ইসলামতারাবী নামাজ কত রাকাত ?

তারাবীর নামাজ কত রাকাত ? মাওলানা শরিফ আহমাদ

তারাবীর নামাজ কত রাকাত ?

 

 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা ।‌ মাহে রমজান আসন্ন । রাখতে হবে রোজা । পড়তে হবে তারাবীহ । করতে হবে অন্যান্য ইবাদাত । ইবাদাতের এই বসন্তে প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে ।‌ নতুন করে সাজাতে হবে জীবনতরী । এই প্রত্যয় থাকতে হবে প্রত্যেকটি মুসলমানের ।

 

আচ্ছা ভূমিকা লম্বা না করে এবার আসি তারাবীর প্রসঙ্গে । রমজান মাসের স্বতন্ত্র একটি ইবাদাত হলো তারাবীহ । এই নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন বক্তব্য হয়তো শুনেছেন‌ । কেউ বলছেন তারাবীর নামাজ ৮ রাকাত । আবার কেউ কেউ বলছেন তারাবীর নামাজ  ২০ রাকাত । কোন কথাটা সহীহ ? আপনারা সাধারণ মুসলমান কোন পথে যাবেন ? এ বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার । এ লক্ষ্য নিয়েই তারাবীর নামাজ কত রাকাত শীর্ষক লেখাটি প্রস্তুত করেছি । দলীল সমৃদ্ধ পুরো লেখাটি পড়ুন । সন্দেহ-বীজ দূর হয়ে সঠিক পথ পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ ‌।

 

সূচিপত্র

তারাবীর  নামাজের পরিচয়

 

প্রথমে আপনাদের তারাবীর নামাজের একটু পরিচয় দিয়ে নিই । তারাবীহ একটি আরবী শব্দ । এটি বহুবচন । এই শব্দটির একবচন হলো তারবীহাতুন । শব্দটির অর্থ হলো‌ বসা , স্বস্তি, বিশ্রাম ও আরাম ইত্যাদি ।

ইসলামী পরিভাষায় রমজান মাসে ইশার নামাজের পর দুই রাকাত করে অতিরিক্ত যে নামাজ পড়া হয় তাকে সালাতুত তারাবীহ বা তারাবীর নামাজ বলে ।

এই নামাজ কিয়ামুল লাইল নামেও পরিচিত ।

ইশার নামাজ যতক্ষণ পড়া যায় তারাবীর নামাজ ততক্ষণ পড়া যায়‌ । তবে ইশার সাথে আদায় করা উত্তম ।

 

তারাবীর নামাজের ‌ইতিহাস

 

আচ্ছা তারাবীর নামাজ কখন থেকে শুরু হয়েছে ? সূচনা বা ইতিহাস কি ? একটু শুনুন ।

বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত আছে, যে দিন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্ব প্রথম তারাবীর নামাজ পড়লেন সেদিন কিছু সংখ্যক সাহাবায়ে কেরাম তার সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন । পরের দিন আরও বেশি লোক নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জামাতে শরীক হন ।‌ তৃতীয় দিনও প্রচুর লোক সমাগম হয় । আর চতুর্থ দিন মসজিদ লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় । সকলে বসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে জামাতে নামাজ পড়ার অপেক্ষা করতে থাকেন ।‌

 

 

কিন্তু নবী কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লাম সেদিন আর মসজিদে হাজির হলেন না । ঘরেই নামাজ পড়েন নিলেন। পরদিন ফজরের নামাজ শেষে উপস্থিত লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, গত রাতে আপনারা আমার জন্য দীর্ঘক্ষন অপেক্ষায় বসে ছিলেন ।‌ আমিও আপনাদের উপস্থিতি ও বসে থাকা সবই জানতাম তবুও আসিনি । কেননা মসজিদে আসলে আমাকে অবশ্যই তারাবীর নামাজ পড়তে হতো ।

 

এই ইবাদাত নিয়মিতভাবে করলে আমার উম্মতের উপর ফরজ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । তাই আমি এর থেকে মাঝে মধ্যে বিরত থাকি । অবশ্য সাহাবায়ে কেরাম এ নামাজ নিয়মিত পড়তেন ।

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কত রাকাত তারাবীহ পড়েছেন তা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে কোন সহীহ সূত্রে জানা যায় না ।

 

তবে খোলাফায়ে রাশেদার যুগে দ্বিতীয় খলীফা আমীরুল মুমিনীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু‌ রাষ্ট্রীয়ভাবে ২০ রাকাত তারাবীর নামাজ জামাতের সাথে পড়ার ইন্তেজাম করেন ।‌ ( সহীহ ইবনে খুযাইমা )

 

 

তারাবীর নামাজ কত রাকাত ?

