ইসলাম

যাকাত দেওয়ার নিয়ম। যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত। মাওলানা শরিফ আহমাদ

যাকাত দেওয়ার নিয়ম কানুন‌ যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

 

সুপ্রিয় পাঠক । যাকাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত । ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে এটি তৃতীয় ‌। কিন্তু এই ইবাদত সম্পর্কে অনেকে উদাসীন । অনেকে সামর্থ্যবান হওয়া সত্বেও যাকাতকে জরিমানা মনে করে । যাকাত না দেওয়ার তালবাহানা করতে থাকে । আবার অনেকে আছে যাকাত সংক্রান্ত তথ্যাবলী জানে না । আর এজন্য অনেক ক্ষেত্রে ঠিকভাবে যাকাত আদায় করতে পারে না । তাই আজ আপনাদের সাথে যাকাত সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো শেয়ার করবো । পুরো লেখাটি পড়ুন। উপকৃত হবেন নিশ্চিত।

 

সূচিপত্র

যাকাত অর্থ কি ?

 

যাকাত একটি আরবী শব্দ । শব্দটির অর্থ হলো বৃদ্ধি পাওয়া ,পবিত্র করা, প্রশংসা ও পরিছন্নতা ইত্যাদি ।

 

যাকাত কাকে বলে ?

 

শরীয়তের পরিভাষায়: নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কর্তৃক বছরান্তে হখ পক্ষ থেকে তার মালের উপর নির্ধারিত অংশ নির্ধারিত খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলে ।শরীয়তের পরিভাষায়: নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কর্তৃক বছরান্তে শরীয়তের পক্ষ থেকে তার মালের উপর নির্ধারিত অংশ নির্ধারিত খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলে ।

 

যাকাত কত হিজরীতে ফরজ হয় ?

 

দ্বিতীয় হিজরীতে মদিনাতুল মুনাওয়ারায় যাকাত ফরজ হয় ।

 

যাকাত সম্পর্কিত কোরআনের আয়াত

 

পবিত্র কোরআনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮২ আয়াতে যাকাতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে । الز كوة শব্দটা ৩০ বার , الانفاق শব্দ দ্বারা ৪৩ বার এবং الصدقات শব্দ দ্বারা ৯ বার । ( ৩০+ ৪৩+ ৯ ) মোট ৮২ বার ।

যাকাত সংক্রান্ত কোরআনের আয়াত

যাকাত শব্দ দ্বারা ৩ টি আয়াত

 

وَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَارۡکَعُوۡا مَعَ الرّٰکِعِیۡنَ

অনুবাদ: আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়। (আল বাকারা – ৪৩)

 

وَاِذۡ اَخَذۡنَا مِیۡثَاقَ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ لَا تَعۡبُدُوۡنَ اِلَّا اللّٰہَ ۟ وَبِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا وَّذِی ‌الۡقُرۡبٰی وَالۡیَتٰمٰی وَالۡمَسٰکِیۡنِ وَقُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا وَّاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّکٰوۃَ ؕ ثُمَّ تَوَلَّیۡتُمۡ اِلَّا قَلِیۡلًا مِّنۡکُمۡ وَاَنۡتُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ

 

অনুবাদ: যখন আমি বনী-ইসরাঈলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্নীয়-স্বজন, এতীম ও দীন-দরিদ্রদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, মানুষকে সৎ কথাবার্তা বলবে, নামায প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত দেবে। তখন সামান্য কয়েকজন ছাড়া তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে, তোমরাই অগ্রাহ্যকারী। (আল বাকারা – ৮৩)

 

 

وَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَاٰتُوا الزَّکٰوۃَ ؕ وَمَا تُقَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِکُمۡ مِّنۡ خَیۡرٍ تَجِدُوۡہُ عِنۡدَ اللّٰہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ

 

অনুবাদ: তোমরা নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত দাও। তোমরা নিজের জন্যে পূর্বে যে সৎকর্ম প্রেরণ করবে, তা আল্লাহর কাছে পাবে। তোমরা যা কিছু কর, নিশ্চয় আল্লাহ তা প্রত্যক্ষ করেন। (আল বাকারা – ১১০)

 

ইনফাক শব্দ তারা ৩ টি আয়াত

 

الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡغَیۡبِ وَیُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَمِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ۙ

 

অনুবাদ:যারা অদেখা বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে এবং নামায প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি তাদেরকে যে রুযী দান করেছি তা থেকে ব্যয় করে ।(আল বাকারা – ৩)

وَاَنۡفِقُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَلَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ اِلَی التَّہۡلُکَۃِ ۚۖۛ وَاَحۡسِنُوۡا ۚۛ اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

 

অনুবাদ: আর ব্যয় কর আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর মানুষের প্রতি অনুগ্রহ কর। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন। (আল বাকারা – ১৯৫)

 

مَثَلُ مَا یُنۡفِقُوۡنَ فِیۡ ہٰذِہِ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا کَمَثَلِ رِیۡحٍ فِیۡہَا صِرٌّ اَصَابَتۡ حَرۡثَ قَوۡمٍ ظَلَمُوۡۤا اَنۡفُسَہُمۡ فَاَہۡلَکَتۡہُ ؕ وَمَا ظَلَمَہُمُ اللّٰہُ وَلٰکِنۡ اَنۡفُسَہُمۡ یَظۡلِمُوۡنَ

 

অনুবাদ: এ দুনিয়ার জীবনে যা কিছু ব্যয় করা হয়, তার তুলনা হলো ঝড়ো হাওয়ার মতো, যাতে রয়েছে তুষারের শৈত্য, যা সে জাতির শস্যক্ষেত্রে গিয়ে লেগেছে যারা নিজের জন্য মন্দ করেছে। অতঃপর সেগুলোকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। বস্তুতঃ আল্লাহ তাদের উপর কোন অন্যায় করেননি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করছিল। (আল ইমরান – ১১৭)

 

 

সদাকা শব্দ দ্বারা ৩ টি আয়াত

 

اِنۡ تُبۡدُوا الصَّدَقٰتِ فَنِعِمَّا ہِیَ ۚ وَاِنۡ تُخۡفُوۡہَا وَتُؤۡتُوۡہَا الۡفُقَرَآءَ فَہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ وَیُکَفِّرُ عَنۡکُمۡ مِّنۡ سَیِّاٰتِکُمۡ ؕ وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ

 

অনুবাদ: যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান-খয়রাত কর, তবে তা কতইনা উত্তম। আর যদি খয়রাত গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তদের দিয়ে দাও, তবে তা তোমাদের জন্যে আরও উত্তম। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের কিছু গোনাহ দূর করে দিবেন। আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খুব খবর রাখেন। (আল বাকারা – ২৭১)

 

یَمۡحَقُ اللّٰہُ الرِّبٰوا وَیُرۡبِی الصَّدَقٰتِ ؕ وَاللّٰہُ لَا یُحِبُّ کُلَّ کَفَّارٍ اَثِیۡمٍ

 

অনুবাদ: আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে। (আল বাকারা – ২৭৬)

 

لَا خَیۡرَ فِیۡ کَثِیۡرٍ مِّنۡ نَّجۡوٰىہُمۡ اِلَّا مَنۡ اَمَرَ بِصَدَقَۃٍ اَوۡ مَعۡرُوۡفٍ اَوۡ اِصۡلَاحٍۭ بَیۡنَ النَّاسِ ؕ وَمَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ ابۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ اللّٰہِ فَسَوۡفَ نُؤۡتِیۡـہِ اَجۡرًا عَظِیۡمًا

 

অনুবাদ: তাদের অধিকাংশ সলা-পরামর্শ ভাল নয়; কিন্তু যে সলা-পরামর্শ দান খয়রাত করতে কিংবা সৎকাজ করতে কিংবা মানুষের মধ্যে সন্ধিস্থাপন কল্পে করতো তা স্বতন্ত্র। যে একাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে আমি তাকে বিরাট ছওয়াব দান করব। (আন নিসা – ১১৪)

 

যাকাতের গুরুত্ব ও ফজিলত

 

মাল বা ধন-সম্পদের সঙ্গে আল্লাহপাক যেসব বিধান রেখেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হল যাকাত । দেহের সঙ্গে সম্পর্কিত ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নামাজ । আর মালের সঙ্গে সম্পর্কিত ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যাকাত । এই নামাজ আর যাকাত এতই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে দুটোকে মুসলমান হওয়ার আলামত হিসেবে গণ্য করা হয়েছে । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে সাহাবায়ে কেরামকে জিহাদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো ।

