলক, সূরা কাহাফ , সুরা হা-মীম সেজদা ,সূরা দুখান‌ পাঠ করা । পবিত্র কুরআন পড়তে না পারলে কারো‌ থেকে শোনা । এটাও সম্ভব না হলে ইখলাস বেশি বেশি পাঠ করুন ।

 

 

২. জিকির করা ।

 

অর্থাৎ

১. সুবহানাল্লাহ ২. আলহামদুলিল্লাহ

৩. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ৪. আল্লাহু আকবার

৫. সুবহানাল্লাহি ওবিহামদিহি

এই ধরণের জিকিরগুলো বেশি বেশি করতে পারেন ।

 

 

৩. ইস্তেগফার ।

 

বিভিন্ন রকম ইস্তেগফার আছে। সংক্ষেপে দু-একটি দেখুন-

 

১. ­ইস্তেগফার

 

اَللّٰهُمَّ اَنْتَ رَبِّيْ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنْتَ. خَلَقْتَنِيْ وَاَنَا عَبْدُكَ. وَاَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ. اَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ اَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ. وَاَبُوْءُ بِذَنْبِيْ فَاغْفِرْ لِيْ فَاِنَّهٗ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّاۤ اَنْتَ.

 

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রতিপালক, তুমি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। তুমিই আমার স্রষ্টা এবং আমি তোমার বান্দা। আমি তোমার সাথে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের উপর সাধ্যানুযায়ী অটল ও অবিচল আছি। আমি আমার সকল মন্দ কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার প্রতি তোমার অনুগ্রহের কথা স্বীকার করছি এবং আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করো কেননা তুমি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩০৬)

 

২.ইস্তিগফার

 

اَسْتَغْفِرُ اللهَ رَبِّيْ مِنْ كُلِّ ذَنْبٍ وَّاَ تُوْبُ اِلَيْهِ.

 

অর্থ: আমি আমার রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি সর্বপ্রকার গুনাহ থেকে এবং আমি তাঁর নিকট তওবা করছি। (আউনুল মা’বূদ)

আপনারা পড়ছেন শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত

৩. ইস্তিগফার

 

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْلِيْ. وَارْحَمْنـِـيْ. اَسْتَغْفِرُ اللهَ. اَسْتَغْفِرُ اللهَ. اَسْتَغْفِرُ اللهَ

 

অনুবাদ: হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করো এবং আমার প্রতি দয়া করো। আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই।

 

উল্লেখিত তিনটি ইস্তেগফার ছাড়াও আরো অসংখ্য ইস্তেগফার রয়েছে । যার কাছে যেটা সহজ মনে হয় সেটা বেশি করে পাঠ করতে পারেন ।

 

 

৪. বেশি বেশি দুআ করা ।

 

ইবাদতের মধ্যে নামাজের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হচ্ছে দুআ করা । অন্য হাদীসে ডাকে সমস্ত ইবাদতের মূল বলা হয়েছে ।‌‌ তাই ঐ রাতে দুআ করে আল্লাহর কাছে সবকিছু চেয়ে নেওয়া প্রয়োজন ।‌‌ দোয়া আরবী বাংলা কিংবা নিজস্ব ভাষায় নিজের মতো করে করা যায় । কোরআনে বর্ণিত কয়েকটি দোয়া ।

আল্লাহর রহমত কামনার জন্য পড়ুন

শবে কদরের মনাজাতঃ

رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِنْ نَسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِنَا رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا أَنْتَ مَوْلَانَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ.

 

অনুবাদ:হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছো ৷ হে আমাদের প্রভূ! এবং আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন করো ৷ আমাদেরকে ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি দয়া করো। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্যে করো ৷

( সূরা বাকারাহ: আয়াত নং ২৮৬)

 

কল্যাণকর সন্তান লাভের জন্য পড়ুন

২ নং মুনাজাতঃ

رَبَّنَا وَاجْعَلْنَا مُسْلِمَيْنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَا أُمَّةً مُّسْلِمَةً لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبْ عَلَيْنَا ۖ إِنَّكَ أَنتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ .

অনুবাদঃ হে পরওয়ারদেগার! আমাদের উভয়কে তোমার আজ্ঞাবহ করো এবং আমাদের বংশধর থেকেও একটি অনুগত দল সৃষ্টি করো ৷ আমাদের হজ্বের রীতিনীতি বলে দাও এবং আমাদের ক্ষমা করো। নিশ্চয় তুমি তওবা কবুলকারী। দয়ালু। ( সূরা বাকারাহ: আয়াত নং ১২৮)

 

নেককার লোকের সঙ্গী হতে পড়ুন

 

৩ নং মুনাজাতঃ

 

رَبَّنَا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَكَفِّرْ عَنَّا سَيِّئَاتِنَا وَتَوَفَّنَا مَعَ الْأَبْرَار.

অনুবাদ: হে আমাদের পালনকর্তা! অতঃপর আমাদের সকল গোনাহ মাফ কর এবং আমাদের সকল দোষ-ত্রুটি দূর করে দাও, আর আমাদের মৃত্যু দাও নেক লোকদের সাথে। (সূরা আল-ইমরান: আয়াত নং ১৯৩ )

 

রিযিক প্রাপ্তির জন্য পড়ুন

 

৪ নং মুনাজাতঃ

رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ .

অনুবাদ: হে আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা ! আমাদের প্রতি আকাশ থেকে খাদ্যভর্তি খাঞ্চা অবতরণ করুন। তা আমাদের জন্যে অর্থাৎ, আমাদের প্রথম ও পরবর্তী সবার জন্যে আনন্দোৎসব হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আপনি আমাদের রুজি দিন। আপনিই শ্রেষ্ঠ রুযীদাতা। ( সূরা আল-মায়িদাঃ আয়াত নং ১১৪)

 

দীনের পথে অটল থাকতে পড়ুন

 

৫ নং মুনাজাতঃ

َبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ.

অনুবাদ: হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের হেদায়াত দানের পর আমাদের হৃদয়কে বক্র করে দিও না। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান কর। নিশ্চয় তুমিই অধিক দানকারী। (সূরা আল ইমরান: আয়াত নং ৮)

 

নেককার স্ত্রী ও সুসন্তান পেতে পড়ুন

 

৬ নং মুনাজাতঃ

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

অনুবাদ: হে আমাদের পরওয়ারদেগার! আমাদের স্ত্রীদের ও সন্তানদেরকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা স্বরূপ করে দাও এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শ স্বরূপ করে দাও। (সূরা ফুরক্বান: আয়াত নং ৭৪)

 

জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচতে শবে কদরের আমল

 

৭ নং মুনাজাতঃ

رَبَّنَا اصْرِفْ عَنَّا عَذَابَ جَهَنَّمَ إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا إنَّهاَ ساَءَتْ مُسْتَقَرًّ وَمُقاَماً

অনুবাদ: হে আমাদের রব! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি হটিয়ে দাও। নিশ্চয় এর শাস্তি নিশ্চিত বিনাশ। বসবাস ও আবাসস্থল হিসেবে তা কত নিকৃষ্ট জায়গা। (সূরা ফুরক্বান: আয়াত নং ৬৫)

 

 

 

৫. দরুদ শরীফ পাঠ করা ।

 

১.দুরূদে ইবরাহীম

 

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ’ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ. اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ. اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ.

 

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি রহমত নাযিল করো যেমন রহমত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি বরকত নাযিল করো যেমন বরকত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তাঁর বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং৩৩৭০)

 

২. হাদীসের দুরূদ

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدِنِ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ. وَاَزْوَاجِه اُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ’ وَذُرِّيَّـــتِه وَاَهْلِ بَيْتِه. كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ. اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ.