 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা । নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কত রাকাত তারাবীহ নামাজ পড়েছেন সহীহ সূত্রে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না । তবে তিনি যে ২০ রাকাত পড়েছেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় । হযরত উমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তার খেলাফত আমলে মসজিদে নববীর মধ্যে তারাবীহ নামাযের অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জামাতকে একত্র করে হযরত উবাই বিন কাআব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর ইমামতীতে ২০ রাকাত তারাবীহ নামাযের হুকুম দিয়েছিলেন।

 

 

সকল সাহাবায়ে কেরাম রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু তাঁর সমর্থন করেছিলেন। তারাবীহ নামায যদি নবীজি থেকে ২০ রাকাত প্রমাণিত না হতো তাহলে সাহাবায়ে কেরাম অবশ্যই আপত্তি তুলতেন । (বাইহাকী, হাদীস নং ৪৬১৭,৪৬২০, ৪৬২১, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ৭৭৩২, বুখারী হাদীস নং ২০১০, বাদায়েউস সানায়ে-১/৬৪৪)

 

 

তাছাড়া এটা হযরত ওমর রাদিআল্লাহু চালু করা আমল মনে করে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই ‌। কেননা হাদীসে এসেছে তোমরা আমার ও খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরবে । ( আবু দাউদ )

 

 

 

২০ রাকাত তারাবীর নামাজের দলীলঃ

 

 

প্রিয় বন্ধুরা । উপরোল্লেখিত আলোচনা থেকে বুঝতে পেরেছেন তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাত । তবুও আপনাদের খটকা দূর করতে নিম্নে হাদীস ও আসার থেকে ২০ টি দলীল পেশ করছি । বুঝে বুঝে পড়ুন ‌। প্রয়োজনে নোট করুন ।

 

১ নং দলীলঃ ‌

 

عن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلى فى رمضان عشرين ركعة والوتر

 

অনুবাদ: হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৯৪, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১)

২০ রাকাত তারাবীর নামাজের দলীল

২ নং দলীলঃ

 

عن مالك عن يزيد بن رومان انه قال: كان الناس يقومون في رمضان عمر بن الخطاب في رمضان بثلاث و عشرين ركعة .

 

অনুবাদ: হযরত ইয়াজিদ ইবনে রূমান রহ: থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর সময় সাহাবাগণ রমজানে তারাবীর নামাজ ২০ রাকাত নামাজ এবং বিতর তিন রাকাতসহ মোট ২৩ রাকাত নামাজ আদায় করতেন ।‌ (মুয়াত্তা মালেক, হাদীস নং ৩৮০মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৩৮০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৪)

 

 

৩ নং দলীলঃ

عن ابن عباس قال: قال النبي صلى الله عليه وسلم يصلي في شهر رمضان في غير جماعة بعشرين ركعة والوتر .

تفرد به ابو شيبه ابراهيم بن عثمان العربي ألم في وهو ضعيف.

 

অনুবাদ: হযরত ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম রমজান মাসে জামাত ছাড়াই ২০ রাকাত (তারাবীহ ) ও বিতর পড়তেন । ( সুনানে কুবরা, বাইহাকী হাদীস নং ৪৬১৫ )

 

৪ নং দলীলঃ

عن السايب بن يزيد قال: كانوا يقومون على عهد عمر بن الخطاب رضي الله تعالى عنه في شهر رمضان بشرين ركعتة. قال وكانوا يقرؤون بالمين و كانوا يتوكؤن علي عصييهم في عهد عثمان بن عفان رضي الله تعالى عنه من شده القيام .

 

অনুবাদ: হযরত সায়েব বিন ইয়াযিদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ীন ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর যুগে রমজান মাসে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তেন । রাবী বলেন তারা ইমামগণ তারাবীর নামাজ পড়তেন । আর হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু

আর হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর যুগে মুসল্লীরা দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কষ্টে লাঠিতে ভর দিয়ে থাকতেন । ( সুনানে কুবরা, বাইহাকী হাদীস নং ৪৬১৭সুনানে সুগরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৮৩৩, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩)

 

 

 

৫নং দলীলঃ

حدثنا ابن نمير عن عبد الملك عن عطاء قال: ادركته الناس وهم يصلون ثلاثا وعشرين ركعة الوتر .

