সাহিত্য

বুক রিভিউ | গ্রন্থালোচনা: মদপায়ীদেরকে ভেংচি

বুক রিভিউ

আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু ৷ সুপ্রিয় পাঠক আজ আমরা কথা বলবো বুক রিভিউ নিয়ে ৷ আজকে একজন ছড়াকারের একটি বই নিয়ে আলোচনা করব ইনশাল্লাহ ৷

বইয়ের নামঃ মদপায়ীদেরকে ভেংচি

 

হাতেগোনা আলেম লেখকদের মধ্যে সুপরিচিত একটি মুখ দীদার মাহদী ‌। শরীয়তপুরের এই কবি শৈশব থেকেই লিখছেন ।

তিনি শিশু-কিশোরদের দীর্ঘদিন থেকে ছড়া উপহার দিচ্ছেন । সম্পাদনা করছেন অনলাইন পত্রিকা মাসিক ঝাঁজ‌। প্রতিষ্ঠা করেছেন ওয়েবসাইট । ইতোমধ্যে তিনি  ছড়া-কবিতা ,গল্প, সংগীত ও প্রবন্ধসহ সাহিত্যের সকল শাখায় বিচরণ করছেন ।

বুক রিভিউ

কুড়িয়েছেন সম্মান । পেয়েছেন উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পুরস্কার । বহু প্রতিভার এই কবি বক্তৃতার ময়দানেও বেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ইদানিং ।
এবারের বইমেলা (২০২২ ইং) এ প্রকাশিত হয়েছে ছড়া বই মদ্যপায়ীদেরকে ভেংচি ।

বইটি প্রকাশ করেছে আইএফডি পাবলিকেশন্স । ৪৮ পৃষ্ঠার হার্ডকাভারের  এই বইটিতে ৪০ টি চমৎকার ছড়া স্থান পেয়েছে ।

আরও পড়ুনঃ রেজুলেশন লেখার নিয়ম

মদ্যপায়ীদেরকে ভেংচি নামটি ব্যতিক্রম ও আকর্ষণীয় । বইয়ের নাম নির্বাচন করতে গিয়ে একজন লেখক সবচেয়ে বেশি হিমশিম খান । নাম নিয়ে চিন্তার কোন শেষ থাকে না । অনেকে ফেসবুকে পর্যন্ত স্ট্যাটাস দেন ।

অথচ দীদার মাহদী অনকমন একটি নাম রেখে রুচিশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। পাশাপাশি নামটি থেকেই একটি ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে । সুতরাং পুরো বইয়ে যে ভরপুর ম্যাসেজ থাকবে এটা সহজেই বোঝা যায় । বইয়ের সূচিপত্র দেখে এটা আরো ক্লিয়ার হবে ।

১. গাঁজা
২. আয়
৩. মাদকসেবী
৪. খুন
৫. তালের রস
৬. ডিভোর্স
৭. পাগল
৮. মদ
৯. যুবসমাজ
১০.মদ্যপায়ীদেরকে ভেংচি ইত্যাদি ।

মদ এবং মাদকের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত দেশ । যুবসমাজ ধ্বংসের পথে । আইন করেও জুলুম ,হত্যা, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি ও ছিনতাই ঠেকানো যাচ্ছে না । হিমশিম খাচ্ছে দেশের প্রশাসন ।

তবুও অপ্রীতিকর ঘটনা মাঝেমধ্যে শিরোনাম হচ্ছে মিডিয়ার । শুধু আইন এবং কঠোরতা দিয়ে এসব ঠেকানো সম্ভব হবে কিনা সময়ই বলে দিবে ।‌ সচেতন মহলের দাবী মদ ও মাদকের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করার ।

আর এই কাজটি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছেন এই গুণী ছড়াকার । তিনি মাদকসেবী ছড়ায় লিখেছেন:

এই জীবনে যে ধরেছে
সর্বনাশী মাদক
পেটের ভেতর ফিট করে সে
প্রাণ বিনাশী খাদক ।

মাদক যে একটি সুস্থ্য জীবন ধ্বংস করে দেয় তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা ফুটে উঠেছে প্রথম পংক্তিগুলোতে ।
তিনি ছড়ার শেষাংশে লিখেছেন:

মাদকসেবী ভাই-বোনেরা
মরণ নেশা ছাড়ুন ‌
দুই জীবনে দেখতে পাবেন
জীবন হবে দারুণ ।‌

এখানে তিনি অত্যন্ত নিপুণভাবে মাদকসেবী ভাই-বোনদের দরদের ভঙ্গিমায় আহ্বান করেছেন । মাদক ছাড়তে উৎসাহিত করেছেন এবং মাদক ছাড়লে দীন-দুনিয়া সুন্দর হবে এটা বুঝিয়েছেন ।

