রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ। রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ মাওলানা শরিফ আহমাদ
রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ
সুপ্রিয় পাঠক । চলছে ইবাদতের বসন্তকাল মাহে রমজান । প্রতিযোগিতামূলক বিভিন্ন নেক আমলের পাশাপাশি রোজা প্রয়োজন । রোজা সহীহ হওয়ার নীতিমালা ,কবুল হওয়ার পদ্ধতি ও রোজার অন্যান্য জরুরি মাসয়ালা-মাসায়েল জানা অতি জরুরী । তাই আজ আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করব রোজা ভঙ্গের কারণ , রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ ইত্যাদি । পুরো লেখাটি পড়ুন । উপকৃত হবেন । ইনশাআল্লাহ ।
সূচিপত্র
রোজা ভঙ্গের কারণ কি কি ?
রোজা ভঙ্গের বেশ কিছু কারণ রয়েছে । ক্রমিক নং দিয়ে উল্লেখ করছি । আপনাদের বুঝতে সহজ হবে ।
১. রোজার নিয়ত (রাতে )করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলে রোজা ভেঙ্গে যায় ।
২. রোজার নিয়ত করার পরে ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সম্ভোগ করলে রোজা ভেঙ্গে যায় । স্ত্রীর উপরও কাজা কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে । স্ত্রীর যোনির মধ্যে পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগ প্রবেশ করালেই কাযা ও কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে । চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক ।
৩. রোজার নিয়ত করার পর পাপ ( হারাম) হওয়া সত্বেও কোন পুরুষ যদি তার পুরুষাঙ্গ স্ত্রীর পায়খানার রাস্তায় প্রবেশ করায় এবং অগ্রভাগ ভেতরে প্রবেশ করে তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক । তাহলেও পুরুষ স্ত্রী উভয়ের উপর কাজ এবং কাফফারা ওয়াজিব হবে ।
৪. রোজা অবস্থায় কোনো বৈধ কাজ করলো । যেমন স্ত্রীকে চুম্বন দিলো কিংবা মাথায় তেল দিল । তা সত্ত্বেও সে মনে করল যে রোজা নষ্ট হয়ে গিয়েছে । আর তার পরে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার করলো। তাকেও কাজা কাফফারা ওয়াজিব উভয়ই আদায় করতে হবে ।
( আহকামে জিন্দেগী )
বিশেষ দ্রষ্টব্য: উল্লেখিত এসব কারণে কাজা এবং কাফফারা স্বামী-স্ত্রী দুজনের ওপরেই ওয়াজিব হয়ে যাবে । অতএব বিষয়টা ভালো করে বুঝে মাথায় রাখা দরকার । এবার আপনাদের জানাবো রোজা ভঙ্গের আরো অন্য কারণ সমূহ । আলাদা ক্রমিক নাম্বার দিয়ে লিখছি একটা বিশেষ পয়েন্ট বোঝানোর জন্য ।
যে কারণে রোজা কাজা করতে হয়
১. ইচ্ছাকৃতভাবে মুখ ভরে বমি করলে বা অল্প বমি আসার পর তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
২. নাকে বা কানে ওষুধ দিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
৩. কুলি করার সময় অনিচ্ছা বসন্ত কণ্ঠনালীতে পানি চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
৪. স্ত্রী বা কোনো নারীকে শুধু স্পর্শ , চুম্বন প্রভৃতি করার কারণেই বীর্যপাত হয়ে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
৫. এমন কোন জিনিস খেলে যা সাধারণত খাওয়া হয়না যেমন: কাঠ ,লোহা ,কাগজ ,পাথর, মাটি ,কয়লা ইত্যাদি
৬. বিড়ি-সিগারেট বা হুকা সেবন করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
৭. আগরবাতি প্রভৃতির ধোঁয়া ইচ্ছাকৃতভাবে নাকে বা হলকে পৌঁছালে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
