ইসলাম

রোজার মাসআলা মাসায়েল ‌‌মাওলানা শরিফ আহমাদ

রোজার মাসআলা মাসায়েল

 

 

প্রিয় দীনি ভাই-বন্ধুরা । রোজার মাসআলা মাসায়েল শিরোনামে সার্চ করে আপনারা সঠিক স্থানে এসেছেন ।

আজ আমি আপনাদের রোজার আধুনিক মাসআলা মাসায়েলসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো । নিজেদের জানার জন্য , আমল করার জন্য এবং অপরকে পৌঁছানোর নিয়তে পড়তে থাকুন ।

 

 

সূচিপত্র

রমজান মাসের সম্মান রক্ষার মাসায়েল

 

 

১. রমজান মাসে দিনের বেলায় লোকদের পানাহারের উদ্দেশ্যে হোটেল-রেস্তোরাঁ প্রভৃতি খাবার দোকান খোলা রাখা রমজানের অবমাননা বিধায় তা পাপ । অন্য ধর্মালম্বী বা মাজুর ব্যক্তিদের খাতিরে খোলা রাখার অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয় । ( ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া ‌)

২. কোনো কারণবশত রোজা ভেঙ্গে গেলেও বাকি দিন টুকু পানাহার পরিত্যাগ করে রোজাদারের ন্যায় থাকা জরুরি ।

 

৩. দুর্ভাগ্যবশত কেউ যদি রোজা না রাখলে তবু অন্যের সামনে পানাহার করা বা প্রকাশ করা, যে আমি রোযা রাখিনি- এতে দ্বিগুণ পাপ হয় । প্রথম হল রোজা না রাখার পাপ । দ্বিতীয় গোনাহ হলো প্রকাশ করার পাপ ।

( আহকামে জিন্দেগী )

 

 

রোজার কাজার মাসায়েল

 

১. রমজানের রোজা কাজা হয়ে গেলে রমজানের পর যথাশীঘ্র কাজা করে নিতে হবে । বিনা কারণে কাজা রোজা রাখতে দেরি করা গোনাহ ।

কাজা রোজার মাসআলা মাসায়েল

২. কাজা রোজার জন্য সুবহে সাদেকের পূর্বের নিয়ত করতে হবে । অন্যথায় কাজা রোজা সহীহ হবে না । সুবহে সাদেকের পর নিয়ত করলে সে রোজা নফল হয়ে যাবে ।

 

 

৩. ঘটনাক্রমে একাধিক রমজানের কাজা রোজা একত্র হয়ে গেলে নির্দিষ্ট করে নিয়ত করতে হবে যে আজ অমুক বছরের রমজানের রোজা আদায় করছি ।

৪. যে কয়টি রোজা কাজা হয়েছে তা একাধারে রাখা মুস্তাহাব । বিভিন্ন সময়ে রাখাও দুরস্ত আছে।

 

৫. কাজা শেষ করার পূর্বেই নতুন রমজান এসে গেলে তখন ওই রমজানের রোজা রাখতে হবে । কাযা পরে আদায় করে নিতে হবে । ( আহকামে জিন্দেগী )

 

রোজার কাফফারার মাসায়েল

 

১. একটি রোজার কাফফারা ৬০ টি রোজা । এই ৬০ টি রোজা একাধারে রাখতে হবে । মাঝখানে ছুটে গেলে আবার পুনরায় পূর্ণ ৬০টি রোজা একাধারে রাখতে হবে । এই ৬০ দিনের মধ্যে নেফাস বা রমজানের মাস এসে যাওয়ার কারণে বিরতী হলেও কাফফারা আদায় হবে না ।

 

২. কাফফারার রোজা এমন দিন থেকে শুরু করবে যেন মাঝখানে কোন নিষিদ্ধ দিন এসে না যায় । যেমন বছরে পাঁচ দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ বা হারাম । সেই পাঁচ দিন হল- ঈদুল ফিতরের দিন ,ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল আযহার পরের তিনদিন।

 

৩. কাফফারার রোজা রাখার মধ্যে হায়েজের দিন এসে গেলে যে কয়দিন হায়েজের কারণে বিরতী হবে তাতে অসুবিধে নেই ।

আপনারা পড়ছেন – রোজার মাসআলা মাসায়েল

৪. কাজা রোজার ন্যায় কাফফারার রোজার নিয়তও সুবহে সাদেকের পূর্বে হওয়া জরুরী ।

 