 

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি রহমত নাযিল করো উম্মী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর স্ত্রীগণের প্রতি যারা মুমিনগণের মা এবং তাঁর বংশধরগণের প্রতি এবং তাঁর পরিবার পরিজনের প্রতি, যেমন রহমত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম এর পরিবার পরিজনের প্রতি। নিশ্চয় তুমি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৯৮২)

 

৩. হাদীসের দুরূদ

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّ عَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ.

 

(সুনানে নাসাঈ, হাদীস: ১২৯২)

 

৪.হাদীসের দুরূদ

 

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰىمُحَمَّدِنِ النَّبِيِّ الْاُمِّيِّ وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ.

(সুনানে আবু দাউদ হাদীস: ৯৮১/ মুসনাদে আহমাদ, হাদীস: ৪/১১৯)

 

৫. প্রচলিত দরুদ ।

اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا وَنَبِيِّنَا وَشَفِيْعِنَا وَحَبِيْبِنَا وَمَوْلَانَا مُحَمَّدٍ وَعَلٰى اٰلِه وَاَصْحَابِه وَبَارِكْ وَسَلِّمْ

 

অর্থ: হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সরদার, আমাদের নবী, আমাদের সুপারিশকারী, আমাদের প্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং আমাদের মহান নেতা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর, তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সাথীবর্গের উপর রহমত, বরকত ও শান্তি বর্ষণ করো।

 

 

 

শবে কদরের ইবাদত

শবে কদরের ইবাদত

লাইলাতুল কদরে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম এর আমল কি ছিল তা আমাদের জানা প্রয়োজন । উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা বলেন

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا دخل شد ميزره و أحي وايقظ اهله.

রমজানের শেষ দশকে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লুঙ্গি মজবুত করে নিতেন এবং রাত জাগতেন অর্থাৎ ইবাদত -বন্দেগিতে কাটাতেন এবং পরিবারের লোকদেরকে জাগাতেন । ( সহীহ বুখারী )

এর দ্বারা বোঝা গেল শুধু নিজে জাগলে হবে না পরিবারের লোকদেরকে আমলের তাগাদা দিতে হবে ।

নিজে কিংবা অন্যরা বিভিন্ন আমলের মশগুল হতে পারেন‌।‌ নিম্নে বর্ণিত নামাজগুলো ও আদায় করতে পারেন ।

 

 

১. সালাতুত তাওবার নামাজ ।

 

সালাতুত তাওবার নামাজ পড়তে পারেন। কারো থেকে কোন পাপ সংগঠিত হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ পবিত্রতা অর্জন করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট অনুনয় বিনয় করে ক্ষমা প্রার্থনা করাকে তাওবার নামাজ বলে ।

এই নামাজের সময় নিজের পাপের কারণে অনুতপ্ত হতে হবে এবং ভবিষ্যতে না করার জন্য পাকাপোক্ত ইরাদা করতে হবে । তাহলে আল্লাহ তার পাপের ক্ষমা করবেন ।‌ হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, আমাকে হযরত আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহু বলেছেন । তিনি সত্য বলেছেন, তিনি বলেছেন যে আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে কোন ব্যক্তি গোনাহ করে অতঃপর উঠে (অজু-গোসল) দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করে এবং কিছু নামাজ পড়ে অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ নিশ্চয়ই তার গোনাহ ক্ষমা করে দেন । অতঃপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আয়াত পাঠ করলেন তার অর্থ-

তারা যখন কোন গোনাহের কাজ করে বসে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করে বসে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে ( আবু দাউদ ও তিরমিজি )

 

২. তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তে পারেন ।

 

তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার গভীর সম্পর্ক স্থাপিত হয় । তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস রয়েছে । সেখান থেকে দু একটি উল্লেখ করছি । হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ ফরজ নামাজের পর নফল নামাজের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মর্যাদা নামাজ হলো রাতের নামায অর্থাৎ তাহাজ্জুদ নামাজ । ( মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদ)

