ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে কবিতা । ঈদে মিলাদুন্নবীর উক্তি । ঈদে মিলাদুন্নবী ফেসবুক স্ট্যাটাস ।
ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে কবিতা । ঈদে মিলাদুন্নবীর উক্তি । ঈদে মিলাদুন্নবী ফেসবুক স্ট্যাটাস ।
সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ ! কালের চাকা ঘরে আবারো এলো রবিউল আউয়াল মাস। রবিউল আউয়াল মাস হল আরবী ১২ মাসের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস । মাস হিসাবে এর অবস্থান তৃতীয় । রবিউল আউয়াল মাস এলেই দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত হয় মিলাদুন্নবী, সিরাতুন্নবী ইত্যাদি বিষয়ক বিভিন্ন আয়োজন । দিনটিকে উদযাপনের লক্ষ্যে সরকারিভাবে ও ছুটি ঘোষণা করা হয় । এবং ইতোমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক নির্ধারিত দিনটি উল্লেখ করা হয়েছে । আর সেই দিনটি হলো আগামী ৯ অক্টোবর রবিবার ।
সূচিপত্র
ঈদে মিলাদুন্নবি পালন করা কি জায়েজ?
রবিউল আউয়াল মাসের ৮ তারিখ, ৯ তারিখ অথবা ১২ তারিখে পৃথিবীতে আগমন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম । একই মাসে তার আগমন এবং চলে যাওয়া । মহান নবীর জন্ম নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় । মুমিনদের খুশি হওয়ার অন্যতম মাধ্যম ।
কিন্তু তার চলে যাওয়া আবার কষ্টদায়ক । বেদনা বিধুর । মূলত পৃথিবীতে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমন নিঃসন্দেহে মানবতার ইতিহাসে এক মহা ঘটনা । এর চেয়ে বড় ,এর চেয়ে মহান, এর চেয়ে আনন্দের, এর চেয়ে বেশি বরকতময় এবং এর চেয়ে বেশি পবিত্র ঘটনা এ জগতে আর ঘটেনি এবং কেয়ামত পর্যন্ত ঘটবেও না । মহানবীর ছোঁয়ায় অনন্য হয়েছে এ রবিউল আউয়াল মাস । বৈশিষ্ট্যমন্ডিত হয়েছে তার জন্য ।
তাই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে আজকের এই বিশেষ আয়োজন। এবার আপনাদের জানাবো ঈদে মিলাদুন্নবী নিয়ে কবিতা । ঈদে মিলাদুন্নবীর উক্তি । ঈদে মিলাদুন্নবী ফেসবুক স্ট্যাটাস । আশা করছি আপনাদের ভালো লাগবে ।
ঈদে মিলাদুন্নবীর কবিতা
মিলাদুন্নবী
শরিফ আহমাদ
নবীজি তার জন্মদিনে
পালন করেন রোজা
কিন্তু এখন
হচ্ছেটা কি
সবার উচিত বোঝা।
ইশকে নবীর নামে
নারী পুরুষ মিছিল করে
শহর এবং গ্রামে ।
টাকা তোলে রাস্তা-ঘাটে
মসজিদে বা কোন মাঠে
নবীর জন্ম উপলক্ষে
বসে মিলাদ আসর,
এমন এমন হয় আয়োজন
আস্ত যেন বাসর।
ধর্মে এসব নাই-
সাহাবীদের মত সবার
জীবন গড়া চাই।
নবীর আশেক
শরিফ আহমাদ
নবীর আশেক কারা ?
তারা–
কুরআন হাদীস
মেনে চলে যারা ।
সাহাবীদের ফলো করে
সামনে ছুটে চলে
দীনের উপর আঘাত এলে
হক কথা যায় বলে ।
ধর্মে অটল থাকে
ফাঁকে–
দীনের পথে
সবাইকে রোজ ডাকে।
নবীর আশেক সেজে যারা
মানে না নিজ ধর্ম
ওরা হলো মিথ্যাবাদী
রোজ করে ভুল কর্ম।
আফসোস
শরিফ আহমাদ
নবীর জন্ম-মৃত্যু দিবস
পালন করা যায় না
খাঁটি উম্মত কোনদিনও
পালন করতে চায় না ৷
কুরআন হাদীস পড়ে তারা
দীনের বিধান মানে
গায় গুণগান সময় মতো
আল্লাহ নবীর শানে ৷
কিন্তু কিছু ফাজিল এসে
আশেক করে দাবী
চাপার জোরে ঘুরাতে চায়
উল্টো পথের চাবি ৷
রবিউল আউয়ালের মাঝে
মিছিল মিটিং করে
দরুদ পাঠের দোহাই দিয়ে
মিষ্টিতে পেট ভরে ৷
ভণ্ডদের আজ চিনে রাখুন
কেউ না হয়ে ভ্রান্ত
ওদের জন্য বড় আফসোস
আহ যদি দীন মানতো!