 

৫. কাফফারা বাবদ বিরতিহীনভাবে ৬০টি রোজা রাখার সামর্থ্য না থাকলে পুরো খোরাক খেতে পারে এমন ৬০জন মিসকীনকে অথবা একজনকে ৬০দিন দুবেলা পরিতৃপ্তির সাথে খাওয়াতে হবে অথবা সদকায়ে ফিতর যে পরিমাণ গম বা তার মূল্য দেওয়া হয় প্রত্যেককে সে পরিমান মূল্য দিতে হবে ।

 

৬. ৬০ দিন খাওয়ানোর বা মূল্য দেওয়ার মাঝে ২/১ দিন বিরতি গেলে ক্ষতি নেই ।

 

 

রোজার ফিদিয়ার মাসায়েল

 

১. ফেদিয়া অর্থ ক্ষতিপূরণ । রোজা রাখতে না পারলে বা কাযা আদায় করতে না পারলে যে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় তাকে ফেদিয়া বলে । প্রতিটা রোজার পরিবর্তে সদকায়ে ফিতরের পরিমাণ পণ্য বা তার মূল্য দান করাই হলো এক রোজার ফেদিয়া ।

 

রোজার ফিদিয়া আদায়ের মাসআলা

২. যার জিম্মায় কাজা রোজা রয়ে গেছে জীবদ্দশায় আদায় হয়নি ,মৃত্যুর পর তার ওয়ারিশগণ তার রোজার ফিদিয়া আদায় করবে । মৃত ব্যক্তি ওসিয়ত করে গিয়ে থাকলে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে নিয়ম অনুযায়ী এই ফেদিয়া আদায় করতে হবে । আর ওসিয়ত না করে থাকলেও যদি ওয়ারিশগণ নিজেদের মাল থেকে ফেদিয়া আদায় করে দেয় তবুও আশা করা যায় আল্লাহ তা’আলা কবুল করবেন এবং মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিবেন ।

 

 

৩. অতি বৃদ্ধ-বৃদ্ধা রোজা রাখতে না পারলে অথবা কোনো ধ্বংসকারী বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ হলে এবং সুস্থ হওয়ার কোনো আশা না থাকলে আর রোজা রাখায় ক্ষতি হওয়ার ভয় থাকলে এমন লোকের জন্য প্রত্যেক রোজার পরিবর্তে ফেদিয়া আদায় করার অনুমতি আছে । তবে এরূপ বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কখনো রোজা রাখার শক্তি ফিরিয়ে পেলে তাদেরকে কাযা করতে হবে এবং ফেদিয়া বাবদ যে দান করেছিল তার সওয়াব পৃথকভাবে সে পাবে ।

 

প্রিয় দীনি ভাই বন্ধুরা । এবার আপনাদের জানাবো রোজা সংক্রান্ত আধুনিক কিছু মাসআলা মাসায়েল । ক্রমিক নম্বর দিয়ে উল্লেখ করছি । প্রয়োজনে নোট করতে পারেন ।‌

 

রোজার আধুনিক মাসায়েল

 

মস্তিষ্ক অপারেশন

 

 

রোজা অবস্থায় মস্তিষ্ক অপারেশন করলে রোজা ভঙ্গ হবে না । যদিও মস্তিষ্কে কোন তরল কিংবা শক্ত ওষুধ ব্যবহার করা হয় । কেননা মস্তিষ্ক থেকে গলা পর্যন্ত সরাসরি কোন ছিদ্রপথ নেই । তাই মস্তিষ্কে কোন কিছু দিলে তা গলায় পৌঁছে না ।‌ পূর্ব যুগে ছিদ্রপথ আছে ধারণা করে এতে রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা বিভিন্ন কিতাবাদিতে উল্লেখ রয়েছে ।

 

রোজা রেখে কানে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার

 

কানের ড্রপ , ওষুধ , তেল ও পানি ইত্যাদি দিলে রোজা ভঙ্গ হবে না । কারণ কান‌ থেকে গলা পর্যন্ত কোনো রাস্তা নেই । তাই কানে কিছু দিলে তা গলায় পৌছে না । আদিযুগে ছিদ্রপথ আছে বলে ধারণা করা হতো বিধায় সে যুগের কিতাবাদিতে রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে ।

 

রোজা রেঅে চোখে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার

 

