ধর্ম

কার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব মাওলানা শরিফ আহমাদ

কার উপর কোরবানী ওয়াজিব

 

সুপ্রিয় পাঠক! চলছে জিলকদ মাস । এ মাস শেষে শুরু হবে জিলহজ্ব । জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে হচ্ছে ঈদুল আযহা অর্থাৎ কুরবানীর ঈদ । কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত । কুরবানীর দিনে আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় হলো কুরবানীর আমল । তাই সঙ্গত কারণেই এখন প্রশ্ন উঠছে কার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব আর কার উপর ওয়াজিব নয় । কে কার সঙ্গে এবার কুরবানী দিবে ,কার সঙ্গে কোরবানির দিবে না ৷ এ নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় উঠছে । উক্ত বিষয়ে অনেকের পর্যাপ্ত জ্ঞান না থাকায় অনেকে কুরবানী না করার সুযোগ খুঁজছে । তাই আজ আপনাদের সঠিক তথ্য গুলো জানানোর লক্ষেই দৈনিক শিক্ষা নিউজের পক্ষ থেকে আজকের এই বিশেষ আয়োজন। পুরো লেখাটি পড়ুন । উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ ।

 

কোরবানী অর্থ কি ?

 

কোরবানী একটি আরবী শব্দ । শব্দটির অর্থ হলো নৈকট্য লাভ করা, নিকটতর হওয়া ইত্যাদি ‌।

কার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব

কোরবানী কাকে বলে ?

 

শরীয়তের পরিভাষায় কোরবানী বলা হয় নির্দিষ্ট মাসে, নির্দিষ্ট দিনে ও নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জন্তুকে আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে জবাই করাকে।

আরও পড়ুনঃ ঈদুল আজহার নামাজ পড়ার নিয়ম

 

কার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব

কার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব
কার উপর কোরবানী করা ওয়াজিব

নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক প্রাপ্তবয়স্ক ,সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন , মুকীম ( মুসাফির নয় এমন ) নর-নারীর উপর কুরবানী করা ওয়াজিব ।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

يا ايها الناس على كل اهل بيت في كل عام اضحية

অনুবাদঃ হে লোকসকল ! জেনে রেখো প্রত্যেক পরিবারের পক্ষে প্রতিবছরই কোরবানী ওয়াজিব ।

( সুনানে আবু দাউদ, কুরবানী অধ্যায় )

 

কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্ত

 

১০ ই জিলহজ্জের ফজর থেকে ১২ ই জিলহজ্জের সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্থাৎ কুরবানীর দিন গুলোতে যার নিকট সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ অর্থ সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব ।

সহজ কথায় যে ব্যক্তির কাছে জিলহজ্ব মাসের দশ এগার ও বারো তারিখের সূর্য অস্ত যাবার আগ পর্যন্ত প্রয়োজন অতিরিক্ত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা বা এর সমমূল্য কিংবা সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা এর সমমূল্য পরিমাণ সম্পদ থাকে, এবং তা ঋণ বহির্ভূত হয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব ।

আর যদি সোনা বা রুপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নিসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্য সমপরিমাণ হয় তাহলেও কুরবানী করা ওয়াজিব । (ফাতাওয়া তাতারখানিয়া: ১৭/৪০৫)

 

 

কুরবানীর মাসআলা-মাসায়েল

কোরবানীর মাসআলা মাসায়েল
কোরবানীর মাসআলা মাসায়েল
  • * মুসাফিরের উপর (সফরের হালাতে থাকলে) কুরবানী করা ওয়াজিব নয় ।‌
  • * কুরবানী ওয়াজিব না হলে ও নফল কোরবানী করলে কোরবানির সওয়াব পাওয়া যাবে
  • * কোরবানির শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় । সন্তানাদি, পিতা-মাতা ও স্ত্রীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় না । তবে তাদের পক্ষ থেকে করলে তা নফল কোরবানী হবে ।‌
  • * যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করলে সেই পশু কুরবানী করা তার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায় ।
  • * কোন মাকসুদের জন্য কুরবানীর মানত করলে সে মাকসুদ পূর্ণ হলে তার ওপর (গরীব হোক বা ধনী) কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়
  • *যার উপর কুরবানী ওয়াজিব সে কুরবানী না করলে কুরবানীর দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটা বকরির মূল্য সদকা করা ওয়াজিব । (আহকামে জিন্দেগী)

আরও পড়ুনঃ রেজুলেশন লেখার নিয়ম

কোরবানী না করার শাস্তি

 

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত । সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর কুরবানী আদায় করা ওয়াজিব । পূর্বে আপনারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের কথা জেনেছেন । মাত্র ৫৫/৬০ হাজার টাকা থাকলেও তো কুরবানী ওয়াজিব হয় । এখন এই সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি কুরবানী না করে তাহলে ওয়াজিব তরক করার গুনাহ হবে । আর হাদীসে তো সুস্পষ্টভাবে এসেছে সামর্থ থাকা সত্বেও কুরবানী না করা ব্যক্তিদের উপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন‌।

قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من كان له سة ولم يضح فلا يقربن مصلانا

অনুবাদ: নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে । ( সুনানে ইবনে মাজাহ ,মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং৩৫১৯ )

শেষ কথাঃ

সুপ্রিয় পাঠক! আমাদের প্রকাশিত লেখা গুলো আপনাদের ভাল লাগলে কমেন্ট করে ৷ শেয়ার করে আমাদের সাথেই থাকুন ৷ সামনে আরো কি ধরনের লেখা চান তাও কমেন্টে জানান ৷ ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হতে ক্লিক করুন আজকের মত এখানেই শেষ আল্লাহাফেজ

লিখেছেন: মাওলানা শরিফ আহমাদ

ঢাকা ,বাংলাদেশ ।

Related Articles