৮. ভুলে পানাহার করার পর রোজা ভেঙ্গে গেছে মনে করে আবার ইচ্ছাকৃতভাবে কোনকিছু পানাহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
৯. রাত আছে মনে করে সুবহে সাদিকের পরে সাহরী খেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
১০. ইফতারের সময় হয়নি । দিন রয়ে গেছে । অথচ সময় হয়ে গেছে এই মনে করে ইফতার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
১১. দুপুরের পরে রোজার নিয়ত করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
১২. দাঁত দিয়ে রক্ত বের হলে তা যদি থুথুর চেয়ে পরিমাণে বেশি হয় এবং কণ্ঠনালির নিচে চলে যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
১৩. কেউ জোর পূর্বক রোজাদারের মুখে কোন কিছু দিলে এবং তা কণ্ঠনালীতে পৌঁছে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
১৪. দাঁতে কোন খাদ্য টুকরো আটকে ছিল । সুবহে সাদিকের পর তা যদি পেটে চলে যায় তবে সে টুকরো ছোলা বুটের চেয়ে ছোট হলে রোজা ভেঙ্গে যায় না । তবে এরূপ করা মাকরুহ । কিন্তু মুখ থেকে বের করার পর আবার গিলে ফেললে তা যত ছোটই হোক না কেন রোজা কাজা করতে হবে ।
১৫. হস্তমৈথুন করে যদি বীর্যপাত হয় রোজা ভেঙ্গে যাবে।
১৬. পেশাবের রাস্তায় বা স্ত্রীর যোনিতে কোন ঔষধ প্রবেশ করালে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
১৭. পানি বা তেল দ্বারা ভেজা আঙ্গুল যোনিতে বা পায়খানার রাস্তা প্রবেশ করালে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
১৮. শুকনো আংগুল প্রবেশ করিয়ে পুরোটা বা কিছুটা বের করে আবার প্রবেশ করালে রোজা ভেঙ্গে যাবে । আর যদি শুকনো আংগুল একবার প্রবেশ করিয়ে একবারে পুরোটা বের করে নেয় আবার প্রবেশ না করে তাহলে রোজার অসুবিধা হয় না ।
১৯. মুখে পান রেখে ঘুমিয়ে গেলে এবং এই অবস্থায় সুবহে সাদিক হয়ে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে ।
২০. স্ত্রীর বেহুশ থাকা অবস্থায় কিংবা বেখবর ঘুমন্ত অবস্থায় তার সাথে সহবাস করা হলে স্ত্রীর উপর শুধু কাজা ওয়াজিব হবে ।
২১. রমজান ব্যতীত অন্য নফল রোযা ভঙ্গ হলে শুধু কাজা ওয়াজিব হবে ।
২২. এক দেশে রোজা শুরু করার পর অন্য দেশে চলে গেলে সেখানে যদি নিজের দেশের তুলনায় আগে ঈদ হয়ে যায় তাহলে নিজের দেশের হিসাবে যে কয়টা রোজা বাদ গিয়েছে তার কাযা করতে হবে । আর যদি সেখানে গিয়ে রোজা এক দুটো বেড়ে যায় তাহলে সেই এক-দুটো রোজা রাখতে হবে । (আহকামে জিন্দেগী )
বিশেষ দ্রষ্টব্য: উল্লেখিত এসব কারণে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং শুধু কাযা ওয়াজিব হয়ে যায় । এজন্য সতর্কতার সঙ্গে বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত ।
রোজা মাকরুহ হওয়ার কারণ
এবার আপনাদের জানাবো রোজা মাকরুহ হওয়ার কিছু কারণ । এগুলো করলে রোজা ভেঙ্গে যায় না ।
এগুলো আবার ক্রমিক নং দিয়ে লিখছি । প্রয়োজনে নোট করতে পারেন ।
১. রোজা অবস্থায় বিনা প্রয়োজনে কোন জিনিস চিবানো মাকরুহ ।
২. তরকারি ইত্যাদি লবণ চেখে ফেলে দেওয়া । তবে কোনো চাকরের মুনিব বা কোন নারীর স্বামী বদমেজাজি হলে জিহবার অগ্রভাগ দিয়ে লবণ চেখে তা ফেলে দিলে এতোটুকুর অবকাশ আছে ।
৩. কোন ধরনের মাজন, কয়লা ,গুল, টুথপেস্ট ব্যবহার করা মাকরুহ । আর এর কোন কিছু সামান্য পরিমাণ গলার মধ্যে চলে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে ।
৪. গোসল ফরজ অবস্থায় সারাদিন অতিবাহিত করা মাকরুহ ।
