ধর্মসাহিত্য

শবে মেরাজের ছড়া কবিতা

শবে মেরাজের ছড়া কবিতা

 

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ ! এই তো শবে মেরাজ ২০২২ চলে এসেছে ।‌ ২৮ ফেব্রুয়ারি সোমবার দিবাগত রাত । দেশ-বিদেশে উঠেছে মেরাজের আলোচনা ।‌ আলোচনার ঝড়েই হয়তো আজ আপনারা শবে মেরাজের ছড়া কবিতা সার্চ করেছেন । হ্যাঁ আজ আপনাদের লাইলাতুল মেরাজের একগুচ্ছ ছড়া কবিতা উপহার দেবো । তার আগে সংক্ষিপ্ত কয়েকটি কথা ।

 

মেরাজ বিশ্ব নবীর জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । মেরাজের ঘটনা পবিত্র কুরআনের সূরা বনী ইসরাঈলের প্রথম আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে । হাদীসের মধ্যেও মেরাজের একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায় । মেরাজ কবে সংঘটিত হয়েছিল এটা নিয়ে বিভিন্ন ইখতেলাফ থাকলেও প্রসিদ্ধ মত হচ্ছে রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত । এবার জানুন হাদীসের আলোকে মেরাজের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা । এই কথাগুলো জানা থাকলে ছড়া-কবিতার প্রেক্ষাপট বোঝা সহজ হবে ইনশাআল্লাহ ।

 

একরাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত উম্মে হানী রাদিআল্লাহু আনহার ঘরে শুয়ে ছিলেন ।‌ রাসুলের অর্ধনিদ্রা অবস্থায় হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম অন্যান্য ফেরেশতাসহ অবতরণ করেন ।‌ এবং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে হারামে নিয়ে যান । নবীজি তখন হাতিমে কাবায় ঘুমিয়ে পড়েন ।‌

 

হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম ও‌ মিকাঈল‌ আলাইহিস সালাম নবীজিকে জাগিয়ে জমজমের পাশে নিয়ে সিনা মোবারক বিদীর্ণ করে অন্তরাত্মা বের করে জমজমের পানি দিয়ে ধুয়ে ইলেম ও হেকমতে পরিপূর্ণ করে স্বর্ণের পাত্রে রাখেন । অতঃপর পুনরায় বক্ষে স্থাপন করে দেন । এরপর বোরাক নামক বাহনে করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত নিয়ে যান । তারপর সেখান থেকে আসমানে নিয়ে যান ।

 

প্রথম আসমানের নিকট গিয়ে হযরত জিবরাইল আলাইহিস সালাম দরজা খোলা আবেদন জানান । ফেরেশতাগণ অভিবাদন জানিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বরণ করে নেন । এভাবে সপ্তম আসমান অতিক্রম করেন ।

 

এ সময়ে যথাক্রমে প্রথম আসমানে হযরত আদম আলাইহিস সালাম, দ্বিতীয় আসমানে হযরত ইয়াহইয়া আলাইহিস সালাম ,ও হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম ,চতুর্থ আসমানে হযরত ইদ্রিস আলাইহিস সালাম ,পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন আলাইহিস সালাম , ষষ্ঠ আসমানে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ,সপ্ত আসমানে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় ।

 

সকলেই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লামকে অভ্যর্থনা জানান । সপ্তম আকাশ থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রফরফ নামক বাহন এর মাধ্যমে সিদরাতুল মুনতাহা গমন করেন ‌।

 