মাদকদ্রব্য পাচারকারীদের জীবনের কোনো গ্যারান্টি নেই ।‌ কখনো-সখনো নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ঝগড়া হয়। জীবন পর্যন্ত চলে যায় কারো কারো।‌

কেউবা আবার গাঁজা- ইয়াবা সাপ্লাই দিতে গিয়ে আটক হয় গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে । এই বিষয়টাকে সুন্দর করে ফুটিয়ে গাঁজা ছড়ায় তিনি লিখেছেন:

ধরা খেলো বল্টু মিয়া ‌
বেঁচতে গিয়ে গাঁজা
পুলিশ তাকে ধরে দিল
কয়েক বছর সাজা ।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাদক চোরাকারবারীরা ফুটপাতের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর হয়ে থাকে । সহায় সম্বলহীন কারো হয়তো পিতা-মাতা আছে । কারো হয়তো বা মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই ।

শিক্ষা-দীক্ষা থেকে দূরে থাকা এইসব লোকের নাম নাট- বল্টু ইত্যাদি টাইপের হয়ে থাকে । কবি তাই  ইচ্ছা করে ঐ নামটা ব্যবহার করেছে । নামের মাধ্যমে ওদের বংশ পরিচয়ের কথা বুঝিয়েছেন । ছড়ার পরবর্তী অংশে তিনি বলেন:

মুক্তি পেয়ে পণ করেছে

গাঁজাখুরি ছেড়ে

ভালো হয়ে দেশ ও দশের

নজর নিবে কেড়ে ।‌

অ্যারেস্ট হলে বা বিপদে পড়লে প্রথমে সবাই ভালো হওয়ার স্বপ্ন আঁকে । কিন্তু অতীত স্মৃতি কিংবা অসৎ বন্ধুদের সংস্পর্শে মিশে আবার খারাপ হয়ে যায় । তাই সৎ প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধব জীবনে অতি প্রয়োজন।‌ ঐ প্রচলিত প্রবাদটার বাস্তবতা আছে – সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস আর অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ ।

মদ ইয়াবা গাঁজা খেয়ে

সেলিম মিয়া রোজ

মাতাল হয়ে পড়ে থাকে

কে রাখে তার খোঁজ ?

‘আয়’ শিরোনামের এ ছড়ায় তিনি একজন মাদক সেবীর বেহালদশা ফুটিয়ে তুলেছেন । মাদক সেবীরা আসলে কতটা অসহায় কাছে থেকে দেখেই হয়তো কবি এমন অসাধারণ শিরোনাম,কথা ও পংক্তি সাজিয়েছেন । এরকম চমৎকার ও শিক্ষণীয় সব ছড়া দিয়ে সাজানো হয়েছে বইটি ।‌ এই ছড়াগুলো মাদকসেবীরা শুনলে তাদের গা জ্বলবে।

তাই মদপায়ীদের মদের বদঅভ্যাস ছোটাতে এই ছড়ার বইটি কিনে তাদের সামনে গিয়ে ছড়াগুলো একে একে পড়তে থাকুন এবং উপভোগ করুন তাদের শরীরের জ্বলুনি। দেখবেন এই ছড়া থেরাপি কয়েকদিন একনাগাড়ে চলার পর তাদের মদের অভ্যাস লেজ গুটিয়ে পালাবে। তাছাড়া এই বইটি সর্বস্তরের মানুষ পাঠ করে উপকৃত হতে পারবে ।

বিশেষ করে শিশু কিশোররা বইটি পড়ে জানতে পারবে মদ ও মাদকের ভয়াবহতা । ছন্দ ছড়ায় দেখবে নেশাকারীর ভয়ংকর পরিণাম । তারা নিজেরাই সমবয়সী অন্যদেরকে জানাতে পারবে । সচেতন করতে পারবে আগামী প্রজন্মকে । তাই এই বইয়ের বিকল্প নেই । আর হ্যাঁ তরুণ লেখকদের বই প্রকাশে‌ অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ।

অনেক প্রকাশনী নতুনদের বই করতে রাজি হয় না । অথচ আইএফডি পাবলিকেশন্স স্বেচ্ছায় বইয়ের কাজটি করেছে । এখানেই লেখকের বড় একটা সফলতা । ১৬০ টাকা মূল্যের এই বইটির বহুল প্রচার কামনা করছি।

       শরিফ আহমাদ

আলেম, কবি ও আলোচক

Related Articles