স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য
প্রিয় পাঠকবৃন্দ ।
বছর ঘুরে আবার এলো ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। প্রতিবছর ঐ দিনটি এলেই আনন্দের ঢেউ খেলে যায় দেশের শহর-গ্রামে । বেজে উঠে বিজয়ের গান । শোনা যায় স্বাধীনতা দিবসের অজানা গল্প কথা । স্বাধীনতার আনন্দে দেশজুড়ে বিভিন্ন সংগঠন থেকে করা হয় আলোচনা সভা,শহীদ স্মরণে দোয়া মাহফিল , মিডিয়া আয়োজন করে বিশেষ প্রতিবেদন বা টকশোর , স্কুল-কলেজ কেন্দ্রিক প্রতিষ্টান থেকে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ইত্যাদি ।
মোটকথা সবাই সবার নির্ধারিত স্থান থেকে দিবসটি উদযাপন করার চেষ্টা করেন । তো আপনারা যদি কোন প্রোগ্রামে আমন্ত্রণ পান অথবা নিজে হাজির হন আর আপনাদের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য দিতে বলা হয় তখন আপনারা কিভাবে বক্তব্য দিবেন তার কিছু কলাকৌশল , বক্তব্যের নমুনা উল্লেখ করছি । আপনারা ইচ্ছা করলে এভাবে বক্তব্য দিতে পারবেন কিংবা এটা থেকে ধারণা নিয়ে নিজের মতো করে দিতে পারবেন । তবে বক্তৃতার তো নানা প্রকারভেদ আছে। আপনারা কোন অনুষ্ঠানে গিয়ে কোন প্রকার বক্তব্য দিবেন সেটা সিদ্ধান্ত আপনাদের । আমি অত্যন্ত সংক্ষেপে দুটি পয়েন্ট বর্ণনা করছি । পুরো লেখাটি পড়তে থাকুন । উপকৃত হবেন নিশ্চিত ।
সূচিপত্র
বক্তৃতা কত প্রকার ও কি কি ?
উদ্দেশ্য আয়োজন ,পরিবেশ ও পদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে বক্তৃতাকে সাধারণত তিন ভাগ করা হয়েছে ।
১. জনসভা ও পথ সভায় বক্তৃতা ।
এই ধরনের বক্তৃতা মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মাঠে ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ।
২. সাধারণ সভা ও আলোচনা সভায় বক্তৃতা ।
এই বক্তৃতা রাজনৈতিক, আদর্শিক বা অন্য যেকোনো কারণে অনুষ্ঠিত হতে পারে তবে তা ব্যাপক আকারে উন্মুক্ত নয় বরং সীমিত পরিসরে ।
৩. বিতর্কসভা বা প্রতিযোগিতা মূলক বক্তৃতা ।
এই তিন প্রকারের বাইরে আরও অনেক ধরনের বক্তব্য/ বক্তৃতা রয়েছে । ( সেটা আরেকদিন অন্য টপিকে জানানো হবে ইনশাআল্লাহ )
১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বক্তব্য
উপস্থিত বক্তৃতার প্রস্তিতের নিয়ম
সময় ও প্রস্তুতির দিক থেকে বক্তৃতা দুই ধরনের
১. উপস্থিত বা তাৎক্ষণিক বক্তৃতা ।
২.পূর্বনির্ধারিত বক্তৃতা ।
পূর্বনির্ধারিত বক্তৃতার ক্ষেত্রে প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ থাকলেও উপস্থিত বক্তৃতার ক্ষেত্রে সে সুযোগ পাওয়া যায় না । তাই আপনাদের নাম ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেমিনারে উঠে যাবেন । নিজের কথাকে দ্রুতগতিতে গুছিয়ে সংক্ষেপে বলা আরম্ভ করবেন । তবে এই অবস্থায় আপনাদের জন্য পাঁচটি পরামর্শ থাকবে । এগুলো ফলো করলে আপনারা সর্বক্ষেত্রে প্রশংসিত হবেন নিশ্চিত ।
পড়ুন – স্বাধীনতা দিবসের ছড়া কবিত
১. আপনাদের পূর্ববর্তী বক্তা যা বলেছেন তার জের টেনে উদাহরণ রাখতে পারেন ।
২. শ্রোতাদের উপলক্ষ করে সামান্য প্রশংসা করতে পারেন।
৩. আপনাদের নাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধি খাটিয়ে দেখে নিবেন কী উদ্দেশ্যে কি কথা হচ্ছে সেমিনারে, সেই ভিত্তিতে আপনি একটু কথা বলতে পারেন ।
৪. উপস্থিত অবস্থায় যতটুকু পারেন সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা হলেও রাখবেন । এতে আপনাদের মান বাড়বে ।
৫. অনুষ্ঠান আয়োজন উদ্যোক্তা গ্রহণের জন্য উদ্যোক্তাগণকে ধন্যবাদ দিতে ভুলবেন না । তাদের উদ্দেশ্যে মোবারকবাদ জানাবেন । আর হ্যাঁ অবশ্যই প্রথমে শুদ্ধ ও স্পষ্ট আওয়াজে সালাম দিয়ে নিবেন ।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে উপস্থিত বক্তব্য
আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ ।