 

 

তাদেরকে বলা হতো যে তোমরা যুদ্ধ করতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈমান না আনে এবং নামাজ না পড়ে আর যাকাত না দেয় । এর দ্বারা বোঝানো হতো যে কাফেরদের বিরুদ্ধে জেহাদ চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ঈমান না আনবে নামাজ না পড়ে এবং যাকাত না দিবে । অর্থাৎ এই তিনটি কাজ যতক্ষণ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে মুসলমান বলে গণ্য করা হবে না । যদি কেউ শুধু মুখে বলে আমি মুসলমান কিন্তু সে নামাজ পড়ে না এবং যাকাত না দেয় তাহলে তাকে সঠিক মুসলমান হিসেবে বিবেচনা করা হবে না ।

 

 

 

যাকাত ও দান সদকার গুরুত্ব ও ফজিলত সংক্রান্ত অসংখ্য আয়াত ও হাদীস রয়েছে । তার মধ্যে একটি হাদীস এরকম- হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু বলেছেন । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম ইরশাদ করেন, একমাত্র দুই ব্যক্তির ঈর্ষণীয়- এক ব্যক্তি যাকে আল্লাহ তাআলা ধন সম্পদ দান করেছেন আর হক কাজে সেই সম্পদ ব্যয় করার জন্য তাকে নিযুক্ত করেছেন । আরেক ব্যক্তি হল যাকে আল্লাহ হেকমত তথা কোরআন-হাদীসের ইলেম দান করেছেন অতঃপর সেই ইলেম অনুযায়ী সবকিছু ফায়সালা করে এবং অন্যকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম )

 

 

 

যাকাত সম্পর্কিত হাদীস

 

১ নং হাদীস

হযরত ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি । ১.আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল একথা সাক্ষ্য দেওয়া । ২. নামাজ কায়েম করা ৩. যাকাত আদায় করা ৪. হজ্জ পালন করা ৫. রমজান মাসে রোজা রাখা ।

(সহীহ বুখারী ও মুসলিম, বুখারী হাদীস নং ৭ )

 

২ নং হাদীস

হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেছি নামাজ কায়েম করার , জন্য যাকাত দেওয়ার জন্য এবং প্রত্যেক মুসলমানের কল্যাণ কামনার জন্য ।

( সহীহ বুখারি, হাদীস নং ৫৫ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৩ )

৩ নং হাদীস

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, উটের যে হক ( যাকাত) মালিক যদি তা প্রদান না করে, তবে কেয়ামত দিবসে ঐ উট সর্বাপেক্ষা অধিক বলিষ্ঠবাস্থায় মালিকের নিকট উপস্থিত হবে এবং স্বীয় ক্ষুর দ্বারা তাকে পিষ্ঠ করবে ।

 

 

অনুরূপভাবে বকরির যে হক (যাকাত) রয়েছে মালিক যদি তা প্রদান না করে, তাহলে কেয়ামত দিবসে ওই বকরি পূর্বাপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হয়ে মালিকের নিকট আসবে এবং স্বীয় ক্ষুর দ্বারা তাকে দলিত করবে এবং শিং দ্বারা তাকে আঘাত করতে থাকবে । উট ও বকরীর হক হল পানির নিকট ( জনসম্মুখে ) দোহন করা এবং (দরিদ্র মানুষের মাঝে একটা অংশ বন্টন করা )

 

 

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন তোমাদের কেউ যেন (যাকাত অনাদায়ের কারণে শাস্তিস্বরূপ) তার কাধের উপর চিকিৎসারত বকরি বহন করে আমার নিকট না আসে এবং একথা বলেছে হে মুহাম্মদ (আমাকে রক্ষা করুন )তখন আমি বলব তোমাকে রক্ষা করার ক্ষমতা আমার নেই ‌। আমিতো ( যাকাত অনাদায়ের পরিণতি সম্পর্কে) বলে দিয়েছি ‌। অনুরোধ কেউ যেন তার কাধের উপর চিকিৎসারত উট বহন করে আমার নিকট না আসে । এবং একথা বলে যে হে মুহাম্মদ (আমাকে রক্ষা করুন) তখন আমি বলবো তোমাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমার নেই । আমি তো (যাকাত অনাদায়ের পরিনতি সম্পর্কে) পূর্বে বলে দিয়েছি।