অনুবাদ: হযরত আতা রহ: থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন আমি লোকদেরকে তথা সাহাবাও শীর্ষস্থানীয় তাবেয়ীনকে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়তে দেখেছি ।

( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭০)

 

৬ নং দলীলঃ

ابو الخصيب قال: كان يؤمنا سويد بن غفلة في رمضان

فيصلي خمس ترويحات الاسدين ركعة.

অনুবাদ: আবুল খাসীব রহ: বর্ণনা করেন সুওয়াইদ বিন গাফালা রহ: ( যিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মুসলমান হওয়া বিখ্যাত তাবেয়ী ) রমজান মাসে আমাদেরকে নিয়ে ইমামতি করতেন । তাতে তিনি চার রাকাত পরপর পাঁচবার বিশ্রাম নিয়ে ২০ রাকাত তারাবীহ পরাতেন । উল্লেখ্য যে এটা ছিল সাহাবাদের ঘটনা । ( আসারুস সুনান, হাদীস নং ৭৮২)

 

৭ নং দলীলঃ

 

حدثنا وكيع عن نافع عن ابن عمر قال : كان ابن ابي مليكة يصلي بنا في رمضان عشرين ركعة ويقرأ بحمد الملائكه في ركعة.

অনুবাদ: হযরত নাফে বিন উমার রহ: থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন ইবনে আবী মুলাইকা রহ আমাদেরকে নিয়ে রমজানে ২০ রাকাত তারাবীহ নামাজ পড়াতেন । আর এক রাকাতে সূরা ফাতির এর মত ( বড় বড় সূরা ) দ্বারা পড়াতেন । ( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৬৫)

 

৮ নং দলীলঃ

حدثنا الفضل بن دكين عن سعيد بن عبيد عن علي بن ربيعه كان يصلي بهم في رمضان خمس ترويحات ويوتر بثلاث.

 

অনুবাদ: হযরত সাঈদ বিন উবাই রহ: থেকে বর্ণিত ।‌ আলী বিন রবীয়া রহ: তাদেরকে নিয়ে রমজান মাসে পাঁচ তারবীহা তথা ২০ রাকাত বিতরও পড়াতেন। উল্লেখ্য যে, এক তারবীহাতে চার রাকাত তারাবীহ হয় ।

( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং ৭৭৭২)

 

৯ নং দলীলঃ

عن الحسن ان عمر بن الخطاب جمع الناس على ابى بن كعب فكان يصلى بهم عشرين ركعة

 

অনুবাদ: হযরত হাসান রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত। হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু লোকদেরকে হযরত উবায় বিন কাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এর কাছে একত্র করে দিলেন। আর তিনি লোকদের বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতেন। (সুনানে আবু দাউদ-১/২০২, সিয়ারু আলামিন নুবালা-১/৪০০)

 

১০ নং দলীলঃ

 

عن ابى بن كعب ان عمر بن الخطاب امره ان يصلى باليل فى رمضان فصلى بهم عشرين ركعة

 

অনুবাদ: হযরত উবায় বিন কাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেনঃ হযরত ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আমাকে এই মর্মে আদেশ দিলেন যে, আমি যেন লোকদেরকে তারাবীহ পড়াই। তখন বিশ রাকাত পড়া হতো। (কানযুল উম্মাল-৮/২৬৪)

 

১১ নং দলীলঃ

عن ابى عبد الرحمن السلمى عن على قال دعى القراء فى رمضان فامر منهم رجلا يصلى بالناس عشرين ركعة قال وكان على يوتر بهم

 

অনুবাদ: হযরত আবু আব্দুর রহমান সুলামী বলেনঃ হযরত হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু রমজান মাসে কারীদের ডাকতেন। তারপর তাদের মাঝে একজনকে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতে হুকুম দিতেন। আর বিতিরের জামাত হযরত আলী নিজেই পড়াতেন। (বায়হাকী-৪/৪৯৬)

 

১২ নং দলীলঃ

عن ابى الحسناء ان عليا امر رجلا ان يصلى بالناس خمس ترويحات عشرين ركعة

 