৫. কোন রোগীদের জন্য নিজের রক্ত দেওয়া মাকরুহ।
৬. গীবত করা, চোগলখোরী করা, অনর্থক কথাবার্তা বলা ,মিথ্যা বলা রোজা মাকরুহ হয়ে যায় ।
৭. ঝগড়া ফাসাদ করা গালিগালাজ করা রোজা মাকরুহ করে দেয়
৮. ক্ষুধা বা পিপাসার কারণে অস্থিরতা প্রকাশ করা মাকরুহ
৯. মুখে অধিক পরিমান থুথু একত্র করে গিলে ফেলা মাকরুহ
১০. দাঁতে ছোলা বুটের চেয়ে ছোট কোন বস্তু আটকে থাকলে তা বের করে মুখের ভেতরে থাকা অবস্থায় গিলে ফেলা মাকরুহ ।
১১. নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবে না– এরূপ মনে হওয়া সত্বেও স্ত্রীকে চুম্বন করা ও আলিঙ্গন করা মাকরুহ। নিজের উপর নিয়ন্ত্রণের আস্থা থাকলে ক্ষতি নেই । তবে যুবকদের এমন অবস্থা থেকে দূরে থাকাই শ্রেয় । আর রোযা অবস্থায় স্ত্রীর ঠোঁট মুখে নেওয়া সর্বাবস্থায় মাকরুহ ।
১২. নিজের মুখ দিয়ে চিবিয়ে কোন বস্তু শিশুর মুখে দেওয়া । তবে অনন্যপায় অবস্থায় এরূপ করলে অসুবিধা নেই । ( আহকামে জিন্দেগী )
যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না
প্রিয় পাঠক । এবার আপনাদের জানাবো যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না এবং মাকরূহ ও হয় না তার কথা।
১. মেসওয়াক করা । যেকোনো সময় হোক । কাচা বা শুষ্ক ডালের। রোজা ভাঙবে না । মাকরুহ ও হবে না ।
২. শরীর ,মাথা ,দাড়ি ইত্যাদিতে তেল লাগালে ।
৩. চোখে সুরমা লাগানো বা কোনো ওষুধ দেওয়া ।
৪. খুশবু লাগানো বা তার ঘ্রাণ নেওয়া ।
৫.ভুলে কিছু পান করা বা আহার করা বা স্ত্রী সম্ভোগ করা।
৬. গরম বা পিপাসার কারণে গোসল করা বা বারবার কুলি করা ।
৭. অনিচ্ছাবশত গলার মধ্যে ধোয়া, ধুলোবালি বা মাছি ইত্যাদি প্রবেশ করলে ।
৮. কানে পানি দেয়া বা অনিচ্ছাবশত চলে যাওয়ার কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না । তবে ইচ্ছাকৃত দিলে সতর্কতাঃ হল সে রোজা কাজা করে নেওয়া ।
৯. অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হওয়া । ইচ্ছাকৃতভাবে অল্প বমি করলে মাকরুহ হয় না । তবে এরূপ করা ঠিক নয় ।
১০. স্বপ্নদোষ হওয়া ।
১১. মুখে থুতু আসলে গিলে ফেলা ।
১২. যেকোনো ধরনের ইনজেকশন বা টিকা লাগানো । তবে রোজার কষ্ট যেন না হয় এই উদ্দেশ্যে শক্তির ইনজেকশন বা স্যালাইন লাগানো মাকরুহ ।
১৩. রোজা অবস্থায় দাঁত উঠলে এবং রক্ত পেটে না গেলে ।
১৪. পাইরিয়া রোগের কারণে যে সামান্য রক্ত সব সময় বের হতে থাকে এবং গলার মধ্যে যায় তার কারণে।
১৫. সাপ ইত্যাদি দংশন করলে ।
১৬. পান খাওয়ার পর ভালোভাবে কুলি করা সত্ত্বেও যদি লালাভাব থেকে যায় ।
১৭. উত্তেজনার সাথে শুধু নজর দেওয়ার কারণে যদি বীর্যপাত ঘটে যায় তাহলে রোজা ফাসেদ হয় না
১৮. রোজা অবস্থায় শরীর থেকে ইনজেকশনের সাহায্যে রক্ত বের করলে রোজা ভাঙে না এবং এতে রোজা রাখার শক্তি চলে যাওয়ার মত দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকলে রোজা মাকরূহও না ।
( আহকামে জিন্দেগী )
পড়ুন – লা তাহযানা বই পিডিএফ । হতাশ হবেন না বই
শেষ কথাঃ
প্রিয় পাঠক জীবন ঘনিষ্ঠ আরো যত প্রশ্ন আছে আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন । আমরা দ্রুত জবাব দেবো ইনশাআল্লাহ । যেখানে থাকুন ভালো থাকুন দৈনিক শিক্ষা নিউজের সঙ্গে থাকুন ।
লিখনে মাওলানা শরিফ আহমাদ
ঢাকা, বাংলাদেশ।
ট্যাগঃ রোজা ভঙ্গের কারণ , রোজা ভঙ্গের কারণ , রোজা ভঙ্গের কারণ , রোজা ভঙ্গের কারণ , রোজা ভঙ্গের কারণ , রোজা ভঙ্গের কারণ ,রোজা ভঙ্গের কারণ ,