( সহীহ বুখারী ও মুসলিম, বুখারী হাদীস নং ১৪০২)

 

 

যাকাত না দেওয়ার শাস্তি

 

 

যাকাত আদায় না করার শাস্তি সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡاَحۡبَارِ وَالرُّہۡبَانِ لَیَاۡکُلُوۡنَ اَمۡوَالَ النَّاسِ بِالۡبَاطِلِ وَیَصُدُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ  وَالَّذِیۡنَ یَکۡنِزُوۡنَ الذَّہَبَ وَالۡفِضَّۃَ وَلَا یُنۡفِقُوۡنَہَا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۙ  فَبَشِّرۡہُمۡ بِعَذَابٍ اَلِیۡمٍ ۙ

যাকাত না দেবার শাস্তি

অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের অনেকে লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে ভোগ করে চলছে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের নিবৃত রাখছে। আর যারা স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর আযাবের সুসংবাদ শুনিয়ে দিন। (আত তাওবাহ্ – ৩৪)

আয়াতে কারীমায় সুসংবাদ কথাটা ব্যঙ্গচ্ছলে বলা হয়েছে । মূলত এটা সুসংবাদ নয় । বরং দুঃসংবাদ । এই যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি কি তা বয়ান করে আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

 

یَّوۡمَ یُحۡمٰی عَلَیۡہَا فِیۡ نَارِ جَہَنَّمَ فَتُکۡوٰی بِہَا جِبَاہُہُمۡ وَجُنُوۡبُہُمۡ وَظُہُوۡرُہُمۡ ؕ ہٰذَا مَا کَنَزۡتُمۡ لِاَنۡفُسِکُمۡ فَذُوۡقُوۡا مَا کُنۡتُمۡ تَکۡنِزُوۡنَ

অনুবাদ: সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার দ্বারা তাদের ললাট, পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশকে দগ্ধ করা হবে (সেদিন বলা হবে), এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা রেখেছিলে, সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখার। (আত তাওবাহ্ – ৩৫)

 

যাকাতের টাকা জমিয়ে রাখার বিধান

 

وَلَا یَحۡسَبَنَّ الَّذِیۡنَ یَبۡخَلُوۡنَ بِمَاۤ اٰتٰہُمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ ہُوَ خَیۡرًا لَّہُمۡ ؕ  بَلۡ ہُوَ شَرٌّ لَّہُمۡ ؕ  سَیُطَوَّقُوۡنَ مَا بَخِلُوۡا بِہٖ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ ؕ  وَلِلّٰہِ مِیۡرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ ؕ  وَاللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ ٪

 

অনুবাদ: আল্লাহ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে এই কার্পন্য তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের পক্ষে একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যাতে তারা কার্পন্য করে সে সমস্ত ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আসমান ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে জানেন। (আল ইমরান – ১৮০)

 

 

যাকাতের শাস্তি সংক্রান্ত হাদীস

 

১ নং হাদীস

 

হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা যাকে ধন সম্পদ দান করেছেন অথচ সে তার যাকাত আদায় করে না কিয়ামত দিবসে তাঁর ওই ধন-সম্পদ লোমহীন একটি বিষাক্ত সাপ হবে । যার (চক্ষুদ্বয়ের উপর ) দুটি কালো বিন্দু থাকবে এবং তার গলায় পেঁচানো হবে । ওই সাপ তাকে দংশন করতে থাকবে আর বলতে থাকবে আমি তোমার ধন সম্পদ । আমি তোমার জমাকৃত ধন-ভান্ডার ( যার যাকাত তুমি আদায় করোনি ।

(সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪০৩)

 

 

২ নং হাদীস

হযরত খালিদ ইবনে আসলাম রদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন একবার আমরা আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু এর সাথে বের হলাম । (পথিমধ্যে) একজন গ্রাম্য লোক তাকে এ আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল । আল্লাহর বাণী- “যারা স্বর্ণ-রুপা জমা করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না” এ সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন । তখন ইবনে ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন যে ব্যক্তি সম্পদ জমা করে রাখে যাকাত আদায় করে না তার জন্য রয়েছে নিশ্চিত ধ্বংস ।