হযরত আবুল হাসনা বলেনঃ হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু এক ব্যক্তিকে পাঁচ তারাবীহ এর সাথে বিশ রাকাত পড়াতে হুকুম দিয়েছেন। ( সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৪৮০৫, ৪৩৯৭, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৩৪৭৪)

 

১৩ নং দলীলঃ

عن زيد بن وهب قال كان عبد الله يصلي بنا في شهر رمضان فينصرف وعليه ليل قال الا  عمش كان يصلى عشرين ركعة ويوتر بثلث

 

অনুবাদ: হযরত জায়েদ বিন ওহাব বলেনঃ হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু আমাদের তারাবীহ পড়িয়ে ফারিগ হতেন এমতাবস্থায় যে, তখনো রাত অনেক বাকি থাকতো, ইমাম আমাশ বলেনঃ তিনি বিশ রাকাত তারাবীহ আর তিন রাকাত বিতির পড়াতেন। (কিয়ামুল লাইল-১৫৭)

 

১৪ নং দলীলঃ

 

عن عبد العزيز بن رفيع قال كان ابى بن كعب يصلى بالناس فى رمضان بالمدينة عشرين ركعة ويوتر بثلاثة

 

অনুবাদ: হযরত আব্দুল আজীজ বিন রফী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন হযরত উবায় বিন কাব রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু লোকদেরকে রমজান মাসে মদীনা মুনাওয়ারায় বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির নামায পড়াতেন। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩)

 

তারাবীর নামাজ ২০ রাকাতের দলীল

 

১৫ নং দলীলঃ

 

ابو حنيفة عن حماد عن ابراهيم ان الناس كانوا يصلون خمس ترويحات فى رمضان

 

অনুবাদ: হযরত ইমাম আবু হানীফা রহঃ, হযরত ইবরাহীম থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় লোকেরা (সাহাবী ও তাবেয়ীগণ) রমজান মাসে পাঁচ তারবীহার সাথে বিশ রাকাত তারাবীহ পড়তো। (কিতাবুল আসার লিআবী ইউসুফ)

 

১৬ নং দলীলঃ

 

عن ابى البخترى انه كان يصلى خمس ترويحات فى رمضان ويوتر بثلاث

 

অনুবাদ: হযরত আবুল বুখতারী রহঃ বলেনঃ তিনি রমজানে পাঁচ তারবিহায় বিশ রাকাত ও তিন রাকাত বিতির পড়তেন। ( মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৭৬৮৬)

 

১৭ নং দলীলঃ

 

عن سعيد بن ابى عبيد ان على بن ربيعة كان يصلى بهم فى رمضان خمس ترويحات ويوتر بثلاث

 

হযরত সাঈদ বিন আবু উবায়েদ থেকে বর্ণিত। হযরত আলী বিন রাবীয়া পাঁচ তারবিহা তথা বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির জামাতের সাথে পড়তেন। ( মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা-২/৩৯৩)

 

১৮ নং দলীলঃ

 

ইমাম তিরমিজি রহ: বলেন আর ( উম্মাহর) অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম ওমর রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু, আলী রাদিআল্লাহু আনহু ও অন্যান্য সাহাবীগণ থেকে বর্ণিত ২০ রাকাত তারাবির মত গ্রহণ করেছেন । আর এটাই সুফিয়ান সাওরী রহ: ইবনে মুবারক রহ: ও ইমাম শাফেয়ী রহ: এর মত ।

 

১৯ নং দলীলঃ

 

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আমল দ্বারা ২০ রাকাত তারাবীহ নামায প্রমাণিত। (আল মুসান্নাফ হাদীস নং ৭৬৯১, এছাড়া হাদীসের প্রসিদ্ধ কিতাব বাইহাকী হাদীস নং ৪৬১৫, ৪৬১৭, তাবারানী ,হাদীস নং ৭৭৩৩,)

 

২০ নং দলীলঃ

তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান গনী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু চতুর্থ খলীফা হযরত আলী রাদিআল্লাহু তাআলা আনহুসহ সাহাবায়ে কিরামের ঐক্যমতে, উম্মাতে মুসলিমার প্রায় পনেরো শত বছর পর্যন্ত ধারাবাহিক আমল তারাবীহ নামায বিশ রাকাত চলে আসছে। যা আজ পর্যন্ত বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে চালু আছে। (বাইহাকী কুবরা, হাদীস নং ৪৬১৭, )

 

 

৮ রাকাত তারাবীর নামাজের  ইতিহাস

 