সেখানে অনেক আশ্চর্য ও বিস্ময়কর জিনিস প্রত্যক্ষ করেন । জান্নাত জাহান্নাম স্বচক্ষে দেখেন । পরিশেষে আল্লাহর দীদার ও কালাম লাভে ধন্য হন । এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে উপঢৌকন স্বরুপ ৫০ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নিয়ে জমিনের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন । পথিমধ্যে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের পরামর্শক্রমে ৯ বার আল্লাহর নিকট গিয়ে নামাজের সংখ্যা কমানোর আবেদন করেন । অবশেষে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ( যাতে ৫০ ওয়াক্ত নামাজের সওয়াব পাওয়া যাবে ) এর বিধান নিয়ে বাইতুল মোকাদ্দাস হয় মক্কায় ফিরে আসেন । (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৩৮৮৭, ফাতহুলবারী ৭/২৫০,২৫৯, শরহে যুরকানী ৮/৪২, সীরাতে ইবনে হিশাম ২/১০, খাসায়েসুল কুবরা ১/১৫২)

 

মেরাজের রাত্রে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর উম্মতকে তিনটি জিনিস হাদিয়া দেওয়া হয়।

আপনারা পড়ছেনঃ শবে মেরাজের ছড়া কবিতা

👉এই উম্মতের যে কোন ব্যক্তি শিরক মুক্ত ঈমান নিয়ে আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হবে আল্লাহ তাআলা তাকে চিরকাল আজাব দিবেন না । বরং তাকে একদিন অবশ্যই স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং চিরকালের জন্য আরামে রাখবেন ।

👉 পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ । যে ব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজকে গুরুত্ব সহকারে আদায় করবে আল্লাহ তাআলা তাকে ৫০ ওয়াক্তের সওয়াব দিবেন ।‌ এবং নিজ দায়িত্বে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন ।

 

👉 সুরা বাকারার শেষ আয়াতসমূহ । যার মধ্যে এই উম্মতের প্রতি আল্লাহর পরিপূর্ণ রহমত, মাগফিরাত, দয়া ও অনুগ্রহ এবং কাফেরদের মোকাবেলায় সাহায্য প্রতিশ্রুতি রয়েছে ।‌ তাছাড়া এ আয়াতসমূহ রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে পড়লে তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যায় । অর্থাৎ তাহাজ্জুদের সাওয়াব সহ সমস্ত বিপদ আপদ থেকে সে ব্যাক্তি হেফাজতে থাকে ।

 

সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরী যে প্রাথমিকভাবে এ তিনটি বিষয়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া । এবং সঠিক ও সুন্দর ভাবে তা হাসিল করা । সাথে সাথে দীনের অন্যান্য বিষয়ে অর্জনে সচেষ্ট হওয়া।

 

বিশেষ করে দীনের যে পাঁচটি বিষয়ের ইলম অর্জনকে ফরযে আইন ঘোষণা করা হয়েছে তা অবশ্যই হাসিল করা। (সূরা বাকারাঃ ১৭৭, মুসলিম হাদীস নং ২৮৯)

 

এবার কয়েকটি ছড়া-কবিতা পড়ুন । আশা করি ভালো লাগবে ।

 

 

 

ইতিহাসের বাঁকে

শরিফ আহমাদ

 

নবীর মনে দুঃখ জমা

চলে গেছেন প্রিয়তমা

চাচা গেলেন আরো,

সাপোর্ট ছাড়া এই জীবনে

সুখ আসে না কারো ।

 

দীনের প্রচার করতে নবী

সুষ্ঠ সমাজ গড়তে নবী

যান তায়েফে চলে,

এক আল্লাহর কথা বলেন

হেকমত ও কৌশলে ।

 

কিন্তু ওরা জালেম ছিল

কেউ তাওরাতের আলেম ছিল

মানলো না তার কথা,

উল্টো গায়ে আঘাত করে

দেয় নবীকে ব্যথা ।

 

নবীর দুঃখ মুছে দিতে

সুখের দুয়ার ঘুচে দিতে

আল্লাহ ডাকেন তাকে,

মেরাজ রাতের কত স্মৃতি

ইতিহাসের বাঁকে ।

 

