স্বাস্থ্য

গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায়

গ্যাস্ট্রিক দূর করার ঘরোয়া উপায়

 

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ ।‌ গ্যাস্ট্রিক প্রবলেম কম-বেশি সবার আছে । আর এ জন্যই অধিকাংশ নারী-পুরুষ দৈনিক খাদ্য তালিকায় রেখেছে ‌বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস্ট্রিক ঔষধ ‌।‌ অবস্থা এমন হয়েছে যেন গ্যাস্ট্রিক ঔষধই একটা খাদ্যে পরিণত হয়েছে ।

 

 

তাই আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো গ্যাস্ট্রিক কি ও কেন ? গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ‌‌ এবং দূর করার ঘরোয়া উপায় । কার্যকরী উপায়গুলো জানলে এবং মানলে ঔষধ ছাড়াই আপনারা ভালো থাকবেন । পুরো লেখাটি পড়ুন। উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ ‌।‌

 

 

গ্যাস্ট্রিক কি ?

 

গ্যাস্ট্রিক কি এই প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে ? অনেককে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারবে না ।‌ কেননা পেটের যেকোনো সমস্যাকে সাধারণ মানুষ গ্যাস্ট্রিক বলে অবহিত করলেও গ্যাস্ট্রিক বলতে চিকিৎসাশাস্ত্রে কিছু নেই ।

 

 

তবে যে জিনিসটিকে গ্যাস্ট্রিক বলা হয় তার প্রকৃত নাম হচ্ছে পেপটিক আলসার ডিজিজ বা পিইউডি ।‌ আর যদি

১. পাকস্থলী

২.ডিওডেনাম

৩.ইসোফেগাস

উল্লেখিত তিনটি জায়গায় এসিডের কারণে ক্ষত হয় এটাকে বলে পেপটিক আলসার ডিজিজ এবং এটাই সাধারণ মানুষের পরিভাষার গ্যাস্ট্রিক

 

 

গ্যাস্ট্রিক কেন হয় ?

 

প্রিয় পাঠক ।‌ উল্লেখিত প্রশ্নের জবাব হলো স্বাস্থ্যের প্রতি অসচেতনতা গ্যাস্ট্রিক হওয়ার মূল কারণ ।‌ কেননা ভাজা-পোড়া, তেল জাতীয় জিনিস ক্ষতিকর খাওয়া জেনেও সবাই নিয়মিত এগুলো খায় । খেতে ভালোবাসে । আর এগুলোই ধীরে ধীরে গ্যাস্ট্রিক রূপান্তরিত হয় ।

 

সুতরাং মূল কথা হলো দৈনন্দিন জীবনে সাধারণ কিছু বদভ্যাসের কারণে গ্যাস্ট্রিক হয়ে থাকে ।

 

গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ সমূহ

 

আপনাদের গ্যাস্ট্রিক প্রবলেম হলে কিভাবে বুঝবেন ?

কিছু‌ আলামত‌‌ বর্ণনা করছি ।‌ এগুলোর যে কোনটি আপনাদের মধ্যে পাওয়া গেলে বুঝে নিবেন আপনারা

গ্যাস্ট্রিকে আক্রান্ত । আলামত গুলো হলো-

 

গ্যাস্ট্রিকের লক্ষ্মণ সমুহ

১. পেটে জ্বালা-পোড়া করা ।

২. বদহজম হওয়া ।

৩. বমি বমি ভাব ।

৪. বমি করা ।

৫. ক্ষুধা হ্রাস পাওয়া ।

৬. পেট চিনচিন করা ।

৭. অল্পতেই পেট ভরার অনুভূতি হওয়া ইত্যাদি ।

 

 

গ্যাস্ট্রিকের ঘরোয়া সমাধান ‌

 

প্রিয় পাঠকবৃন্দ । রোগ ছোট্ট হলেও অবহেলার কোনো সুযোগ নেই । অবহেলায় রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে ‌। প্রচুর অর্থকরী নষ্ট করে । আর আত্মীয়স্বজনদের চরম ভোগান্তি তো আছেই ।

 

 

গ্যাস্ট্রিক‌ নিয়েও অবহেলা করা যাবে না । কেননা অবহেলা আলসার ছাড়াও নানাবিধ বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে ।‌ এ জন্য প্রথম থেকেই গ্যাস্ট্রিক দমনের উদ্যোগ গ্রহণ করুন । ঔষধ ছাড়াই গ্যাস্ট্রিক নির্মূলের ঘরোয়া কিছু উপায় আছে । নিম্নে ধারাবাহিক ভাবে উল্লেখ করছি । আপনাদের সুবিধা মতো যে কোন‌ একটি উপায় ট্রাই করতে পারেন ।

 

১. শসা :

শসার পেট ঠান্ডা রাখতে অনেক কাজ বেশি কার্যকরী খাদ্য ।‌ এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমাতে সাহায্য করে ।‌ তাছাড়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শসা খেতে পছন্দ করতেন ।

 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জাফর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত ৷ আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শসার সঙ্গে রাতাব খেতে দেখেছি। (সহীহ মুসলিম : হাদীস নং ৩৮০৬ )