 

 

হযরত আবু মালেক আশআরী রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জান্নাতে এমন কিছু (সুন্দর) কক্ষ আছে যার ভিতর থেকে বার দেখা যায় আর বার থেকে ভেতর দেখা যায় । আল্লাহ তাআলা সেগুলো ওই সব লোকদের জন্য তৈরি করেছেন যারা মেহমানদারী করে । বেশি বেশি সালাম করে এবং রাতের বেলায় নামাজ পড়ে । যখন অন্য মানুষ ঘুমন্ত থাকে । (সহীহ ইবনে হিব্বান )

 

 

তাহাজ্জুদ নামাজ দুই রাকাত থেকে শুরু করে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায় । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত ৮ রাকাত পড়তেন বিধায় তাকে উত্তম বলা হয়েছে । সুযোগ পেলে ৮ রাকাত নতুবা ৪ রাকাত আর তাও হিম্মত না হলে ২ রাকাত হলেও পড়ুন ।

তাহাজ্জুদের নামাজে যে কোন সূরা দিয়ে পাঠ করা যায় । তবে কিরাত লম্বা হওয়া উত্তম । তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত এভাবে করা যায়- আমি দুই রাকাত তাহাজ্জুদের নিয়ত করছি ।‌

 

৩. সালাতুল হাজাত নামাজ পড়তে পারেন ।

আল্লাহর নিকট বা বান্দার নিকট বিশেষ কোনো প্রয়োজন হলে কিংবা শারীরিক মানসিক যেকোনো পেরেশানি দেখা দিলে উত্তম ভাবে ওযু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া‌ । এটাকে সালাতুল হাজত বলে ।‌ অতঃপর আল্লাহর হামদ ও ছানা এবং দরুদ শরীফ পাঠ করে আল্লাহর নিকট দুআ করা ।

 

৪. সালাতুত‌ তাসবীর নামাজ পড়তে পারেন ।

 

সালাতুত তাসবীহ নামাজের নিয়ম

 

হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবকে বলেছেন, ‌হে চাচা ! আমি কি আপনাকে দেব না ? আমি কি আপনাকে প্রদান করব না ? আমি কি আপনার নিকটে আসবো না ? আমি কি আপনার জন্য দশটি সৎগুণের বর্ণনা করব না !

 

যা করলে আল্লাহ তাআলা আপনার আগের ও পেছনের, নতুন ও পুরাতন, ইচ্ছায় ভুলবশতকৃত ,ছোট-বড় , গোপন ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন ।

আর সে দশটি সৎগুন হলো আপনি চার রাকাত নামাজ পড়বেন । প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বেন । প্রথম রাকাতে যখন কেরাত পড়া শেষ করবেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন-

 

سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ

 

( উচ্চারণঃ সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার)

এরপর রুকুতে যাবেন এবং রুকু অবস্থায় উক্ত দোয়াটি দশবার পড়বেন । এরপর রুকু থেকে মাথা উঠাবেন এবং দশবার পড়বেন ।‌ এরপর সিজদায় যাবেন । সেজদারত অবস্থায় দশবার পড়বেন । এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সেজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন । এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন এবং দশবার পড়বেন । এই হল প্রতি রাকাতে ৭৫ বার ।

 

 

আপনি চার রাকাতে‌ অনুরূপ করবেন । যদি আপনি প্রতিদিন করতে পারেন তবে তা করুন । আর যদি না পারেন তবে প্রতি জুমায় একবার করুন । যদি প্রতি জুমায় না করেন তবে মাসে একবার ।‌ আর যদি তাও না পারেন তবে জীবনে একবার করুন ।

( সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-১২৯৭, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৭,সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১২১৬,‌সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৬৯৫ )

