নিয়ম কানুন

স্ত্রীকে খুশি রাখার ১২ কৌশল

স্ত্রীকে খুশি রাখার ১২ কৌশল

আসসালামুয়ালিকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ৷ সুপ্রিয় পাঠক!  বক্ষমান নিবন্ধে আমরা স্ত্রীকে খুশি রাখার ১২ কৌশল সম্পর্কে আলোকপাত করব ৷ পুরো নিবন্ধটি পড়ুন আশা করছি চমৎকার কিছু কৌশল সম্পর্কে আপনি অবহিত হতে চলেছেন যা আপনার বৈবাহিক জীবনে শান্তি সমৃদ্ধি আনয়নে সহযোগিতা করবে

 

স্ত্রীকে জিতিয়ে দেয়া

 

পূর্ণতম পৌরুষ
একঃ সংসার জীবনে স্বামীর পূর্ণতম পৌরুষের প্রতীক কী?
স্ত্রীকে জিতিয়ে দেয়া।
স্ত্রীকে খুশি করা পৌরুষদীপ্ত স্বামীর পরিচায়ক।
এটা কীভাবে সম্ভব?
একটু খুলে বলা যাক।
একজন মানুষ হিসেবে পৌরুষের পূর্ণতা— নারীর প্রতি আকর্ষণ ও ভালোবাসায় নিহিত। নারীর প্রতি টান-আকর্ষণ থাকাই (বায়োলজিক্যাল) পৌরুষের প্রধানতম বৈশিষ্ট্য।

স্ত্রীকে খুশি রাখার ১২ কৌশল

স্ত্রীকে ছাড় দেয়া

স্ত্রীকে খুশি রাখার ১২ কৌশল
স্ত্রীকে খুশি রাখার ১২ কৌশল

দুইঃ নারী বা স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসাটা কখন পূর্ণতা পায়?

পাপের সীমায় না পৌঁছা পর্যন্ত একজন স্বামী যখন তার স্ত্রীকে ছাড় দেয়, তর্কে বা মনোমালিন্যের সময় জিতিয়ে দেয়, তখনই একজন স্বামীর পৌরুষ পূর্ণতা পেয়েছে বলে ধরে নেয়া যায়। শরীয়তের সীমায় থেকে স্ত্রীকে ছাড় দেয়া ৷ তার ভুলত্রুটি উপেক্ষা করা ৷ হারামে না জড়িয়ে স্ত্রীর প্রতি অনুগত আর বিশ্বস্ত থাকা ৷ স্ত্রীর প্রতি নরমকোমল আচরণই একজন পৌরুষদীপ্ত স্বামীর অন্যতম বৈশিষ্ট্য ৷

লক্ষ্যণীয়ঃ আমরা শরীয়তের সীমারেখার কথা বলেছি। অন্যায় ঝগড়াকারী, গায়েপড়ে ঝামেলা পাকানো কিন্তু শরীয়তের সীমার বাইরের ব্যাপার। মা-বোনের কথা ধরে স্বামীর সাথে মল্লযুদ্ধে লিপ্ত হওয়া স্ত্রীদের কথা বলছি না। মুখরা রমণীকে বশীকরণ প্রায় অসম্ভবই বলা চলে। আমরা বলছি, শরীয়ত মেনে চলা মেনে চলা স্ত্রীদের কথা।

স্ত্রীকে খুশি রাখার ১২ কৌশল

উদার ও সহনশীল হওয়া

 

তিনঃ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে ঠিক এই পৌরুষটাই ছিলো। তিনি স্ত্রীগণের সাথে উদার, সহনশীল আচরণই করতেন। আবার, শরীয়তের সীমার বাইরে কিছু দেখলে, কুরআনি ভাষায় সবাইকে ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত থাকতেন (আহযাব: ২৮ দ্রষ্টব্য)।

আরও পড়ুনঃ স্বামীকে ভাই ডাকা যাবে কি? 