 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা । দীর্ঘ সময় নিয়ে আপনারা ২০ রাকাত তারাবীর দলীলগুলো দেখেছেন । আরো অনেক বর্ণনা আছে সেগুলো কে এড়িয়ে গেলাম । কেননা আলোচনা লম্বা করতে চাইনা ।‌ এবার আপনাদের সংক্ষেপে জানাবো আট রাকাত তারাবীর ইতিহাস ।

ধৈর্য সহকারে পড়ুন । উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ ।

 

৮ রাকাত‌ তারাবীর স্লোগান তোলা ভাইয়েরা প্রথম প্রথম ২০ রাকাত তারাবীহ পড়ে গেছেন । সর্বপ্রথম ১২৮৪ হিজরী সালে ভারতের আকবরাবাদ থেকে এদের একজন ৮ রাকাত তারাবীর ফতোয়া দেন । তীব্র প্রতিবাদের মুখে সেই ফতোয়া টিকতে পারেনি । এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে মাওলানা মোহাম্মদ হুসাইন বাটালভী নামে এদের আরেকজন ফতোয়া দেন ৮ রাকাত তারাবীহ পড়া সুন্নাত । বিশ রাকাত পড়া বিদআত । বলা হয় পাঞ্জাবের অনেক স্থানে তার মাধ্যমেই ৮ রাকাত তারাবীর প্রথম প্রচলন শুরু হয় । তার ফতোয়ার তীব্র বিরোধিতা হয় । এমনকি তাদেরই একজন বিখ্যাত আলেম মাওলানা গোলাম রসূল ঐ ফতোয়ার খণ্ডনে রিসালা তারাবী নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন । ১২৯১ সালে সেটি প্রকাশিত হয় । ( সূত্র রাসায়েলে আহলে হাদীস, খণ্ড নং ২ পৃষ্ঠা নং ২৮)

 

৮ রাকাত তারাবীর নামাজ

হাফেজ আব্দুল্লাহ গাজীপুরী ও মাওলানা আব্দুর রহমান মোবারকপুরী সহ এদের আরো কিছু আলেম ও একই ফতুয়া প্রচার করতে থাকেন ।

 

 

ভারতবর্ষের পরে সৌদি আরবেও দু একজন ৮ রাকাতের পক্ষে ফতোয়া দিতে শুরু করেন । হারামাইন শরীফাইন ও মসজিদে নববীতে ২০ রাকাত তারাবীহ অব্যাহত থাকলেও আরবে সর্বপ্রথম শাইখ নসীব রেফায়ী একটি পুস্তিকা লিখে আট রাকাতের ফতোয়াকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন ‌। শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী ও তার সমর্থন করেন । তাদের বক্তব্য খন্ডনে আরব জাহানের কয়েকজন আলেম কলম ধরেন এবং সম্মিলিত রচনা প্রকাশ করেন । শাইখ নাসিরুদ্দীন আলবানী সেই সম্মিলিত কিতাবের খন্ডনে তাসদীদুল ইসাবাহ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করে ১৩৭৭ হিজরী সালে প্রকাশ করেন । কিন্তু উক্ত গ্রন্থেও তিনি কোন‌ সাহাবী , তাবেয়ী , তাবে-তাবেঈন গণের কোন একজনকে দেখাতে পারেননি যিনি ৮ রাকাত তারাবীর কথা বলেছেন । এমনিভাবে এমন কোন ঐতিহাসিক মসজিদ দেখাতে পারেননি যেখানে ৮ রাকাত তারাবীহ হতো ।

 

 

আলবানী সাহেবের পুস্তিকাটির যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছেন সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় দারুল‌ ইফতার সাবেক গবেষক মুহাদ্দিস ইসমাইল আনসারী রহ: । তাঁর কিতাবের নাম তাসহীহু হাদীসি সালাতুত তারাবীহ ইশরীনা রাকআতান ওয়ার রাদ্দু আলাল আলবানী ফি তাযয়ীফিহী । একইভাবে সৌদি আরবের বিখ্যাত আলেম মসজিদে নববীর প্রসিদ্ধ মুদাররিস ও মদীনা শরীফে সাবেক কাজী শাইখ আতিয়্যা সালিম-আত তারাবীহ আকসারু মিন আলফি আম নামে একটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন ‌।

 