 

২. দই:

 

দধি বা দই হলো এক ধরনের দুগ্ধজাত খাদ্য যা দুধের ব্যাকটেরিয়া গাজন হতে প্রস্তুত করা হয় ।

দই হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে ।‌ এতে করে খাবার দ্রুত হজম হয় । যার ফলে পেটে গ্যাস হওয়া ঝামেলা সহজে দূর হয়ে যায় ‌। এবং বিষাক্ত রাসায়নিক ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীর সুরক্ষিত থাকে ‌।

 

গ্যাস্টিক দুর করার উপায়

 

গ্যাস্টিক নির্মূলে  পেঁপে :

 

পেঁপে মূলত একটি ফল । যা মানুষ কাঁচা অবস্থায় সবজি হিসেবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খেয়ে থাকেন ।‌ পেঁপের অনেক গুণাগুণ রয়েছে । পেঁপের ভেতর রয়েছে পাপায়া নামক এঞ্জাইম যা হজম শক্তি বাড়ায় ।

 

নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলে গ্যাসের সমস্যা কমে যায় ‌।‌ এছাড়া পেঁপের রয়েছে আরও কার্যকরী গুনাগুন‌ যেমন রক্ত কাশে, কৃমিতে ,একজিমায়, দাদ‌ ও‌‌ মূত্রনালীর ক্ষতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।

 

কলা ও কমলা :

 

কলা ও কমলা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় একটি ফল । সর্বত্র পাওয়া যায় ।‌ বিশেষ করে কলা ক্যালরির ভালো একটি উৎস । কলাতে রয়েছে আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ ।

 

 

কলা ও কমলা পাকস্থলীর অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সহায়তা করে । এতে করে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় । এছাড়াও আরো অনেক উপকার রয়েছে ।

 

আদা :

 

আদা সবচাইতে কার্যকরী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমৃদ্ধ খাবার।

কথায় আছে আদা সকল রোগ নিরাময়ে দাদা ।‌ কথাটির মানে হচ্ছে আদা শরীরের সব রোগ নিরাময়ের জন্য যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম ।

 

আদায় রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রন ,ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ,ফসফরাস , সোডিয়াম , জিংক , ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি । আদা সব বয়সী মানুষের জন্য উপকারী । বিশেষ করে শিশুদের জন্য আদা- মধু বিশেষ কার্যকর ।

 

 

পেট ফাঁপা এবং পেটে গ্যাস হলে আদা কুচি কুচি করে লবণ দিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান হয়ে যায় ।

যারা আমাশয়, পেট ব্যথা ,পেট ফাঁপা সমস্যায় ভোগেন তারা খাবার পর এক কাপ গরম পানিতে এক চা চামচ আদার রস মিশিয়ে খেলে আমাশয় ,পেট ব্যথা, দূর হবে ।

 

আদার রস, লেবুর রস ও মধু একত্র করে গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে । তবে খালি পেটে আদা না খাওয়া উচিত ।‌ আদা সম্পর্কে সবচেয়ে অবাক করা তথ্য হচ্ছে আদার গুনাগুণ দেখে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে আদা খেয়েছেন ।

 

 

ঠিক এরকমটাই বর্ণিত হয়েছে হাদীসের প্রসিদ্ধ কিতাব মুস্তাদরাক হাকেমে ।

 

ঠান্ডা দুধ ।

 

পাকস্থলীর গ্যাস্ট্রিক অ্যাসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে আ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দেয় ঠান্ডা দুধ ।‌ এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ পান করলে এসিডিটি দূরে থাকে ।

তাছাড়া নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর দুধ পছন্দনীয় খাবার ছিল ।

হযরত আনাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত ৷ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মিরাজের রাতে বায়তুল মাকদিসে আমি দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হলে জিবরাইল আলাইহিস সালাম আমার সম্মুখে শরাব ও দুধের আলাদা দুটি পাত্র রাখেন। আমি দুধের পাত্রটি নির্বাচন করি। জিবরাইল আলাইহিস সালাম বললেন, আপনি প্রকৃত ও স্বভাবজাত জিনিস নির্বাচন করেছেন। (সহীহ বুখারী : হাদীস নং ৩১৬৪, জামে তিরমিজি: হাদীস নং ২১৩)

 

গ্যাস্টিক দমনে  দারুচিনি :

 

মূলত দারুচিনি মসলা হিসেবে বেশি পরিচিত । কিন্তু এই মসলা স্বাস্থ্যর জন্য দারুন উপকারী । দারুচিনির কয়েকটি গুনাগুন- হৃদ রোগ প্রতিরোধ করে , অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান , স্নায়বিক স্বাস্থ্য রক্ষা , ত্বকের যত্ন ,স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি , পেট ব্যাথা উপশম ইত্যাদি । হজমের জন্য খুবই ভালো । নিয়মিত সেবন করলে গ্যাস্ট্রিক থেকে সহজে রেহাই পাওয়া যাবে ।

 

 

 

জিরা:

 