 

 

এটাতো ছিল যাকাত সম্পর্কিত (আয়াত ) নাযিল হওয়ার পূর্বের কথা । এরপর যখন যাকাতের বিধান (আয়াত)নাজিল হলো তখন আল্লাহ তাআলা একে সম্পদের পবিত্রতা লাভের উপায় বানিয়ে দিলেন ।

( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪০১ )

৩ নং হাদীস

হযরত আবু হোরায়রা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । ( হযরত আবু বকর রাদিআল্লাহু এর খেলাফতকালে মুরতাদ লোকদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেন) আল্লাহর কসম যেই ব্যক্তি নামাজ ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে আমি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব ।

 

কেননা যাকাত হলো সম্পদের ওপর আরোপিত হক । আল্লাহর কসম তারা যদি আমাকে একটি বকরীর বাচ্চা ও যাকাত দিতে অস্বীকার করে যা তারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দিত তাহলে যাকাত না দেওয়ার কারণে অবশ্যই আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব ।

 

 

হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বললেন আল্লাহর কসম আল্লাহ তাআলা আবু বকর হৃদয়কে জ্ঞানের দ্বারা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন । সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম যে তার সিদ্ধান্ত সঠিক।

( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৯৯)

 

যাকাতের খাত কয়টি ?

 

যাকাতের খাত ৮ টি । এই ৮ প্রকার লোককে যাকাত দিতে হবে । আল্লাহ তাআলার ঘোষণা-

اِنَّمَا الصَّدَقٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَالۡمَسٰکِیۡنِ وَالۡعٰمِلِیۡنَ عَلَیۡہَا وَالۡمُؤَلَّفَۃِ قُلُوۡبُہُمۡ وَفِی الرِّقَابِ وَالۡغٰرِمِیۡنَ وَفِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَابۡنِ السَّبِیۡلِ ؕ فَرِیۡضَۃً مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَاللّٰہُ عَلِیۡمٌ حَکِیۡمٌ

যাকাতের খাত ৮ টি

অনুবাদ: যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (আত তাওবাহ্ – ৬০)

 

যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত কারা ?

 

১. ফকির

২. মিসকিন

৩. যাকাত বিভাগের কর্মচারী

৪. মুআল্লিফাতুল কুলুব

( ওইসব কাফের যাদের অন্তর জয় করা প্রয়োজন )

৫. দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য ।

৬. ঋণ গ্রস্থদের সাহায্য করা।‌

৭. আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য ।

৮. মুসাফিরদের জন্য ।

( সূরা তাওবা, আয়াত নং ৬০)

 

যাকাত কাদেরকে দেওয়া যাবে না ?

 

১. নিসাবের অধিকারী

২.স্বামী

৩. স্ত্রী

৪.উপার্জনক্ষম ব্যক্তি

৫. পিতামাতা এবং ঊর্ধ্বগামী

৬.সন্তান এবং নিম্নগামী

৭. বনী হাশিম

৮. অমুসলিম

৯.যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব আছে ।

(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম, ৬ খণ্ড ,পৃষ্ঠা ১৯৫ আদ্দুররুল মুখতার,২ খন্ড ৬৪ পৃষ্ঠা )

যাকাত খাওয়ার উপযুক্ত কারা

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত কয়টি ?

 

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত ৭ টি । যথা:

১. মুসলিম হওয়া

২. স্বাধীন হওয়া

৩. বালিগ হওয়া

৪.আকিল বা জ্ঞানবান হওয়া

৫.নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকা

৬. পূর্ণাঙ্গ মালিক হওয়া

৭.পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকা ।

 

 

যে সম্পদের যাকাত নেই

 

১. নেসাবের কম

২.বসবাসের ঘর

৩. গৃহস্থলীর ব্যবহার্য আসবাবপত্র

৪. ব্যবহারের পোশাক

৫. ব্যবহারের গরু, ঘোড়া, গাধা, খচ্চর, হাতি ও মহিষ ইত্যাদি ।

৬.ব্যবহারের যানবাহন (প্রাইভেটকার, মোটর সাইকেল) ইত্যাদি ।

৭.শিল্প-কারখানা যন্ত্রপাতি (মেশিনারি)

৮. কারখানা (বিল্ডিং )

৯.দোকানঘর

১০.ব্যবহারের শিক্ষা উপকরণ বই-খাতা-কলম ইত্যাদি ।

১১. ডিম উৎপাদনের হাঁস ও মুরগি ।

 

 

যাকাতের নেসাব কি ?