নবীর দেশ
শরিফ আহমাদ
হাজার মাইল পথ পেরিয়ে
চোখে পড়ে শহর
ছুটে বেড়ায় মরু-জাহাজ
মুসাফিরের বহর—
এইতো মদিনা প্রিয় নবীর দেশ
দেখার ইচ্ছা কভু হবে না শেষ ৷৷
খেজুর বাগান গ্রাম ছাড়িয়ে
চোখের নাগাল যায় হারিয়ে
যে দিকে যদ্দুর
আলোর সমুদ্দুর ৷
দূর অজানায় মিশে গেছে
মিষ্টি পানির নহর—
এইতো মদিনা প্রিয় নবীর দেশ
দেখার ইচ্ছা কভু হবে না শেষ ৷৷
নবীর রওজা সুখের আলো
দরুদ—সালাম লাগে ভালো
হঠাৎ আসে টান
পালায় অভিমান ৷
বুকের খাতায় অঙ্কিত হয়
ভালোবাসার মোহর—
এইতো মদিনা প্রিয় নবীর দেশ
দেখার ইচ্ছা কভু হবে না শেষ ৷৷
মুহাম্মাদ সা.
দীদার মাহদী
অন্ধকারে আলো নিয়ে
এলেন মুহাম্মাদ
তার ছোঁয়াতে হেসে ওঠে
ঐ আকাশের চাঁদ।
সবাইকে দেন দীনের দাওয়াত
ফোটান আলোর ফুল
সকল যুগের শ্রেষ্ঠ মানুষ
মুহাম্মাদ রাসুল।
( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)
নবী
ফারহান বিল্লাহ
চন্দ্র তারা হাসছে দেখো
তোমার জন্য আজ
তোমার আগমনের জন্য
কী অপরূপ সাজ।
নতুন সাজে হাসছে দেখো
গাছ গাছালির প্রাণ
আজ প্রকৃতির নেই যে কোন
তুচ্ছ অভিমান ।
খুশির ঢেউয়ে আত্মহারা
সৃষ্টি সকল খুব
মুগ্ধ হয়ে তোমার প্রেমে
দিলো সবাই ডুব ।
সাগর নদী পশু পাখি
হাসলো বনের ফুল
এই দুনিয়ায় এলেন হেসে
মুহাম্মদ রাসুল ।
আরবের চাঁদ
মঈন মুসতাকিম
কার ওসিলায় ফুটল ধরায়
দীন-ইসলামের ফুল
আঁধার হতে আলোর পথে
এলো মানবকূল?
হেরার আলো কে ছড়াল
কে আরবের চাঁদ?
তিনি হলেন সবার প্রিয়
রাসুল মুহাম্মাদ।
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
রবিউল আউয়াল মাসের গুরুত্ব
ঈদে মিলাদুন্নবীর উক্তি
১. আরবের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ছিলেন তা নয় বরং এযাবৎ মানব ইতিহাসের যত মানুষের জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানব একমাত্র তিনি ।
– এ জি লিওনার্দ
২. বস্তুত পক্ষে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনীত শরীয়ত সর্বলোকের জন্য প্রযোজ্য । এই শরীয়ত এমন বুদ্ধিবৃত্তিক মূলনীতি ও এ ধরনের আইনগত ভিত্তিতে রচিত যে সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না ।
– ড. গিবন
৩. চরিত্র গঠন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম যে সাফল্য লাভ করেছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মানবতার মহা দরদী বলে বিশ্বাস করতে হয় ।
– অ্যাডওয়ার্ড মুদন্ট
৪. ইসলামের সেই উম্মি নবীর ইতিবৃত্ত বড় আশ্চর্যজনক । বর্তমানে তিনি কবরের অবস্থান করেও কোটি কোটি মানুষকে ইসলামের কালেমার উপর অটল রেখেছেন ।
– ড. গেসটাউলি
৫. হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর চিন্তাধারা ছিল অতি পবিত্র এবং চরিত্র ছিল অসম্ভব উন্নত । তিনি ছিলেন কর্ম তৎপর সংস্কারক । যাকে মহান আল্লাহ মানুষকে হেদায়েতের জন্য নিযুক্ত করেছেন । তার বাণী তো আল্লাহ তাআলারই বাণী ।তিনি অক্লান্ত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সত্যের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন ।
– স কার্লাইল
৬. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানবজাতির পথ প্রদর্শক ও মুক্তিদাতা । বিশ্বের শাসন ও একনায়ত্ব যদি আজ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত কামেল পুরুষের হাতে সোপর্দ করা হয় । তবে এই পৃথিবী যাবতীয় সমস্যার সমাধান থেকে মুক্তি পেয়ে যেত । এবং গোটা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা দোলনায় পরিণত হতো ।