( এই ছড়াটি মেরাজ হওয়ার প্রেক্ষাপট নিয়ে লেখা । নবীজির সহধর্মিনী হযরত খাদিজা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহা ও চাচা আবু তালেবের ইন্তেকাল তিনি ব্যথিত হয়ে পড়েন । ইতিহাসে সে বছরকে আমুল হুজুন বলা হয় । আবার তায়েফের দুষ্টু লোকেরা তাকে রক্তাক্ত করে দেয়। কষ্টের পাহাড়কে লাঘব করার জন্যই এই মেরাজ )

 

যাত্রা শুরুর গল্প

শরিফ আহমাদ

 

নবী ছিলেন উম্মে হানীর ঘরে

দুই ফেরেশতা এলো হঠাৎ করে

কূপের কাছে নিয়ে দিলেন শুয়ে

কলবকে ফিট করে দিলেন ধুয়ে।

 

বোরাক প্রাণী সামনে হলো আনা

ঠিক নবীজি সফর করেন টানা

চলার পথে দেখেন কতো দৃশ্য

ঘুমের কোলে ছিলো তখন বিশ্ব ।

 

বৃদ্ধা সেজে এই দুনিয়া ডাকে

বৃদ্ধ হয়ে শয়তান পিছে থাকে

নবী যখন সামনে আরো গেলেন

সম্মিলিত একটি সালাম পেলেন ।

 

( দুনিয়া এবং শয়তান সুরত বদলে নবীজিকে ডেকেছিল । হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম , হযরত মূসা আলাইহিস সালাম, হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম নবীজীকে সম্মিলিতভাবে সালাম প্রদান করেন । এ রাতে তিনি মূসা আলাইহিস সালামকে কবরে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে দেখেছেন )

 

নবীর দেখা শাস্তি

শরিফ আহমাদ

 

জিবরাঈলের কথায় নবী

সামনে গেলেন যখন

তামার নখের কজন মানুষ

সামনে এলো তখন ।

 

নিজের মুখে আঘাত করে

ঝরায় তারা রক্ত

সেই ভয়ানক দৃশ্য দেখে

টিকে থাকা শক্ত ।

 

দয়ার নবী প্রশ্ন করেন

এই মানুষজন কারা

সফরসঙ্গী জবাব দিলেন

গীবতকারী তারা ।

 

সামনে গিয়ে দেখেন একজন

রক্ত সাগর মাঝে

বিশাল বড় পাথর নিয়ে

ব্যস্ত খাওয়ার কাজে ।

 

দয়ার নবী প্রশ্ন করেন

কেন এমন সাজা

সফরসঙ্গী জবাব দিলেন

সুদ খেত সে তাজা ।

 

আর কিছুদূর গিয়ে দেখেন

একটি বড় পাথর

অপরাধীর মাথা ফাটায়

সে বেদনায় কাতর ।

 

শাস্তি কারণ জানতে নবী

প্রশ্ন করেন মেলা

সফরসঙ্গী জবাব দিলেন

নামাজ অবহেলা ।

 

আরো দেখেন‌ পচা-ভালো

খাবার রাখা পাত্রে

কিন্তু মানুষ ভালো রেখে

পচা বেড়ায় হাতরে ।

 

দয়ার‌ নবী প্রশ্ন করেন

এমন হওয়ার কারণ

জবাব এলো অবৈধ প্রেম

শুনতো না কেউ বারণ ।‌

 

সামনে দেখেন চুলার ভেতর

অনেক পুরুষ নারী

বিচ্ছু তাদের দিচ্ছে কামড়

করছে আহাজারি ।

 

আবার নবী প্রশ্ন করেন ‌

এমন কিসের জন্য

জবাব এলো ওরা ছিল

ব্যাভিচারে-বন্য ।

 

সামনে দেখে এক মুরব্বী‌

মাথায় তোলে বোঝা

ফের নামিয়ে লাকড়ি কুড়ায় ‌

বুদ্ধি ছেড়ে সোজা ।

 