সৌদির আর একজন খ্যাতনামা আলেম বহু গ্রন্থ প্রণেতা শায়খ মোহাম্মদ আলী সাবুনী সাহেব ও এ বিষয়ে আত তারাবীহ ইশরীনা রাকআতান নামে আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন ‌। আরো অসংখ্য বিখ্যাত আলেম ওলামা

সৌদির আর একজন খ্যাতনামা আলেম বহু গ্রন্থ প্রণেতা শায়খ মোহাম্মদ আলী সাবুনী সাহেব ও এ বিষয়ে আত তারাবীহ ইশরীনা রাকআতান নামে আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন ‌। আরো অসংখ্য বিখ্যাত আলেম ওলামা আট রাকাত তারাবীর বিরুদ্ধে বই লিখেছেন ।

 

এখনো বই লিখছেন । ৮ রাকাতের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন । এখনও বলছেন । তাদের সবার উদ্দেশ্য একটাই জাতির কাছে সঠিক তথ্য গুলো পৌছে দেওয়া। আল্লাহ তাআলা সবাইকে সত্যটা বোঝার তাওফিক দান করুন । আমীন।‌

 

 

৮ রাকাত তারাবীর দলীল

 

 

যেসব দ্বীনি ভাইয়েরা ৮ রাকাত তারাবীর কথা বলে থাকেন তারা মূলত এই হাদীসটি দলীল হিসেবে পেশ করে থাকেন । এটি তাদের শক্তিশালী দলীল ।

 

 

عن أبي سلمة بن عبد الرحمن أنه أخبره : أنه سأل عائشة رضي الله عنها كيف كانت صلاة رسول الله صلى الله عليه و سلم في رمضان ؟ فقالت ما كان رسول الله صلى الله عليه و سلم يزيد في رمضان ولا في غيره على إحدى عشرة ركعة يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي أربعا فلا تسل عن حسنهن وطولهن ثم يصلي ثلاثا . قالت عائشة فقلت يارسول الله أتنام قبل أن توتر ؟ . فقال يا عائشة إن عيني تنامان ولا ينام قلبي  (صحيح البخارى- أبواب التهجد، باب قيام النبي صلى الله عليه و سلم بالليل في رمضان وغيره1/154

 

অনুবাদ: হযরত আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান রহ: থেকে বর্ণিত যে , তিনি হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা কে জিজ্ঞাসা করলেন রমজান ও অন্যান্য মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ কেমন ছিল ? তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান ও অন্যান্য মাসে ১১ রাকাতের বেশি পড়তেন না ।‌ প্রথমে চার রাকাত পড়তেন ।‌ তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘ তা নিয়ে প্রশ্ন করো না । এরপর আবার চার রাকাত পড়তেন । তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করো না । এরপর তিনি তিন রাকাত নামাজ পড়তেন । ( সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২০১৩)

 

 

৮ রাকাত তারাবীর এক্সরে রিপোর্ট

 

 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা ।

উপরোক্ত হাদীস পেশ করে তারা বলে থাকেন তারাবীহ আট রাকাত আর বিতর তিন রাকাত ।

একটু ভালো করে হাদীসটা পড়ে দেখুন । এই হাদীস থেকে তারাবীর নামাজ প্রমাণিত হয় না । বরং এটা তাহাজ্জুদ বলে প্রতীয়মান হয় । এই পয়েন্টগুলো লক্ষ্য করুন ।

১. তারাবীর নামাজ শুধু রমজান মাসে পড়া হয় ।‌ অথচ উক্ত হাদীসে সারা বছর রাতের নামাজের কথা বলা হয়েছে ।‌ যা একমাত্র তাহাজ্জুদের বেলায় প্রযোজ্য হয়। কেননা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সারাবছর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন ।

 

২. তারাবির নামাজ দুই রাকাত করে পড়া হয় অথচ উক্ত হাদীসে চার রাকাত করে পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে ।

৩. হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহার বাচনভঙ্গি থেকে বোঝা যায় । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামাজ খুব দীর্ঘায়িত হতো । অথচ তারাবীর নামাজ স্বাভাবিক নিয়মে পড়া হয় । একমাত্র তাহাজ্জুদ হলেই এরকম দীর্ঘ নামাজ হতে পারে ।

 

তারাবীর নামাজ ৮ রাকাত দলীল 

 