আজ ২৬ শে মার্চ । সুমহান স্বাধীনতা দিবস । ঐতিহাসিক এদিনে আয়োজিত আলোচনা সভার সম্মানিত সভাপতি , মাননীয় প্রধান অতিথি ,উপস্থিত সচেতন শ্রোতাবৃন্দ –
আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করছি আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ।
প্রিয় সুধী । আপনারা অবগত আছেন,
২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে শুরু হয়েছিল মাতৃভূমিকে সত্যিকারভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার সশস্ত্র সংগ্রাম । দীর্ঘ নয় মাসের মরণপণ লড়াইয়ের পর ঐ বছরই ১৬ ডিসেম্বর এ জাতীয় অর্জন করেছিল বহু প্রত্যাশিত বিজয় । তাই জাতির ইতিহাসে ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস হিসেবে বিশেষ মর্যাদায় সমুজ্জ্বল । এমন একটি মহান দিনে শহীদ স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করার জন্য উদ্যোক্তাগণকে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ ।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য
মূলত স্বাধীনতা আল্লাহর বড় নেয়ামত ও পরাধীনতা আল্লাহর লানত । স্বাধীনতা অর্জনে বিমুখতা ও কাপুরুষতা আল্লাহর গজবের মধ্যে গণ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ । স্বাধীনতার নেয়ামত হাসিল করতে হলে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয় । জানমালের কুরবানি দিতে হয় । আর হ্যাঁ এটা বাঙালি জাতি ভালো করে বুঝে ছিল । তাইতো বৃদ্ধ ,যুবক,কিশোর দলে দলে নিজের জীবনকে বাজি রেখে একাত্তরের বর্গীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল । রক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে
পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর ভয়াল থাবা থেকে এদেশ ও মাটিকে রক্ষা করেছিল ।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য ভিডিও
ইতিহাসের পাতায় লেখা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙ্গালীদের জীবনের একটি স্মরণীয় এবং কাল রাত ছিল । ওরা এই রাতেই নিরস্ত্র হাজার হাজার বাঙালীকে নির্মমভাবে শহীদ করেছিল । আমি জোর গলায় বলবো তারা এ রাতে বাঙ্গালীদের শুধু শহীদ করেনি বরং তারা নিজেদের পরাজয়ের এলান দিয়েছিল ।
আমি আরো একটু পিছন থেকে বলতে চাই ।
ইতিহাসের পাতাগুলো প্রমাণ করেছে ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশদের টানা দুশো বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতা সোনার হরিণ হাতের নাগালে আসার সময় যখন ঘনিয়ে এলো ঠিক তখনই সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল । মুসলমানরা চাইল জাতিগত ভিন্ন আবাসভূমি । আর হিন্দুরা চায় তাদের নিজস্ব স্বাধীন এলাকা । এভাবে ভারত বর্ষ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল । এক অংশের নাম হলো পাকিস্তান অপর অংশের নাম হল হিন্দুস্তান । এভাবে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হল ।
পাকিস্তান স্বাধীন হলো ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট আর হিন্দুস্তান স্বাধীন হলো ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট । পাকিস্তান গঠিত হয় পাঁচটি প্রদেশ নিয়ে আর হিন্দুস্তান গঠিত হয় ২৫ টি প্রদেশ নিয়ে । হিন্দুস্তানের প্রদেশগুলো ভৌগলিক দিক থেকে একটা অন্যটির সঙ্গে সংযুক্ত ও মিলিত ছিল । কিন্তু পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশের মধ্যে চারটি মৌলিকভাবে সংলগ্ন থাকলেও পঞ্চম প্রদেশ অর্থাৎ আমাদের এই বাংলাদেশ পাকিস্তানের মূল ভূখন্ড থেকে দেড় হাজার মাইল দূরত্বে ছিল । এটাই মূল সমস্যা ছিল না । পাকিস্তানি নেতারা জনগণের সঙ্গে ওয়াদা করেছিলো স্বাধীন পাকিস্তানের আইন রচনা করা হবে কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক । পূর্ব-পশ্চিমের জনগণের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকবে না । কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল উল্টো চিত্র ।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য