জিরা পেটের গ্যাস, বমি , পায়খানা, রক্ত বিকার ইত্যাদিতে অত্যন্ত ফলদায়ক । এক গ্লাস পানিতে এক চামচ পরিমাণ জিরা ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা খাওয়া অথবা রাতের বেলা খাওয়ার পর মুখে চিবিয়ে গরম পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে । তাছাড়া আখের গুড়ের সাথে জিরা মিশিয়ে খেলে জ্বর কমে যায় ।

 

 

লবঙ্গ :

 

২/৩ টি লবঙ্গ মুখে দিয়ে চুষলে একদিকে বুক জ্বলা ,বমি বমি ভাব ,গ্যাস দূর হয় । সঙ্গে মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়ে যায় । এজন্য মাঝেমধ্যে লবঙ্গ খাওয়া উচিত ।

 

এলাচ

 

প্রধানত খাবারের রান্না মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।‌ এলাচের বিভিন্ন গুনাগুন রয়েছে । এলাচ চিবিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ও অনেক ক্ষেত্রে কমে যায় ।‌

 

গ্যাস্টিক দমনে রসুন:

 

এসিডিটির সমস্যা কম করতে রসুনের কোন বিকল্প হয় না বললেই চলে । এ ক্ষেত্রে এক কোয়া রসুন খেয়ে ফেললে স্টমাকে এসিড ক্ষরণের মাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করে । ফলে গ্যাস সংক্রান্ত বিভিন্ন উপসর্গ ধীরে ধীরে কমে যায় ।

 

পানি :

 

পানি পানের সুফলের কথা কমবেশি সবাই জানেন । প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই গ্লাস পানি পান করবেন । দেখবেন সারাদিন আর গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে না । কারণ পানি হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে । তাছাড়া পানি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখতে ও হেল্প করে ।

 

 

 

আনারস:

 

আনারসের রয়েছে 85 শতাংশ পানি এবং ব্রোমেলেইন নামক হজমে সাহায্যকারী প্রাকৃতিক এনজাইম যা অত্যন্ত কার্যকরী একটি পাচক রস । পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে এছাড়া আনারস জ্বর‌ নিয়ন্ত্রণে রাখে ।

 

গ্যাস্টিক থেকে বাঁচতে  ডাবের পানি :

 

ডাবের পানি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেকটাই দূর করতে সাহায্য করে । কেননা এতে রয়েছে ফাইবার যা হজম শক্তি বাড়ায় এবং পাশাপাশি অ্যাসিডিটি কমায় । এছাড়াও বুক জ্বালাপোড়া ও পেট ব্যথা কমাতে ডাবের পানি অত্যন্ত কার্যকর ।

 

থানকুনি পাতা :

 

অসংখ্য উপকারী ভেষজের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে থানকুনি পাতা । এটি বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ এবং জলাভূমির আশেপাশে পাওয়া যায় । এই থানকুনি পাতার রয়েছে কার্যকরী অনেক গুণাগুণ ।

হজমের সমস্যা দূর করে , পেট ও লিভার ভালো রাখে, ক্ষত নিরাময় করে , কাশি এবং শ্বাসযন্ত্রের অসুখ কমায় , কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে , রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ,অনিদ্রা দূর করে ও চুল পড়া কমায় ইত্যাদি ।

 

 

গ্যাস্ট্রিকের জনপ্রিয় ওষুধের নাম

 

 

প্রিয় পাঠকবৃন্দ ।‌ ইতোপূর্বে আপনারা জেনেছেন গ্যাস্টিক কি ? গ্যাস্ট্রিক হওয়ার কারণ ? গ্যাস্ট্রিকের লক্ষণ এবং গ্যাস্ট্রিকের ঘরোয়া সমাধান । ঘরোয়া সমাধানের ক্ষেত্রে ১৫ টি পয়েন্ট উল্লেখ করেছি । সেখান থেকে পছন্দসই যে কোন পদ্ধতি ট্রাই করতে পারেন । আর আপনাদের যদি আরো বেশি ধরনের সমস্যা‌ হয়ে থাকে তাহলে ঘরোয়া সমাধানের পাশাপাশি বিজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী এই ওষুধগুলো সেবন করতে পারেন ।

গ্যাস্টিকের ঔষধ

. সেকলো

২. এক্সিলক- ২০

৩. ইসুটিন- ২০

৪. রেনিটিডিন

৫. সার্জেল

৬. মাক্সপ্রো

৭. লোসেকটিল

৮. রবি প্রাজল

৯. ইন্টারসিড

১০. ইসোমি প্রাজল

১১. ফিনিক্স ইত্যাদি ।

 

স্মরণ রাখবেন সামান্য কিছু হলেই পানির মতো ওষুধ খাওয়া কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয় ।‌ ঔষধ বেশি সেবন করা হলে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় অনেক ক্ষেত্রে আরো বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করে । তাই বিজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বন্ধ করুন । সবাই ভাল থাকুন । সুস্থ থাকুন । দৈনিক শিক্ষা নিউজ এর সঙ্গে থাকুন । আজ এ পর্যন্তই । কথা হবে পরবর্তী কোন টপিকে । আল্লাহ হাফেজ ।

 

লিখনে: শরিফ আহমাদ

ঢাকা, বাংলাদেশ ।