এমন করার কারণটা কি

জিজ্ঞেস করেন তিনি

লোকটা বাড়ায় ঋণের বোঝা

সবার কাছে ঋণী ।

 

শেষ মুহূর্তে দেখেন‌ কারো

জিব্বা হচ্ছে কাটা

ওই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে

আতকে ওঠে গাটা ।

 

আবার নবী প্রশ্ন করেন

কেন এমন শাস্তি

জবাব এলো জ্ঞান বিলিয়ে

করতো নিজে মাস্তি ।

 

এমন অনেক দৃশ্য দেখে

মাকদিসে যান চলে

সকল নবী-রাসুল এলেন

ঠিক মুজেজা বলে ।

 

( যাত্রাপথে নবীজির দেখা জাহান্নামিদের শাস্তির বর্ণনা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে । পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া সম্ভব হয়নি । এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী । বিস্তারিত জানার জন্য কিতাবপত্র খুলে দেখার অনুরোধ রইল )

আরও পড়ুনঃ শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

 

শ্রেষ্ঠ নবী

শরিফ আহমাদ

 

আজ মুকাদ্দাস ধন্য হলো

আবার কেবলা গণ্য হলো

নবী-রাসূল আসায়,

বুকের সাথে বুক মিলানো

সবাই ভালোবাসায় ।

 

একটি প্রশ্ন মনে সবার

কার যে নসীব ইমাম হবার

কে পড়াবে নামাজ?

নূর নবীজি নামাজ পড়ান

শ্রেষ্ঠ হওয়া কাম আজ ।

 

সেখান থেকে একে একে

সাতটা আকাশ নিচে রেখে

আরশে যান নবী,

মাওলাপাকের সঙ্গে আঁকেন

অপূর্ব প্রেম ছবি ।

 

প্রভুর সাথে সময় দিয়ে

তিন উপহার সঙ্গে নিয়ে ‌

আবার আসেন ফিরে,

কত আয়াত হাদীস লেখা

শবে মেরাজ ঘিরে ।

 

( তিনটি উপহার এই নামাজ, সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত , মুশরিক ছাড়া সবাইকে সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা )

 

আরো পড়ুন – একুশে ফেব্রুয়ারীরর ছড়া 

নবীর মেরাজ

শরিফ আহমাদ

 

রাতের বেলা সবাই যখন

বিভোর ঘুমের মাঝে

উম্মে হানির ঘরে নবী

শুয়ে নিজের সাজে

হঠাৎ করে দুই ফেরেশতা

এলো যেন লাজে ।

 

তাকে নিয়ে গেলেন তারা

জমজম কুপের কাছে

বুক করে দেন অপারেশন

যেমন হুকুম আছে

বোরাকের পিঠজুড়ে নবী

আর ফেরেশতা পাছে।

 

বোরাক ছিল বিশেষ বাহন

কি যে ছিল গতি

প্রথম কেবলা পৌঁছে যেতে

হলো না ক্লেশ- ক্ষতি

মানলো সকল নবী রাসুল

নবীর ইমামতি ।

সপ্ত আকাশ পাড়ি দিয়ে

সামনে গেলেন একা

আরশে আজীম পৌঁছে প্রভুর

সঙ্গে করেন দেখা

তিন উপহার নিয়ে আসেন

সব কিতাবে লেখা ।

 

নবীর মেরাজ বিশ্বাস করা

ঈমানের এক অংশ

সন্দেহ-বীজ বপন করে

নাস্তিকদের ঐ বংশ

নাম-নিশানা মুছে তাদের

তারাই হবে ধ্বংস।

 

( এই ছড়ায় সংক্ষেপে মেরাজের ঘটনাটি আনা হয়েছে ।‌ লেখাগুলো ভালো লাগলে শেয়ার করুন। কমেন্ট করে উৎসাহিত করুন‌ আরো ভালো কিছু উপহার দেওয়ার জন্য । জাযাকাল্লাহ ।)

 

Related Articles