– জর্জ বার্নার্ড শ
ঈদে মিলাদুন্নবীর ফেসবুক স্ট্যাটাস
★ হাদীস বলে সব মুসলমান ভাই ভাই , মিলাদুন্নবী নিয়ে দ্বন্দ্ব বন্ধ হওয়া চাই ।
★ নবীর জন্মে আবু লাহাব ও খুশি হয়েছিল । অথচ সে জাহান্নামী । বোঝা গেল শুধু নবী জন্মে আনন্দ প্রকাশ করলে হবে না বরং তার সুন্নাহ চলতে হবে ।
★ নবীজির মত সুন্দর মানুষ আল্লাহ দুনিয়াতেও সৃষ্টি করেননি । আখিরাতও কেউ তার মত হবে না ।
★ নবীজিকে ভালোবাসার কথা দেয়ালে লিখে কিংবা পোশাকে লিখে গায়ে দিলে যথেষ্ট হবে না । তার ভালোবাসার প্রমাণ আমলের মাধ্যমে দিতে হবে।
★ প্রচলিত মিলাদুন্নবী নিঃসন্দেহে বেদআত। আর যারা বেদআত করে তারা জাহান্নামী ।
★ নবীর জন্মদিনে আমিও মিছিল মিটিং করবো । যদি কেউ কুরআন হাদীস থেকে প্রমাণ দেখাতে পারেন ।
★ বিশ্ব নবীর আগমনে
আমরা সবাই ধন্য
তার কারনে শ্রেষ্ঠ উম্মত
আজ হয়েছি গণ্য ।
★ নবীজিকে ভালোবাসি
সকাল দুপুর সাজে
কথা এবং কাজে ।
★ নবীজি তার জন্মদিনে রোজা রেখেছেন । অথচ বর্তমানে কথিত আশেকরা কেক কেটে হ্যাপি বার্থডে পালন করে । হায়রে অবুঝ ।
★ নবীজিকে নিজের জান,মাল এবং সন্তানাদির চেয়ে বেশি ভালবাসতে হবে । তবেই প্রকৃত ঈমানদার হওয়া সম্ভব ।
★ নবীজিকে ভালোবাসার মাপকাঠি আছে । তার বাইরে গেলে ভালবাসার দাবিদার হওয়া যাবে কিন্তু প্রকৃত ভালোবাসা যাবে না ।
গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি হাদীস
★ যে আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেনো উত্তম কথা বলে। (সহীহ বুখারী)
★ তোমার ভাইয়ের দিকে হাসি মুখে তাকানো একটি দান।(তিরমিযী)
★ যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেনা, সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞ হয়না। (আবু দাউদ)
★ যে আল্লাহকে ভয় করে, তার ধনী হওয়াতে দোষ নেই। (মিশকাত)
★ যে আল্লাহকে ভয় করে, তার জন্যে অর্থের প্রাচুর্যের চেয়ে শারীরিক সুস্থতা উত্তম। (মিশকাত)
★ সুধারণা করা একটি ইবাদত। (মুসনাদে আহমদ)
★অনুমান ও কুধারণা করা থেকে বিরত থাকো, কেননা অনুমান হলো বড় মিথ্যা কথা। (সহীহ বুখারী)
★ যুলম করা থেকে বিরত থাকা। কেননা, কিয়ামতের দিন যুলম অন্ধকারের রূপ নেবে। (সহীহ মুসলিম)
তোমাদের মধ্যে আমার নিকট সেই ব্যক্তি বেশী প্রিয় যে বেশী চরিত্রবান।” ( বোখারী)
★আল্লাহ তায়ালা তিন শ্রেণীর লোকের সাথে ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না।
(১) বয়সপ্রাপ্ত যেনাকার
(২) মিথ্যুক শাসক
(৩) অহংকারী দরিদ্র। (মুসলিম)
আল্লাহর নবী (স.) বলেছেন : ‘আশা-আকাঙ্খা আমার উম্মতের জন্য একটি রহমত স্বরূপ, যদি আশা না থাকতো তবে কোন মা তার সন্তানকে দুধ পান করাতো না এবং কোন মালিই গাছ লাগাতো না’ (তথা কোন কৃষকই চাষাবাদ করতো না)।
শেষ কথা :
সুপ্রিয় পাঠক বৃন্দ । চেষ্টা করা হয়েছে অল্প কথায় আপনাদের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো দেওয়ার জন্য । আশা করছি আপনারা ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন । আরো যদি কারো কোন বিষয় জানতে চান তাহলে কমেন্ট করুন । আমাদের নির্ধারিত লেখকগণ আপনাদের কন্টেন্ট তৈরি করে দেওয়ার জন্য সর্বদা প্রস্তুত আছেন ইনশাআল্লাহ।