 

কারো কাছে যদি উর্ধ্বে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা ঐ পরিমাণ টাকা থাকে আর কারো‌ কাছে যদি সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা কিংবা তৎসম মূল্যের নগদ অর্থ বা ব্যবসায়িক মালামাল থাকে তাহলে তাকে সাহেবে নেসাব বলা হয় ।

নেসাব পরিমাণ (গচ্ছিত )সম্পদের ২.৫০ শতাংশ আল্লাহর নির্ধারিত ৮ টি খাতে যাকাত দিতে হয় ।

( আদ্দুররুল মুখতার, ২ খন্ড ,পৃষ্ঠা নং ৪৩৭)

 

কখন যাকাত ফরজ হয় ?

 

যেকোনো বালেক, বিবেকমান , সাহেবে নেসাব মুসলমানের উপর বছরে একবার যাকাত আদায় করা ফরজ ।

 

 

যাকাতের টাকা মসজিদে দেওয়া যাবে কি ?

 

যাকাতের টাকা দ্বারা হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা বা সেবামূলক যে কোন প্রতিষ্ঠান ভবন নির্মাণ জায়েজ নেই । কেননা যাকাত আদায়ের জন্য শর্ত হলো ফকির, মিসকিনকে অর্থের মালিক বানিয়ে দেওয়া ।

( আদ্দুররুল মুখতার ২ খন্ড ৬৮ পৃষ্ঠা , আহসানুল ফাতাওয়া খন্ড নং ৪ পৃষ্ঠা নং ২৯৯)

 

গুদামে মজুদকৃত সম্পদের যাকাত

 

ব্যবসার উদ্দেশ্যে গুদাম বা দোকানে মজুদকৃত যাবতীয় সম্পদের উপর যাকাত আদায় করতে হবে । এক্ষেত্রে বাজারদর, খুচরা বিক্রয় মূল্য এবং পাইকারি মূল্য এই তিনটির যেকোনো একটি হিসাব করলে চলবে । তবে এক্ষেত্রে খুচরা বিক্রয় মূল্য হিসেব করে যাকাত আদায় করলে সতর্কতা হবে বলে আলেমগণ মতামত ব্যক্ত করেছেন । ( আহসানুল ফাতাওয়া খন্ড ৪ পৃষ্ঠা নং ২৯৯)

 

ব্যাংকে জমা রাখা টাকার যাকাতের হিসাব

 

যে কোন সমিতি ,ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, ব্যাংক-বীমা, ডিপিএস ইত্যাদিতে নিজ বা সন্তানের নামে সঞ্চয়কৃত সকল অর্থের উপর যাকাত আসবে । বছরান্তে সেগুলো হিসাব করে ভ্যালু অনুযায়ী যাকাত পরিশোধ করতে হবে । ( ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া, খন্ড নং ১১)

 

অমুসলিমকে যাকাত দেওয়া যাবে কি ?

 

কোনো অমুসলিমকে যাকাত দেওয়া জায়েজ নেই । তাই কেউ একেবারে গরিব মিসকিন কিংবা অসহায় হলেও তাকে দেওয়া যাবে না । যদি কেউ দিয়ে ফেলে তথাপি তার যাকাত আদায় হবে না বরং পুনরায় যাকাত দিতে হবে ।

( আদ্দুররুল মুখতার খন্ড ২পৃষ্ঠা নং ৬৬ ফাতাওয়া দারুল উলুম খন্ড নং ৬ পৃষ্ঠা নং ২০৪)

 

নাবালেগ সন্তানের নামে টাকা জমা রাখলে করণীয়

 

কোন পিতা তার নাবালেগ সন্তানের নামে ব্যাংক/ ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে টাকা জমা রাখলে পিতার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে ।‌ কেননা সন্তান বালেগ হয়ে টাকাগুলো হস্তগত করার পূর্ব পর্যন্ত পিতাই টাকার মালিক । ( ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া খন্ড নং ১১ পৃষ্ঠা নং ১২৬)