চোখের ড্রপ ,সুরমা ও মলম ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না । যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় উপলব্ধ হয় ।‌ কারণ চোখে কিছু দিলে রোজা না ভাঙ্গার কথা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত ‌।

 

রোজা রেখে নাকে ওষুধ বা ড্রপ ব্যবহার

 

নাকের ড্রপ ,পানি ইত্যাদি দিয়ে ভেতরে টেনে নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে । কারণ নাক রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা । নাকে ড্রপ ইত্যাদি দিলে তা গলা পর্যন্ত পৌঁছে যায় ।

 

রোজা অক্সিজেন ব্যবহার

 

নাকে অক্সিজেন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না । কারণ অক্সিজেন দেহবিশিষ্ট কোন বস্তু নয় । রোজা ভঙ্গ হতে হলে দেহবিশিষ্ট কোন বস্তু দেহের অভ্যন্তরের গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছাতে হয় ।

 

রোজা রেখে মুখে ওষুধ ব্যবহার

 

মুখে কোন ওষুধ ব্যবহার করে তা গিলে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে । তাই তা যত অল্প হোক ।

 

রোজা রেখে এন্ডোস্কোপি ‌

 

এন্ডোস কপি করলে রোজা ভঙ্গ হবে না । চিকন একটি পাইপ মুখ দিয়ে ঢুকিয়ে পাকস্থলীতে পৌঁছানো হয় । পাইপটির মাথায় বাল্ব জাতীয় একটি বস্তু থাকে । তার অপর প্রান্তে থাকা মনিটর এর মাধ্যমে রোগীর অবস্থা নির্ণয় করা হয় । একে এন্ডোস্কোপি বলে । সাধারণত এন্ডোসকপি তে নল বা বাল্বের সাথে কোন ওষুধ লাগানো থাকে না । তাই এন্ডোস্কোপির কারণে রোজা ভঙ্গ হবে না । নল বা বাল্বে কোন মেডিসিন লাগানো থাকলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে । তেমনি ভাবে টেস্টের প্রয়োজনে কখনো পাইপের ভেতর দিয়ে পানি ছিটানো হয় । এমন করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে ।

 

রোজার মাসআলা মাসায়েল

 

রোজা রেখে রক্ত দেয়া ও নেয়া

 

রক্ত দিলে অথবা নিলে কোন অবস্থাতে রোজা ভঙ্গ হবে না । কারণ রক্ত দিলে তো কোন বস্তু পেটের অভ্যন্তরে ঢুকে না । তাই এতে রোজা ভঙ্গ হওয়ার প্রশ্নই আসে না। আর রক্ত নিলে যদিও তা দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে কিন্তু তা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি জায়গায় প্রবেশ করে না । তেমনি ভাবে গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে ও ভিতরে প্রবেশ করে না বিধায় এতে রোজা ভঙ্গ হবে না ।

 

এনজিওগ্রাম

 

এনজিওগ্রাম করলে রোজা ভঙ্গ হবে না । হার্টের রক্তনালী ব্লক হয়ে গেলে উরুর গোড়ার দিকে কেটে একটি বিশেষ ধমনীর ভেতর দিয়ে (যা হাট পর্যন্ত পৌঁছে) ক্যাথেটার ঢুকিয়ে পরীক্ষা করাকে এনজিওগ্রাম বলে ।

উক্ত ক্যাথেটারে কোন মেডিসিন লাগানো থাকলেও যেহেতু ক্যাথেটার টি রোজা ভঙ্গের কোনো গ্রহণযোগ্য খালি জায়গায় ঢুকে না এবং গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে ও ঢুকে না তাই এতে রোজা ভঙ্গ হবে না ।

 

রোজা রেখে ইনজেকশন নেওয়া যাবে কি? 

 

ইনজেকশন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না ।‌ চাই তা গোস্তে নেয়া হোক কিংবা রগে । কারণ যে রাস্তায় ইনজেকশন দেহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ওই রাস্তা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য ছিদ্র ও রাস্তা নয় ।

রোজা রেখে স্যালাইন দেওয়াঃ

 

স্যালাইন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না । কারণ স্যালাইন নেয়া হয় রগে । আর রগ রোজা ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য ছিদ্র ও রাস্তা নয় । তবে রোজার দুর্বলতা দূর করার লক্ষ্যে স্যালাইন নেওয়া মাকরুহ।

 

রোজা অবস্থায় ইনসুলিন

 