দমন-পীড়ন না চালানো

 

চারঃ পুরুষ যখন ব্যক্তিত্বের দোহাই দিয়ে, অহংকারবশত স্ত্রীর প্রতি দমন-পীড়নমূলক আচরণ করে, স্ত্রীর কাছে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রভুত্ব জাহিরের একতরফা লড়াইয়ে নেমে পড়ে, সেটা আর যাই হোক, পৌরুষদীপ্ত আচরণ হতে পারে না। নবীজির আচরণ এমন ছিল না মোটেও। এমন পুরুষ কখনোই সত্যিকার প্রেমিক হতে পারেন না। তারা মনিব হয়ে থাকতে চান। তাদের দরকার দাসী; স্ত্রী নয়। এটা জাহেলি যুগের স্বভাব। স্ত্রীর সাথে এমন খচমচ করা পুরুষের নির্বুদ্ধিতাও বটে।

 

সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ

স্ত্রীকে খুশি রাখার ১২ কৌশল
স্ত্রীকে খুশি রাখার ১২ কৌশল

পাঁচঃ আল্লাহ তাআলা নিজ অনুগ্রহে একজন দ্বীনদার স্ত্রী মিলিয়ে দিলে, স্বামীর পূর্ণতম পৌরুষের দ্বাবি হলো, স্ত্রীকে জিততে দেয়া। হাঁ, ছাড় দিতে গিয়ে গুনাহ হলে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতে হলে, সেক্ষেত্রে স্বামীকে কঠোর হতেই হয়। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হবে মহব্বত ও ছাড়মূলক। পারস্পরিক সহযোগিতামূলক; প্রতিযোগিতামূলক নয়। একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তারের লড়াইমূলক নয়।

 

শ্রেষ্ঠ মানুষ হওয়া

 

ছয়ঃ নবীজি ছিলেন পূর্ণতম মানব। নবীজির প্রতিটি আচরণই ছিল পূর্ণতা ও পক্কতায় সর্বোচ্চ স্তরের। নবীজির ভাষায় শ্রেষ্ঠতম মানুষ কে?
خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لأهله وأنا من خيركم لأهلي
তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে স্বীয় পরিবারের নিকট উত্তম। আর আমি আমার পরিবারের নিকট সর্বোত্তম (আয়েশা রা। তিরমিযী ৩৮৯৫)।

নারীরা পৃথিবীর প্রিয়বস্তু

 

সাতঃ একজন পুরুষের উন্নতি ও পূর্ণতার সর্বোচ্চ স্তর কী? ‘নবুওয়াত’। কুরআনের ভাষায় শুধু পুরুষই নবী হতে পারে, নারী নয় (আম্বিয়া: ৭ দ্রষ্টব্য)।

আল্লাহর অনুমোদন ছাড়া চাইলেই এই স্তুরে পৌঁছা সম্ভব নয়। নবীজির পর এই স্তরে আর কোনও পুরুষ পৌঁছতে পারবেও না। নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। তাহলে আমরা ধরে নিতে পারি, পেয়ারা নবীজিই হলেন, সর্বশেষ পূর্ণতম পুরুষ। একজন মানুষ হিসেবে, এই পূর্ণতম পুরুষের অন্যতম প্রিয় বিষয় কী ছিল? তাঁর মুখেই শুনি
حُبِّبَ إليَّ من دُنْياكمُ النِّساءُ والطِّيبُ وجُعِلَت قُرَّةُ عَيني في الصَّلاةِ
তোমাদের দুনিয়া থেকে আমার কাছে সুগন্ধি ও নারীদেরকে প্রিয় করে দেয়া হয়েছে আর সালাতের মাঝে আমার চোখের শান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে (আনাস রা। নাসায়ি: ৩৯৩৯)।

প্রয়োজনে একাধিক বিয়ে

 

