ইসলাম

কপালে টিপ দেওয়া কি হারাম? কপালে টিপ পরার ইতিহাস মাওলানা শরিফ আহমাদ

কপালে টিপ দেওয়া কি হারাম? কপালে টিপ পরার ইতিহাস

 

 

সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা ।‌ আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করবো‌ কপালে টিপ দেওয়ার ইসলামী বিধান ।‌ মূলত এ বিষয়টা অনেকেরই অজানা । তাই উক্ত বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু আলোচনা করছি । পুরো লেখাটি পড়তে থাকুন । উপকৃত হবেন নিশ্চিত ।

 

 

ইসলামে নারীর রূপচর্চা

 

ইসলামে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাকে ঈমানের অঙ্গ বলা হয়েছে । আর সাজসজ্জা এটা নারী-পুরুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ । তবে সাজসজ্জা শব্দটি নারীদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত । সাজসজ্জা তাদের স্বভাবজাত একটি গুণ ।

মহান আল্লাহ তাআলা তাদের সৌন্দর্য চর্চার অনুমোদনও দিয়েছেন ।‌ তবে একটি সীমারেখা নির্ধারিত করে দিয়েছেন । যেন তা পাপে পরিণত না হয় ।‌ ( সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৯১)

নারীদের সাজসজ্জার উদ্দেশ্য হলো স্বামীর মনোরঞ্জন । তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করাও একটি ইবাদত । এই ইবাদাত করতে গিয়ে চারটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে ।

১. আল্লাহর সৃষ্টির কোন বিকৃতি যেন না ঘটে ।

২. শরীয়তের গণ্ডির বাইরে যেন না যায় ।

৩. হালাল বস্তু দ্বারা সাজসজ্জা করতে হবে ।

৪. অন্য ধর্মালম্বীদের অনুসরণ যেন না হয় ।

উল্লেখিত চারটি বিষয় খেয়াল রেখে নারীরা রূপচর্চা করতে পারে। তবে এই সব সৌন্দর্য চর্চার উদ্দেশ্য হবে স্বামীর সন্তুষ্ট । বাইরের কাউকে দেখানোর উদ্দেশ্যে নয় ।

 

কপালে টিপ দেওয়া কি হারাম ?

 

সাজসজ্জার অংশ হিসেবে মহিলাদের কপালে লাল নীল ইত্যাদির টিপ পরা জায়েজ কিনা সে ব্যাপারে কোরআন ও হাদীসের স্পষ্ট বক্তব্য না থাকায় আলেমদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয় ।

একদল আলেমের দাবি টিপ মূলত ভারতবর্ষের মহিলাদের সাজ সজ্জার একটি উপকরণ । এটা ধর্ম বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় । যার কারণে প্রাচীনকাল থেকে অত্র অঞ্চলে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে কমবেশি সকল মহিলা ব্যবহার করে আসছে ।

তাদের যুক্তি টিপ বা কোন বিষয়কে স্পষ্ট দলীল ছাড়া হারাম বলার সুযোগ নেই । তবে সেজেগুজে পর পুরুষের সামনে ঘুরে বেড়ানো অবশ্যই নাজায়েজ । কারণ ইসলামে স্বামী নিজস্ব মাহরাম পুরুষ এবং মহিলা অঙ্গন ছাড়া অন্য কারো সামনে মহিলাদের সাজ সজ্জা প্রদর্শন করা বৈধ নয় ।

 

আরেকদল আলেমের মতামত হলো মুসলিম মহিলাদের জন্য কপালে টিপ করা বৈধ নয় । তাদের মতে টিপ পরা মূলত হিন্দুদের একটি অংশ । যা হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাস ও সংস্কৃতি অন্তর্ভুক্ত । বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক অভিধান এবং উইকিপিডিয়া একথা প্রমাণ করেছে যে টিপ বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের নারীরা ব্যবহার করে থাকে । আর বৈষ্ণব সম্প্রদায় হলো হিন্দু ধর্মের একটি শাখা । সুতরাং এটি পরিধান করলে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির চর্চা করা হয় । যা ইসলামে হারাম । হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ:: ” الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ.

 

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কোন ব্যক্তি (কেয়ামতের দিন ) তার সাথে থাকবে যাকে সে মুহাব্বাত করে । ( মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৭১৮, বুখারী, হাদীস নং-৬১৬৮, ৫৮১৬)

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ.

হযরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যার সাদৃশ্য গ্রহণ করে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত ।

(সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১)

সুতরাং মূল কথা হলো টিপ ইসলামী আদর্শ ও চিন্তাধারার পরিপন্থী কাজ । নাজায়েজ ও হারাম হওয়ার দলীল মজবুত ।  কোন মহিলা সাহাবীয়া দূরে থাক পূর্ববর্তী নেককার রমণীদের কেউ টিপ পড়েছে এমন নজির কেউ দেখাতে পারবে না । অতএব মুসলিম নারীদের তা পরিহার করা উচিত ‌।

 

কপালে টিপ পরার ইতিহাস

 

কপালে টিপ পরা পৃথিবীতে কখন শুরু হয়েছে সঠিক কোনো তথ্য নেই । তবে ইতিহাস নিয়ে দুটি গল্প প্রচলিত আছে । প্রথম গল্পটি এরকম-

মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে যখন আগুনে পুড়িয়ে মারার জন্য আগুন জালালো তখন আগুনের তাপ এত বেশি ছিল যে কেউ কাছে যেতে পারছিল না । তাই একটা চরক বানানো হল ।‌ যার মাধ্যমে ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে থেকে ছুড়ে আগুনে নিক্ষেপ করা হলো । কিন্তু রহমতের ফেরেশতাগণ চরকের একপাশে ভর করে থাকায় চরক ঘুরানো যাচ্ছিল না । তখন শয়তান নমরুদ কে কুবুদ্ধি দিল সমাজে যারা অনৈতিক কর্মকান্ড করে বেড়ায় অর্থাৎ বেশ্যা নারীদের এনে অনৈতিক কর্মকান্ড করতে দেওয়া হোক । তাই করা হলে ফেরেশতাগণ লজ্জায় চলে গেলেন । ফলে ইব্রাহিম আলাইহিস সাল্লাম কে আগুনে নিক্ষেপ করা হলো । আর এদিকে আল্লাহর হুকুমে আগুন তার জন্য প্রশান্তির বাগানে পরিণত হয়ে গেল ।

পরবর্তীতে ওই বেশ্যা মহিলাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান করা হলো এবং মাথায় তীলক পরানো হল । আর কালের পরিক্রমায় সেটাই টিপ নামে পরিচিত আমাদের সমাজে ।

আর যে গল্পটি হলো-

হিন্দুদের প্রাচীন বিয়ে পদ্ধতির মাঝে একটি ছিল নারীদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া । হিন্দু দেবতা কৃষ্ণ অনেক নারীকে অপহরণ করে বিয়ে করেছিল । এমনকি বহুল প্রচলিত কৃষ্ণের প্রেমিকা রাধা ছিল তারই আপন মামার বউ । কৃষ্ণ তাকে অপহরণ করে বিয়ে করেছে ।

বিবাহিত নারীরা অপহরণ থেকে বাঁচতে তারা তাদের সিঁথিতে সিঁদুর দিতো । এখনো বিবাহিত হিন্দু নারীরা তাই করে থাকে । সেই হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির ঘুরেফিরে মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করেছে ।

উল্লেখিত দুটি ঘটনার একটিও নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রমাণিত নয় ।‌ প্রথম ঘটনাটি তাফসীরে মারেফুল কোরআন এবং কাসাসুল আম্বিয়া গ্রন্থে থাকলেও এগুলো নিয়ে তাহকীক করা প্রয়োজন । তাহকীক ছাড়া প্রচার করা বুদ্ধিমান ও সচেতন মানুষের কাজ নয় ।

 

বাচ্চাদের কপালে টিপ

 

জিন ও মানুষের বদ নজর থেকে বাঁচতে শিশুদের কপালে টিপ দেওয়ার একটি প্রথা সমাজে প্রচলিত আছে । এটাও ভিত্তিহীন । এটাও পরিত্যাজ্য । কোরআন ও হাদীসের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই ।

হ্যাঁ শিশুদের বদ নজর থেকে বাঁচাতে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া-দরুদ পরা যেতে পারে ।

 

ইসলামিক বিভিন্ন বিষয় জানতে জয়েন করুন আমাদের ফেসবুক গ্রুপে ধর্মীয় বিষয় জানতে চাই ক্লিক করুন

 

লিখেছেন: মাওলানা শরিফ আহমাদ

 

 

 

Related Articles