 

হারাম সম্পদের উপর যাকাত

 

চুরি, ছিনতাই ,সুদ, ঘুষ ইত্যাদি হারাম মালের উপর কোন যাকাত নেই ।‌ কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে গুলো জঘন্যতম অপরাধ । প্রকৃত মালিককে এগুলো ফেরত দেওয়া জরুরি । যদি মালিকের সন্ধান না পাওয়া যায় তাহলে মালিকের পক্ষ থেকে গরীবদেরকে সদকা করে দেওয়া ওয়াজিব ।

( আদ্দুররুল মুখতার,খন্ড নং ১ আজিজুল ফাতাওয়া খন্ড ১পৃষ্ঠা নং ৪৩১)

 

বাড়ি বা ফ্ল্যাট এর উপর যাকাত

 

যে সমস্ত বাড়ি শুধু ব্যবসার উদ্দেশ্যে অর্থাৎ ভাড়া ইত্যাদির জন্য নির্মাণ করা বা ক্রয় করা হয়েছে সে সমস্ত বাড়ির আয় এবং মোট (ক্রয় বা নির্মাণ )মূল্যের উপর যাকাত পরিশোধ করতে হবে । পক্ষান্তরে যে সমস্ত বাড়ি বসবাসের উদ্দেশ্যে তৈরি বা ক্রয় করা হয়েছে সে সমস্ত বাড়ির ক্রয় বা নির্মাণ মূল্যের উপর যাকাত আসবে না । তবে নিজে এক ফ্ল্যাটে থেকে বাকি অন্যান্য ফ্লাট যদি ভাড়া দেওয়া হয় তাহলে শুধু ভাড়ার টাকার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়ে যাবে । ( ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম খন্ড নং ৬ পৃষ্ঠা নং ১০ )

 

যেসব মালের যাকাত দিতে হবে

 

১.নগদ অর্থ

২.পশুসম্পদ

৩.সোনা রুপা

৪. ব্যবসায় পণ্য

৫. ফল ফসল

৬.খনিজসম্পদ

৭.মধু

৮. গুপ্তধন

 

 

যাদেরকে যাকাত দেওয়া উত্তম

 

১.দ্বীনি ইলেম পড়নে ওয়ালা এবং পরানে ওয়ালা যদি যাকাতের হকদার হয় তাহলে তাদের যাকাত দেওয়া সবচেয়ে উত্তম হবে ।

২.তারপর যাকাত পাওয়ার যোগ্য নিজের আত্মীয় স্বজনের মধ্যে যারা যাকাত পাওয়ার যোগ্য তারা ।

 

৩.তারপর বন্ধু-বান্ধব প্রতিবেশী মধ্যে যারা যাকাত পাওয়ার যোগ্য তারা ।

৪. তারপর যাকাতের অন্যান্য প্রকার হকদার ।

 

যাকাত দেওয়ার নিয়ম

 

* এক বছর পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে যাকাত আদায় করতে হবে । বিনা ওজরে বিলম্ব করলে পাপ হবে ।

যাকাত আদায় করার সময় নিয়ত থাকতে হবে যে- এ সম্পদ আল্লাহর ওয়াস্তে যাকাত হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে । নতুবা যাকাত আদায় হবে না ।

* নিসাবের মালিক হওয়ার পর বৎসর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই অর্থাৎ যাকাত ফরজ হওয়ার পূর্বে ও অগ্রিম প্রদান করা যায় ।

* যাকাত প্রদানের সময় গ্রহণকারীকে এ কথা জানানো প্রয়োজন নেই যে এটা যাকাতের টাকা । আপনজনকে যাকাত দিলে তাকে এ কথা না বলাই শ্রেয় । কারণ বললে তার খারাপ লাগতে পারে ।

* যাকাত দেয়ার নিয়তে কোন টাকা পৃথক করে রাখলে পরে দেওয়ার সময় যাকাতের নিয়তের কথা মনে না আসলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে ।

 

* যাকে যাকাত দিবে অন্তত এত পরিমান দিবে যেন ওই দিনের খরচের জন্য সে আর অন্যের মুখাপেক্ষী না হয় । কমপক্ষে এত পরিমান দেওয়া মুস্তাহাব । এর চেয়ে কম দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে ।

