সাহিত্য

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা

 

 

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কি ও কেন?

 

১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস । এই দিবসটি ইতিহাসের এক বেদনময় কালো অধ্যায় । কেননা এই দিনে পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ও তার সহযোগী রাজাকাররা সম্মিলিতভাবে পরিকল্পনা করে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে ।

মূলত ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তানে হানাদার বাহিনী নিজেদের নিশ্চিত পরাজয় বুঝতে পেরে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে মেধা শূণ্য করার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে । যুদ্ধজয়ী বাঙালি যেন আর কোনদিন বিশ্বে শিক্ষা দীক্ষায় ,জ্ঞান-বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মাথা উচু করে দাঁড়াতে না পারে তার লক্ষ্যেই এই নীল নকশার বাস্তবায়ন ।

পড়ুন – বুদ্ধিজীবী দিবসের কবিতা

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় । এবং অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দিনটিকে উদযাপন করা হয় । শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসকে উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনার ধারণা দেওয়া হচ্ছে ।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা

মঞ্চে উঠে প্রথম করণীয়ঃ

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ । আজ ১৪ ই ডিসেম্বর । ঐতিহাসিক শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস । এটা আমাদের বাঙালি জাতির জন্য শোকাবহ বিশেষ স্মরণীয় একটি দিন । স্মরণীয় এই দিনে এমন একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি আয়োজকদের ।

পড়ুন – বুদ্ধিজীবী দিবস নিয়ে স্ট্যাটাস

আজকের অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি, মঞ্চে উপবিষ্ট অন্যান্য জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিবর্গ এবং আমার সামনে উপস্থিত সকলকে জানাই আমার পক্ষ থেকে জানাই প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন ।

 

এবার মূল বক্তব্য শুরু করুনঃ

 

সম্মানিত উপস্থিতি । আর মাত্র দুদিন পরে আসছে ১৬ ডিসেম্বর । মহান বিজয় দিবস । আমরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করবো বিজয় দিবস । কিন্তু এই বিজয় দিবস এমনি এমনি আসেনি । এর জন্য ১৯৭১ সালে আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে । দীর্ঘ ন’মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে পেয়েছি আমরা আজকের এই বিজয় । আজকের এই প্রিয় বাংলাদেশ ।

আমরা যদি ইতিহাসের বই পত্রে নজর দিই, আমরা যদি একটু পিছন ফিরে তাকাই তাহলে স্পষ্ট দেখতে পাই ,

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পূর্ব বাংলাকে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে । ক্ষমতার কলকাঠি ছিল তাদের হাতে কুক্ষিগত । তাদের জুলুম নির্যাতনের স্টিম রোলার বাড়তে থাকে । বিশেষ করে ১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চ রাতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে অস্ত্র-শস্ত্রে সুসজ্জিত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী । সবুজ শ্যামল মাটি সিক্ত হয় নিরীহ মানুষদের তাজা রক্তে ।ঐ হিংস্রতা ,ঐ বর্বরতা ,ঐ অন্যায় আগ্রাসনে মুখ বুঝে সহ্য করেনি বাংলার সর্বস্তরের মানুষ । যার যা আছে তাই নিয়েই প্রতিরোধে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিনিয়ে আনে কাঙ্খিত বিজয় ।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা

বক্তব্যের মাঝে দৃষ্টি আকর্ষণ:

 

সম্মানিত সুধিমন্ডলী । আমাদের স্বাধীনতা অর্জন নষ্ট করার লক্ষ্যে কাজ করেছে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা রাজাকার ,আল বদর বাহিনী । তারা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের ধরিয়ে দিয়েছে । দেখিয়ে দিয়েছে গোপন আস্তানা সমূহ । ওদের নির্দেশনা পাকিস্তানের ড্রাকুলারা নারীদের জন্য নির্যাতনের সুযোগ পেয়েছে । ওদের জন্যেই স্বামীহারা হয়েছে হাজার হাজার নারী । পিতা হারিয়েছে অনেক সন্তান । নাড়ি পোতা ঘরবাড়ি ছেড়ে জংলি প্রাণীর মতো জীবন যাপন করতে হয়েছে হাজার হাজার মানুষকে । এ সবগুলোর পিছনে ছিল মূলত রাজাকার বাহিনীর কৌশল ।

কিন্তু আনন্দের বিষয় হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কোনভাবেই দমে যায়নি । জুলুম নির্যাতনের শিকার হওয়া সত্ত্বেও বাঙালিরা থেমে থাকেনি । লড়াই চালিয়ে গেছে, খেয়ে না খেয়ে । দীর্ঘ নয়টি মাসের ১৪ শেষে অর্জিত হয়েছে বিজয় । আমরা পেয়েছি স্বাধীন দেশ । পরাজিত হয়েছে পাকিস্তানি ড্রাকুলারা । হেরে গেছে ওদের প্রেতাত্মা রাজাকার বাহিনী । সবাই আনন্দের সঙ্গে বলুন আলহামদুলিল্লাহ ।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা

এবার বক্তব্য শেষ করুন:

 

পাকিস্তানের দোসর রাজাকার ও দেশদ্রোহী গোষ্ঠী যখন দেখলো বাংলাদেশের বিজয় আসন্ন । তখন তারা খুব ভয় পেয়ে গেল । নিজেদের পরিচয় আত্মগোপন করার জন্য তারা এদেশের শিক্ষিত, সচেতন, জ্ঞানী গুণী ওবুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করতে লাগলো । উদ্দেশ্য একটাই যেন তারা রাজাকারদের পরিচয় প্রকাশ না করতে পারে । টার্গেট একটাই ছিল যেন বিশ্বের মাঝে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে । এই লক্ষ্যে তারা কাজ করে গেছে । শহীদ করেছে শত শত বুদ্ধিজীবীদের কে । ধিক্কার জানাই ওইসব রাজাকার ও দেশদ্রোহীদের প্রতি ।

আজকের এই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ দিবসে শহীদ হওয়া জ্ঞানীগুণীদেরকে । তাদের জন্য দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন তাদের জান্নাতের সুউচ্চ মাকাম দান করেন । সেই সঙ্গে বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ ও দশের কল্যাণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি ।

কবির ভাষায়–

তোমরা ছিলে তোমরা আছো থাকবে চিরকাল ,

তোমাদের আদর্শে উজ্জীবিত হোক প্রতিটি সকাল ।

 

 

 

Related Articles