আপনারা জানেন ,
তারা জুলুম নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছিল বাঙ্গালীদের উপর । যার সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি এরকম –
১. পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা বাংলার পরিবর্তে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ।
আপনারা পড়ছেন – স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য
২. পূর্ব পাকিস্তান জনবহুল ও সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে ছিল । ফলে আঞ্চলিক শোষণ ও জুলুমের শিকার হলো বাঙালী জাতি ।
৩. সরকারি অফিস-আদালতে চাকরির ক্ষেত্রে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের ।
৪. উন্নয়ন অবকাঠামোতে কল-কারখানা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট বিনির্মাণে বৈষম্যমূলক নীতি অবলম্বন করেছিল ।
৫. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ভাবে বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দেয়া ।
৬. মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক এদেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড লিপ্ত হয়েছিল ।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এতসব উপনিবেশিক মনোভাব, শোষণ-বৈষম্য, জুলুম-অত্যাচারের কারণেই সেদিন স্বাধীনতা প্রিয় বাঙালী জাতি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল । মুক্তির লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না । তাই বাংলার বীর সন্তানেরা স্বাধীনতা অর্জন অথবা শহীদ হওয়ার মহত্তম প্রেরণায় অস্ত্র হাতে নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল মুক্তিসংগ্রামে । দীর্ঘ নয় মরণপণ লড়াই করে অনেক রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে বিজয় । সূচিত হয় ঐতিহাসিক বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর ।
২৬ শে মার্চ আজকের এই মহান স্বাধীনতা দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমি সকল শহীদ ভাই বোনদেরকে। এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি আল্লাহ তাআলার কাছে ।
পরিশেষে আমি বলতে চাই ,
আমার দেশের স্বাধীনতা যদি বাধাগ্রস্ত হয় , আমার দেশের সার্বভৌমত্ব যদি ভূলুণ্ঠিত হয়, আমার দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের দীন ও ধর্মের উপর যদি আগ্রাসন চালানো হয় , দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল ছিন্ন ভিন্ন করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনব ইনশাআল্লাহ ।
আপনাদেরকেও দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো সতর্ক থাকার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করছি । আসসালামু আলাইকুম ওরাহমাতুল্লাহ ।
শেষকথাঃ
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য
প্রিয় পাঠক । এভাবে বক্তব্যকে আরো গুছিয়ে বার বার প্র্যাকটিস করবেন। তারপর সময় অনুযায়ী আপনার বক্তব্যকে দীর্ঘ এবং আরো শর্ট করবেন । আপনাদের আরও যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট করুন । খুব দ্রুত উত্তর দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ । আজ এ পর্যন্তই । আল্লাহ হাফেজ ।
লিখনে: শরিফ আহমাদ
ঢাকা, বাংলাদেশ ।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য,স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য, স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য,স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য।