হাদীসের মান সহীহ । এই নামাজ পড়ার অন্য হাদীস আছে ।‌ কিছু দীনি ভাই আবার সালাতুত তাসবিহ এর হাদীসকে অস্বীকার করে বসে । এটা তাদের বাড়াবাড়ি এবং অজ্ঞতা ।

 

 

সালাতুত তাসবিহ নামাজ পড়ার তরীকা

 

চার রাকাত সালাতুত তাসবীহ নফল নামাজ আদায় করছি মনে মনে এতোটুকু খেয়াল রেখে তাকবীরে তাহরীমা বলে হাত বাধতে হবে । এরপর যথারীতি ছানা আউযুবিল্লাহ-বিসমিল্লাহসহ সূরা ফাতিহা ও তার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পাঠ শেষে দাড়ানো অবস্থায়-

 

سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ

 

এই তাসবীহ ১৫ বার পড়বেন‌। তারপর রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ পাঠ করে উক্ত তাসবীহ ১০ বার পড়বেন । এরপর রুকু থেকে উঠে ১০ বার পড়বেন‌ । এরপর সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে উক্ত তাসবীহ ১০ বার পড়বেন ‌। এরপর প্রথম সিজদা থেকে উঠে বসে দশবার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবেন‌। তারপর দ্বিতীয় সিজদায় গিয়ে সিজদার তাসবীহ পাঠ করে উক্ত তাসবীহ ১০ বার পাঠ করবেন ।

 

এরপর সিজদা থেকে উঠে বসে ১০ বার পড়বেন । এই হলো এক রাকাতে মোট ৭৫ বার । এরপর আল্লাহু আকবার বলা ব্যতীত দ্বিতীয় রাকাতে উঠবেন । এইরূপে দ্বিতীয় রাকাত পড়বেন । যখন দ্বিতীয় রাকাতে আত্তাহিয়্যাতু পড়ার জন্য বসবেন তখন আগে উক্ত তাসবীহ ১০ বার পড়বেন । তারপর আল্লাহু আকবার বলে তৃতীয় রাকাতে আগের নিয়মে তাসবিহ পাঠ করবেন ।

 

 

তবে চতুর্থ রাকাতে উঠবার সময় দ্বিতীয় রাকাতে ন্যায় আল্লাহু আকবার বলা ব্যতীত উঠবেন । যেহেতু এখানে আগেই আল্লাহু আকবার বলা হয়েছে। চতুর্থ রাকাতে শেষ বৈঠকের আগে দশবার উক্ত তাসবীহ পাঠ করবেন । এভাবে চার রাকাতে সর্ব মোট তিনশত বার উক্ত তাসবিহ পাঠ করবেন । কোন স্থানে উক্ত তাসবীর সম্পূর্ণ বা আংশিক ভুলে গেলে পরবর্তীতে যে কোন রোকনে আদায় করে নিলেই হয়ে যাবে । এই হল সালাতুত তাসবীহ নামাজে নিয়ম ।

 

বি: দ্র: সালাতুত তাসবীহ নামাজ জামায়াতের সাথে পড়া জায়েজ নয় । এটি একাকী আদায় করতে হবে । এই নামাজ রাতে পড়া উত্তম।

 

 

শেষ কথাঃ

 

প্রিয় দীনি ভাই ও বোনেরা । নামাজের তরীকা তো মোটামুটি আপনাদের জানা আছে । তাই সংক্ষেপে নফল নামাজের নিয়ম উল্লেখ করেছি । কারো যদি বুঝতে সমস্যা হয় কমেন্ট করুন । দলীলসহ বিস্তারিত লিখে দেবো ইনশাআল্লাহ । আজকে এখানে রাখতে চাচ্ছি । এতক্ষণ ধৈর্য ধরে লেখাটি পড়ার এবং আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । এবং আজকের মত বিদায় নিচ্ছি । আল্লাহ হাফেজ ।

 

 

 

লিখেছেনঃ মাওলানা শরিফ আহমাদ

 

 

 

 

Related Articles