তারাবীর নামাজ পড়া হয় রাতের প্রথমে । অথচ এই হাদীসের ভাষ্য বোঝা যায় এটা শেষ রাতের নামাজ ছিল । যেহেতু তিনি এই ৮ রাকাত নামাজের পর আরও তিন রাকাত নামাজ পড়তেন । যা ছিল বিতরের নামাজ । আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে নবীজি বিতর নামাজ শেষ রাতে পড়তেন ।‌ আর তার পূর্বে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়তেন । বোঝা গেল আয়েশা রাদিআল্লাহু তাআলা আনহা এর উক্ত হাদীসে তাহাজ্জুদের আলোচনায় এসেছে । তারাবীর নামাজের কথা উল্লেখ নেই ।

 

 

৪. মুহাদ্দিসগণ এই হাদীসকে তারাবীর ক্ষেত্রে নয় তাহাজ্জুদের ক্ষেত্রে মনে করতেন । ইমাম মুসলিম , ইমাম আবু দাউদ , ইমাম তিরমিজি, ইমাম নাসায়ী , ইমাম মালেক , ইমাম আব্দুর রাজ্জাক, ইমাম দারেমী, ইমাম আওয়ানা ও ইমাম ইবনে খুযাইমা রহ প্রমুখ সকলেই এই হাদীসকে তাহাজ্জুত অধ্যায়ে উদ্ধৃত করেছেন । তারাবীহ অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি ।

 

বোঝা গেল ইমামদের কাছেও এটি তাহাজ্জুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য । তারাবীহের নয় ।

 

তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে ইমাম বুখারী রহ কেন এই হাদীসকে তারাবীহ অধ্যায় উল্লেখ করেছেন?

সহজ জবাব হলো হাদীস শাস্ত্রে সামান্যতম জ্ঞান রাখা ব্যক্তির জানা আছে ইমাম বুখারীর নীতি সম্পর্কে ‌। তিনি সামান্য সম্পর্কের কারণেই হাদীস পুনরুল্লেখ করেন । তিনি একথা বুঝিয়ে থাকতে পারেন যে রমজানে তারাবীহ পড়া হলেও শেষে তাহাজ্জুদ পড়ে নেওয়া উচিত । আর ইমাম বুখারী রহঃ নিজেও তারাবী পড়ে শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়তেন । (ফাতহুল বারীর মুকাদ্দামা ,পৃষ্ঠা নং ৬৪৫)

 

৫. এই হাদীস তারাবীহ সম্পর্কে হলে সাহাবায়ে কেরামের পক্ষে ২০ রাকাত পড়া আদৌসম্ভব ছিল না । নবী কারীম সাল্লাল্লাহু সাল্লামের প্রতি তার সুন্নাত ও আদর্শের প্রতি তাদের চেয়ে অধিক মহব্বত আর কারো হতে পারে না ।

 

৬. স্বয়ং হযরত আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা ও মনে করতেন না এই হাদীস তারাবী সম্পর্কে । অন্যথায় তার চোখের সামনে দীর্ঘ ৪০ বছর মসজিদে নববীতে তার হুজরার পাশে এভাবে সুন্নতের বিরোধী কাজ করা হবে তিনি প্রতিবাদ না করে চুপ করে থাকবেন এটা হতে পারে না । অতএব বোঝা গেল উক্ত হাদীস দিয়ে যারা আট রাকাত তারাবীর পক্ষে দলীল পেশ করেন তাদের দলীল সঠিক নয় ।

 

 

মাযহাবের আলোকে তারাবীহ নামাজ 

 

 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা । এবার আপনাদের দেখাবো প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ইমামের বক্তব্য ও আমল । বুঝতে পারবেন তারা কত রাকাত তারাবীহ পড়েছেন ।

 

হানাফী মাজহাব মতে তারবীর নামাজ  ।

 

হযরত হাসান ইবনে যিয়াদ বর্ণনা করেছেন, ইমাম আযম আবু হানিফা রাহ: বলেছেন তারাবীর নামাজ পড়া সুন্নত । নিজেদের মসজিদে ২০ রাকাত পড়বে । পুরুষ ইমামতি করবে । প্রতি দুরাকাতে সালাম ফিরাবে ।

 

মালেকী মাযহাব মতে তারবীর নামাজ  

 

ইমাম মালেক রহ: এর এ ব্যাপারে দুটি মতামত পাওয়া যায় । ২০ রাকাত ও ৩৬ রাকাত । মদিনা ,মিশর স্প্যানসহ বিভিন্ন শহরে তার অনুসারীরা ২০ বা ৩৬ রাকাত তারাবীহ পড়ে থাকেন ।