ইনসুলিন নিলে রোজা ভঙ্গ হবে না । কারণ ইনসুলিন রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য খালি জায়গাতেও পৌঁছে না ।

 

পেশাবের রাস্তায় ঔষধ ব্যাবহার

 

পেশাবের রাস্তায় ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না । কারণ পেশাবের রাস্তা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয় ।‌ তেমনি ভাবে পেশাবের রাস্তা দিয়ে কোন বস্তু ভেতরে প্রবেশ করলে তা মূত্রথলিতে পৌঁছে মাত্র । আর মূত্রথলি রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি জায়গা নয় ।‌

 

রোজা রেখে যোনিদ্বারে ওষুধ ব্যবহার

 

যোনিদ্বারে ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা ভঙ্গ হবে না । কারণ যোনিদ্বার রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয় ।‌ তেমনি ভাবে যোনিদ্বার দিয়ে কোন বস্তু ভেতরে প্রবেশ করলে তা এমন কোন খালি জায়গায় ঢুকে না । যেখানে ঢুকলে রোজা ভঙ্গ হয় । বরং জরায়ু তথা গর্ভাশয়ে ঢুকে আর গর্ভাশয় রোজা ভঙ্গের গ্রহণযোগ্য খালি জায়গা নয় ।

 

রোজা রেখে গর্ভপাত, এম আর

 

এম আর ( M.R) করলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যায় । এম আর হলো মাসিক নিয়মিতকরণ ।

গর্ভধারণের ৫ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে এম আর সিরিঞ্জ ঢুকিয়ে জীবিত কিংবা মৃত ভ্রুণ বের করে নিয়ে আসা কে এম আর বলে । গর্ভধারণের কারণে ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায় । এম আর এর কারণে ঋতুস্রাব নিয়মিত হয়ে যায় বিধায় এ পদ্ধতিকে সংক্ষেপে এম আর বলে ।

উল্লেখ্য যে যদিও এম আর ডাক্তারদের পরিভাষায় গর্ভপাত কিন্তু শরীয়তের দৃষ্টিতে এম আর গর্ভপাতের হুকুমে নয় । কেননা এম আর আট সপ্তাহের ভেতরে হয়

 

আর এ সময়ে সাধারণত বাচ্চার কোন অঙ্গ, নখ, চুল ইত্যাদি প্রকাশ পায় না । আর কোন অঙ্গ প্রকাশ পাওয়ার পূর্বে ভ্রূণ বেরিয়ে আসলে একে গর্ভপাত বলা হয় না এবং এরপর যে স্রাব হয় একে নিফাসও বলা হয় না । তথাপিও এম আর করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে । কেননা এম আর এর কারণে যে রক্ত বের হয় একে মাসিক ধরা হবে । অতএব স্রাব শুরু হওয়ার কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে । যদি কোন মহিলার ইফতারের আগ মুহূর্তে এম আর শুরু করা হয় ও ইফতারের সময় হওয়ার পর স্রাব হতে শুরু হয় তাহলে তার ওই দিনের রোজা হয়ে যাবে ।

 

পড়ুন – রমজানের সময়সূচি সেহরি ও ইফতারের দোয়া 

 

তবে কখনো ৪২ দিন মতান্তরে ৫২ দিনে ও কোন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রকাশ হয়ে যায় যদি কারো ক্ষেত্রে এমন দেখা দেয় তাহলে তা গর্ভপাত হিসেবে ধর্তব্য হবে । তখন এক্ষেত্রে গর্ভপাতের কারণে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং পরবর্তী স্রাব নিফাস হিসেবে গণ্য হবে ।

 

 

 

কপার -টি

 

 

কপার-টি করলে রোজা ভাঙবে না । কপাটি বলা হয় যোনিদ্বারে প্লাস্টিক ফিট করা ।‌ যাতে সহবাসের সময় বীর্য জরায়ুতে পৌঁছাতে না পারে । এমন করলে রোজা ভাঙবে না । কারণ যোনিদ্বার রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা নয় । তবে কপার-টি লাগিয়ে সহবাস করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা ও কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে ।

 

রোজা রেখে সাপজিটরি- ভোল্টালিন

 

সাপজিটরি- ভোল্টারিন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে । অতিরিক্ত জ্বর কিংবা খুব বেশি ব্যথা দেখা দিলে ওষুধ টি মলদ্বারে ব্যবহার করা হয় । এতে রোজা ভেঙ্গে যাবে । কারণ , যে সমস্ত রাস্তা দিয়ে দেহের অভ্যন্তরে কোন কিছু প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যায় মলদ্বার তার একটি ।