আটঃ নারীর প্রতি আকর্ষণ পুরুষের স্বভাবজাত বিষয়। এই আকর্ষণকে প্রকাশ করার পূর্ণতম ও পবিত্রতম পদ্ধতি হচ্ছে বিয়ে। এই আকর্ষণের পবিত্রতম প্রকাশক্ষেত্র হচ্ছে ‘স্ত্রী’। পুরুষ নিজ সামর্থ অনুযায়ী শরীয়তসম্মত পন্থায় আকর্ষণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে।

ইনসাফ বজায় রাখতে পারলে, শরীয়ত সর্বোচ্চ ‘চার’ পর্যন্ত সীমা বেঁধে দিয়েছে। শেষজীবনে নবীজিকেও আর বিয়ে করতে আল্লাহ নিষেধ করেছিলেন। আল্লাহ অবশ্য নবীজির জন্য দাসী গ্রহণের পথ খোলা রেখেছিলেন। (আহযাব: ৫২ দ্রষ্টব্য)।

পুরুষ হলো কাউয়াম

নয়ঃ প্রতিটি স্বামীর আদর্শ কে?
পেয়ারা নবীজি। কুরআন ও সুন্নাহ বলে, পুরুষ হলো ‘কাউয়াম’। নারীর তত্ত্বাবধায়ক। নারীর সংরক্ষক। পুরুষ নারীকে আগলে রাখবে। সামলে রাখবে। ছায়া দিয়ে রাখবে। মায়া দিয়ে রাখবে। স্ত্রীর ওপর ছড়ি ঘোরানো, স্ত্রীকে চাপে রাখা, স্ত্রীকে অন্যায়ভাবে দমিয়ে রাখা, স্ত্রীর সাথে রূঢ় আচরণ করা-দ্বীনবিরোধী আচরণ। ফিকহবিরোধী আচরণ। পৌরুষবিরোধী আচরণ।

নবীজীকে আদর্শ বানানো

দশঃ হাঁ, একথা ঠিক, কোনও মানুষের পক্ষে নবীজির মতো পূর্ণতম স্বামী হওয়া অসম্ভব। পূর্ণতম স্বামী হতে পারা নবীজির মুজিযার অংশ বলা যেতে পারে। কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কর্তব্য হলো, নবীজির আদর্শ ধারণ করার প্রাণপণ চেষ্টা অব্যাহত রাখা। পাশাপাশি একথাও মনে রাখা উচিত, কোনও নারীর পক্ষে উম্মুল ‍মুমিনিনের মতো ‘পুণ্যবতী’ স্ত্রী হওয়াও অসম্ভব। বর্তমানে স্বামী ও স্ত্রী ‍উভয়পক্ষেই সীমাবদ্ধতা আছে।

স্ত্রীর আবদার রক্ষা করা

এগারোঃ কেমন ছিলেন নবীজি? আম্মাজান আয়েশা রা.-এর মুখেই শোনা যাক,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم رَجُلاً سَهْلاً إِذَا هَوِيَتِ الشَّىْءَ تَابَعَهَا عَلَيْهِ
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন নমনীয় স্বভাবের। আয়েশা (রাযিঃ) যখনই কোন কিছুর আবদার ধরতেন, তিনি সে আবদার রক্ষা করতেন (জাবের রা। মুসলিম: ১২১৩)।

স্ত্রীর কথা শোনা

বারঃ নবীজি স্ত্রীদের কথা রাখতেন। তাদের আবদার রক্ষা করতেন। নবীজি ছিলেন পূর্ণতম মুমিন। তিনি ছিলেন পূর্ণতম পুরুষ। তিনি ছিলেন পূর্ণতম স্বামী। পূর্ণতম স্বামীর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, স্ত্রীর নির্দোষ আবদার রক্ষা করা। শরীয়তের সীমায় থেকে স্ত্রীর প্রতি কোমল মায়ামাখা আচরণ করা। স্ত্রীকে সুখি করা। সুখি রাখা।

 

ফেসুকে আমাদের সাথে যুক্ত হোন ৷ ক্লিক করুন ৷

Related Articles