 

শাফেয়ী মাযহাব  মতে তারবীর নামাজ 

 

ইমাম শাফেয়ী রহঃ যেহেতু ২০ রাকাত তারাবীকে অবলম্বন করেছেন তাই তার অনুসারীরা মক্কা অন্যান্য স্থানে ২০ রাকাতের ওপর আমল করতেন । মক্কার হারাম শরীফে চালু হওয়া এ আমল আজ পর্যন্ত অব্যাহত আছে ।

 

হাম্বলী মাযহাব মতে তারাবীর নামাজ 

 

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ: ২০ রাকাত তারাবীকে সুন্নাত বলেছেন । ফলে তার অনুসারীরা বাগদাত অন্যান্য শহরে ২০ রাকাত তারাবীহ আদায় করতেন । হাম্বলী মাযহাবের সকল কিতাবে ২০ রাকাতের কথা বলা হয়েছে ।

 

 

বিখ্যাত কয়েকটি শহরের তারাবীর নামাজ 

 

এ পর্বে আপনাদের দেখাবো বিশ্বের বিখ্যাত কয়েকটি শহরে তারাবীহের নমুনা ।

 

মক্কা-মদিনার তারাবীর নামাজ কত রাকাত পড়েন ? 

 

 

সাহাবা-তাবেয়ীনের যুগে মদিনা শরীফের যেমন ২০ রাকাত তারাবীহ পড়া হত তেমনি মক্কা শরীফে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়া হতো । ( মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদিস নং ৭৭৭০)

 

কুফাবাসীর আমল ।

 

কূফাবাসীর আমল মক্কা ও মদিনাবাসী সাহাবী ও তাবেয়ীগণের আমল থেকে ব্যতিক্রম ছিল না । কূফা ছিল হযরত আলী রাদিআল্লাহু আনহু এর দারুল খেলা ফত বা রাজধানী । তিনিই তো 20 রাকাত পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন । হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু কূফায় বসবাস করতেন । তিনিও ২০ রাকাত পড়তেন । ( কিয়ামুল লাইল, পৃষ্ঠা নং ৯১)

 

বসরা বাসীর আমল।

 

সাহাবী -তাবেয়ীগনের যুগে ইরাকের বসরা নগরী ইলম ও জ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে খুবই আগ্রহী ছিল । সেখানেও কেউ ২০ রাকাত তারাবীর কম পড়তেন না । আব্দুর রহমান ইবনে আবু বাকরা, সাঈদ ইবনে আবুল হাসান ও ইমরান অআবদী ৮৩ হিজরির আগে বসরার জামে মসজিদে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়াতেন । (কিয়ামুল লাইল, পৃষ্ঠা নং ৯২)

 

বাগদাদ বাসীর আমল।

 

ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ: ২০ রাকাত তারাবীহ সুন্নত বলার পর তাঁর অনুসারীগণ বাগদাদে ২০ রাকাত তারাবীহ আদায় করতেন । তেমনি ভাবে মার্ভের অধিবাসী আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহঃ ২০ রাকাতকে অবলম্বন করেছেন ।

 

পড়ুন 

শেষ কথা:

 

প্রিয় পাঠক বন্ধুরা । তারাবীহ কত রাকাত শীর্ষক আলোচনায় আপনাদের প্রথমে তারাবীর পরিচয়, নামাজের ওয়াক্ত , তারাবীর ইতিহাস ,২০ রাকাতের দলীল , ৮ রাকাতের পর্যালোচনা এবং মাযহাব ও বিভিন্ন শহরের আমল দেখিয়েছি।‌

 

আশা করি এবার আপনারা বুঝতে পেরেছেন তারাবীর নামাজ কত রাকাত ।‌ তবুও কারো কোন বিষয়ে জানতে ইচ্ছে হলে কমেন্ট করুন । দলীল ভিত্তিক দেবো ইনশাআল্লাহ। আজ এখানেই রাখছি । কথা হবে পরবরর্তীতে কোন টপিকে । সবাই ভাল থাকুন। সুস্থ ও সুন্দর থাকুন। শীর্ষবার্তার সঙ্গে থাকুন। আল্লাহ হাফেজ ।

 

লিখনে: মাওলানা শরিফ আহমাদ

ঢাকা, বাংলাদেশ ।

 

 

 

 

Related Articles