 

 

রোজা রেখে  ডুশ ব্যাবহার

 

ডুশ নিলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে । কারণ ডুশ মলদ্বারের মাধ্যমে দেহের ভেতরে প্রবেশ করে । মলদ্বার রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা এবং ডুশ যে জায়গায় প্রবেশ করে ঐ জায়গায়ও রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালিস্থান ।

 

রোজা রেখে এন্ডোস্কোপি

 

এন্ডোস কপি করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে । পাইলস, ফিশার, ফিস্টুলা ,অর্শ বুটি ও হারিশ ইত্যাদি রোগের পরীক্ষা কে এন্ডোস্কোপি বলে ।‌

মলদ্বার দিয়ে নল ডুকিয়ে এ পরীক্ষাটি করা হয় । যদিও নলটি পুরোপুরি ভেতরে ঢুকে না একাংশ বাইরে থাকে । কিন্তু যাতে রোগী ব্যথা না পায় সেজন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় পিচ্ছিল কোন বস্তু ব্যবহার করা হয় । ডাক্তারদের মতানুসারে যদি ওই পিচ্চির বস্তুটি নলের সাথে চিমটে থাকে এবং নলের সাথেই বেরিয়ে আসে ।

 

ভেতরে লেগে থাকে না । আর থাকলেও তা পরবর্তীতে বেরিয়ে চলে আসে । শরীর তা চোষে না । তথাপিও ওই বস্তুটি ভেজা হওয়ার কারনে এবং কিছু সময় ভেতরে থাকার দরুন রোজা ভেঙ্গে যাবে । আর এটার মধ্যে সতর্কতা ।

 

রোজা রেখে লাপারস্কপি- বায়োপসি

 

পেট ছিদ্র করে সিক জাতীয় একটি মেশিন ঢুকিয়ে পেটের ভেতরের কোন অংশ গোস্ত ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য বের করে আনা হয় । এতে রোজা ভঙ্গ হবে না । কারণ রোজা ভঙ্গ হওয়ার জন্য রোযা ভঙ্গকারি বস্তু ভেতরে পরিপূর্ণভাবে প্রবেশ করা ও প্রবেশের সাথে সাথে বের না হয়ে ভেতরে ততক্ষণ পর্যন্ত স্থায়ী থাকা আবশ্যক যতক্ষণ ভেতরে থাকলে ঐ বস্তু বা তার অংশবিশেষ হজম হয়ে যায় । এখানে এর কোনোটি পাওয়া যায়নি । তবে সিকের মধ্যে কোন প্রকার ওষুধ লাগানো থাকলে এবং গলদার থেকে নিয়ে মলদ্বার পর্যন্ত নাড়িভুঁড়ির যেকোনো জায়গায় পৌঁছলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে ।

 

রোজা রেখে শিরোকদার অপারেশন

 

শিরোকদার অপারেশন করলে রোজা ভাঙ্গবে না । শিরোকদার অপারেশন হলো অকাল গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুর্দিকে সেলাই করে মুখ খিঁচিয়ে রাখা হয় । এতে করে অকাল গর্ভপাত রোধ হয় । এর দ্বারা রোজা ভঙ্গ হয় না । কেননা এমন করলে কোন বস্তু রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য কোনো স্থানে পৌঁছে না ।

উল্লেখ্য যে সেলাইয়ের সময় সাধারণত কিছু রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে । এতে ও রোজা ভাঙবে না । কেননা রক্ত বের হওয়া রোজা ভঙ্গের কোন কারন নয় ।

( ইসলাম ও আধুনিক চিকিৎসা- আল্লামা মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন হাফি:)

 

শেষ কথাঃ

 

প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বন্ধুরা । জীবন ঘনিষ্ঠ যেকোন প্রশ্ন উত্তর জানতে কমেন্ট এ লিখুন । খুব দ্রুত উত্তর দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ । যেখানে থাকুন ভালো থাকুন । সুস্থ ও সুন্দর থাকুন ।আজ এ পর্যন্তই । আল্লাহ হাফেজ ।

 

লিখনে: মাওলানা শরিফ আহমাদ

ঢাকা, বাংলাদেশ ।

 

 

 

 

 

 

Related Articles