 

 

* কারো নিকট টাকা পাওনা থাকলে যাকাতের নিয়তে সেই পাওনা মাফ করে দিলে যাকাত আদায় হবে না । বরং তার নিকট যাকাতের টাকা দিয়ে পড়ে তার নিকট থেকে ঋণ পরিশোধ বাবদ সে টাকা নিয়ে নিলে যাকাত আদায় হবে ঋণ ও উসুল হবে ।

* যাকাত ফরজ হওয়ার পর কেউ নিজের সমস্ত মাল দান করে দিলে তার যাকাত মাফ হয়ে যায় ।

* যাকাত দাতার অনুমতি ছাড়া অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে যাকাত দিয়ে দিলে যাকাত আদায় হবে না ।

* যাকাত দাতা কাউকে পুরস্কার বা ঋণের নামে কিছু দিল আর অন্তরে নিয়ত রাখল যাকাত হতে দিলাম তবুও যাকাত আদায় হয়ে যাবে । মুখে যাকাত কথাটা বলার আবশ্যকতা নেই ।

 

পড়ুন – ইতেকাফ করার নিয়ম 

 

যাকাতের মাসআলা

 

* যদি কারো নিকট শুধু সোনা থাকে । রুপা ,টাকা- পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছুই না থাকে । তাহলে সাড়ে সাত তোলা বা তার বেশি সোনা থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরজ হয় ।

* যদি কারো নিকট শুধু রুপা থাকে । সোনা , টাকা- পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছুই না থাকে । তাহলে সাড়ে ৫২ তোলা রুপা থাকলে বৎসরান্তে তার উপর যাকাত ফরজ হয় ।

* যদি কারো নিকট কিছু সোনা থাকে এবং তার সাথে কিছু রুপা বা কিছু টাকা পয়সা বা কিছু ব্যবসায়িক পণ্য থাকে তাহলে এক্ষেত্রে সোনার সাড়ে সাত তোলা, রূপার সাড়ে ৫২ তোলা দেখা হবে না । বরং সোনা রুপা এবং টাকা-পয়সাও ব্যবসায়িক পণ্য যা কিছু আছে সবটাই মিলে যদি সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার যেকোনো একটা মূল্যের পরিমাণ হয়ে যায় তাহলে বছরান্তে তার উপর যাকাত ফরজ হবে ।

* যদি কারো নিকট শুধু টাকা পয়সা থাকে । সোনা, রুপা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছুই না থাকে । তাহলে সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার যেকোনো একটার মূল্যের পরিমাণ টাকা-পয়সা থাকলে বছরান্তে তার উপর যাকাত ফরজ হবে ।

 

 

 

* কারো নিকট সোনা রুপা ও টাকা পয়সা কিছুই নেই । শুধু ব্যবসায়িক পণ্য রয়েছে । তাহলে উপরোক্ত পরিমাণ সোনা বা রুপার যেকোনো একটার মূল্যের পরিমাণ ব্যবসায়িক পণ্য থাকলে বছরান্তে তার উপর যাকাত ফরজ হবে ।

* কারো নিকট সোনা-রুপা নেই । শুধু টাকা পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য রয়েছে । তাহলে টাকা পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য মিলিয়ে যদি উক্ত পরিমাণ সোনা বা রুপার যেকোনো একটার মূল্যের পরিমাণ হয় তাহলে বছরান্তে তার উপর যাকাত ফরজ হবে ।

 

 

যাকাত হিসাব করার তরীকা

 

* যে অর্থ/ সম্পদের যাকাত আসে সে অর্থ/সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত আদায় করা ফরয । মূল্যের আকারে নগদ টাকা দ্বারা বা তা দ্বারা যেকোনো আসবাবপত্র ক্রয় করে তারাও যাকাত দেওয়া যায় ।

* যাকাতের ক্ষেত্রে চান্দ্র মাসের হিসাবে বছর ধরা হবে । যখনই কেউ নেসাব পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক হবে তখন থেকে তার যাকাতের বৎসর শুরু করতে হবে ।

 

 

লিখেছেন: মাওলানা শরিফ আহমাদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Related Articles