রোজার নিয়ত মাওলানা শরিফ আহমাদ
রোজার নিয়ত জরুরী মাসায়েল
সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা । চলছে মাহে রমজান । মাহে রমজানের প্রধান ইবাদত হলো রোজা । রোজা কমবেশি সকলেই রাখেন। কিন্তু রোজার নিয়ত কিংবা রোজা সংক্রান্ত জরুরী বিধানগুলো অনেকেই জানেন না ।
সচেতন মুসলিম-মুসলিমা হিসেবে এগুলো জেনে রাখা আবশ্যক । এ বিষয়ে অত্র সাইটে নিয়মিত কাজ করা হচ্ছে । একটু ঘুরে আসলে সেটা বুঝতে পারবেন । এবার আসি কাজের কথায় ।
আজ আমি আপনাদের সঙ্গে রোজার নিয়ত সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করবো । লেখাটি পাঠ করলে রোজার নিয়ত সংক্রান্ত আর কোন প্রশ্ন আপনাদের মনে থাকবে না ইনশাআল্লাহ । সুতরাং পড়তে থাকুন ।
সূচিপত্র
রোজার পরিচয়
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার ও যৌন তৃপ্তি থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলা হয় । প্রত্যেক আকেল (বোধসম্পন্ন), বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) ও সুস্থ নর-নারীর উপর রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ ।
রোজার নিয়ত করা কি ফরজ ?
জী । রমজানের রোজার জন্য নিয়ত করা ফরয । নিয়ত ব্যতীত সারাদিন পানাহার ও যৌন তৃপ্তি থেকে বিরত থাকলেও রোজা হবে না ।
মুখে নিয়ত করা জরুরী নয় । অন্তরে নিয়ত করলেই যথেষ্ট হয়ে যাবে । তবে মুখে নিয়ত করা উত্তম এই মর্মে যে তাতে মনের খটকা দূর হয়ে যায় । প্রশান্তি লাভ হয় ।
রোজার নিয়ত কখন করতে হয় ?
রমজানের রোজার নিয়ত সাহরী খেয়ে রাতেই করে নেওয়া উত্তম । তবে দুপুরে সূর্য ঢলার দেড় ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত রমজানের রোজার নিয়ত করা দুরস্ত আছে ।
রমজান মাসে অন্য যেকোন প্রকার রোজা বা কাজা রোজার নিয়ত করলেও এই রমজানের রোজা আদায় হবে । অন্য যে রোজার নিয়ত করবে সেটা আদায় হবে না ।
রাতে নিয়ত করার পরেও সুবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত পানাহার ও যৌন কর্ম জায়েজ আছে । নিয়ত করার সঙ্গে সঙ্গে রোজা শুরু হয়ে যায় না বরং রোজা শুরু হয় সুবহে সাদেক থেকে ।
রোজার নিয়ত সংক্রান্ত মাসায়েল
কাযা রোজার জন্য সুবহে সাদেকের পূর্বেই নিয়ত করতে হবে । অন্যথায় কাযা রোজা সহীহ হবে না । সুবহে সাদেকের পর নিয়ত করলে সে রোজা নফল হয়ে যাবে ।
বেলা দ্বিপ্রহরের এক ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত নফল রোজার নিয়ত করাও দুরস্ত আছে ।
ঘটনাক্রমে একাধিক রমজানের কাযা একত্র হয়ে গেলে নির্দিষ্ট করে নিয়ত করতে হবে যে, আজ অমুক বৎসরের রমজানের রোজা আদায় করছি ।
যে কয়টি রোজা কাযা হয়েছে তা একাধারে রাখা মুস্তাহাব । বিভিন্ন সময়ে রাখাও দুরস্ত আছে ।
কাযা শেষ করার পূর্বেই নতুন রমজান এসে গেলে তখন ঐ রমজানের রোজাই রাখতে হবে । কাযা পরে আদায় করে নিতে হবে ।
রোজার নিয়ত আরবী
রোজার আরবী নিয়ত মূলত দুই ভাবে করা যায় ।
একটি সংক্ষেপে । আরেকটি বড় করে ।
সংক্ষেপে এভাবে-
نويت بصوم اليوم
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু বিসওমিল ইয়ুম ।
বাংলায় এভাবে নিয়ত করতে পারেন- আমি আজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম ।
বড় এই নিয়তটি সমাজে প্রসিদ্ধ । আর নিয়তটি হচ্ছে এভাবে-
نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان المبارك
فرضا لك يالله فتقبل مني انك انت السميع العليم.
রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণ
নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রামাদ্বনাল মুবারাকি ফারদ্বাল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বাববাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম ।
রোজার নিয়তের অর্থ:
হে আল্লাহ । আপনার সন্তুষ্টির জন্য আগামীকালের রমজানের ফরজ রোজা রাখার নিয়ত করছি । আমার তরফ থেকে আপনি তা কবুল করুন । নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাত ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আবারো আপনাদের স্মরণ করে দিচ্ছি আরবীতে রোজার নিয়ত করা জরুরি কোনো বিষয় নয় । সহীহ শুদ্ধ করে বলতে পারলে ভালো । আর না পারলে অনর্থক চেষ্টা করার দরকার নেই । কেননা আরবীতে সামান্য ভুল হলে অর্থ বিকৃতি হয়ে যায় । এজন্য বাংলাভাষী ভাই-বোনেরা নিজেদের মতো করে রোজার নিয়ত করতে পারেন । একান্ত কেউ না পারলে উপরে উল্লেখিত বাংলা গুলো থেকে ধারণা নিতে পারেন ।
পড়ুন –
রমজানের সময়সূচি ২০২২
শেষকথাঃ
প্রিয় দ্বীনি ভাই বোনেরা । জীবনঘনিষ্ঠ যেকোন প্রশ্ন উত্তর জানতে কমেন্ট করুন । দ্রুত জবাব দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ । ভালো থাকুন । সুস্থ ও সুন্দর থাকুন । দৈনিক শিক্ষা নিউজের সঙ্গে থাকুন । আজ এ পর্যন্তই । আল্লাহ হাফেজ ।
লিখনে: মাওলানা শরিফ আহমাদ
ঢাকা, বাংলাদেশ ।